Ajker Patrika

আব্বাসের ২ অবৈধ মার্কেট উচ্ছেদ হবে শিগগিরই

রাজশাহী প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২১, ১০: ৫৪
আব্বাসের ২ অবৈধ মার্কেট  উচ্ছেদ হবে  শিগগিরই

সরকারি খালের ওপর অবৈধভাবে নির্মাণ করা পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীর দুটি মার্কেট শিগগির ভাঙা হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

অবৈধ মার্কেট দুটি প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, ‘আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা গিয়ে তিন তিনবার কাজ বন্ধ করেছেন। এখনো কাজ বন্ধই আছে। ওই জায়গাটির মালিক যেহেতু জেলা প্রশাসন, আমরা মার্কেট দুটি ভেঙে ফেলব। শিগগির মার্কেট দুটি ভাঙার কাজ শুরু হবে।’

মাঝে কাটাখালী বাজার রেখে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক পার হয়ে দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে চলে গেছে একটি খাল। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) ১৭ কোটি টাকায় খালটি সংস্কার করে। এর দুই পাড় বাঁধাই করা হয়। এরপর লকডাউনের সময় মহাসড়কের দুই পাশে সরকারি খালের ওপর দুটি মার্কেট নির্মাণ করেন মেয়র আব্বাস আলী। দোতলা করে মার্কেট দুটির কাঠামো নির্মাণ হয়েছে। মহাসড়কের সেতুর দক্ষিণ পাশের মার্কেটটি ১ হাজার ১৪৪ বর্গফুটের। এখানে ২১টি দোকান করার কথা ছিল। উত্তর পাশের দোতলা মার্কেটটির দোকান ছয়টি।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, নিচতলার দোকানগুলোর কাজ প্রায় শেষ। দক্ষিণের মার্কেটটির কারণে পেছনে পড়ে গেছে ‘ছানা মার্কেট’ নামের একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন মার্কেট। মেয়রের মার্কেটের কারণে ছানা মার্কেট আড়াল হয়ে যাওয়ায় এখানকার ব্যবসায়ীরা বেকায়দায় পড়েছেন। তাঁরা দোকানপাট ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে মেডিসিন পয়েন্ট, শিহাব ফার্মেসি ও সেলিম টেলিকমের মালিক তাঁদের দোকান অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। কেউ আসে না বলে বিসমিল্লাহ লন্ড্রিও আর খোলে না। এর মালিক অন্য স্থানে দোকান খুঁজছেন।

অন্য জায়গায় দোকান খুঁজছেন ইলেকট্রনিকস হাসপাতালের মালিক ফজলুল হকও। তিনি বলেন, ‘সামনে মার্কেট করায় আমরা পেছনে পড়ে গেছি। মানুষ আসার রাস্তা নাই। তাই ব্যবসা অর্ধেকে নাইম্যা গেছে। অন্য জায়গায় দোকান পাইলেই এডা ছেড়ে দিব।’

ফজলুল হক আরও বলেন, আব্বাস আলী দ্বিতীয় দফায় মেয়র হয়েই এই মার্কেট নির্মাণ শুরু করেন। তাঁরা প্রতিবাদ করলেও লাভ হয়নি। তাঁরাও নৌকায় ভোট দিয়েছেন। এখন ‘ফল’ ভোগ করছেন।

পৌরসভার কাউন্সিলরেরা জানান, মার্কেট করার সময় ব্যবসায়ীদের মেয়র বোঝান যে, এটা পৌরসভার মার্কেট। এখানে ব্যবসায়ীদের কম ভাড়ায় দোকান বরাদ্দ দেওয়া হবে। এতে পৌরসভার কিছুটা আয়ও হবে। বাস্তবে পৌরসভায় এ ধরনের মার্কেট নির্মাণের কোনো আলোচনা হয়নি। খালের ওপর মার্কেট করার জন্য ভূমি অফিস বা বিএমডিএ থেকে অনুমতিও নেওয়া হয়নি। মেয়র লাভবান হতে ব্যক্তিগতভাবেই ওই মার্কেট দুটি নির্মাণ করেন। আটজন কাউন্সিলর জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেন। তিনি উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দিয়ে কাজ বন্ধ করান। পরে মেয়র আবার কাজ শুরু করান। এখন কাজ বন্ধ।

কাউন্সিলররা আরও জানান, উপজেলা ভূমি অফিস এই মার্কেটের বিষয়ে বিএমডিএকে একটি চিঠি দিয়েছিল। তাদের খালের ওপর মার্কেট হলেও চিঠির জবাবে রহস্যজনক কারণে বিএমডিএ ভূমি অফিসকে এটি ‘ইতিবাচক’ বলেই জানিয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত এটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিতে আসে। মন্ত্রণালয় একটি চিঠি দিয়ে জেলা প্রশাসককে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলে। সেই তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় মার্কেট দুটি ভেঙে ফেলার জন্য নির্দেশ দিয়েছে।

তবে এর আগেই কয়েকজন ব্যবসায়ীকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে দোকান বরাদ্দ দেন মেয়র। মার্কেট দুটির দোকান বরাদ্দ নিয়ে গত ১১ আগস্ট কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে বসেছিলেন মেয়র আব্বাস আলী। সেখানে তিনি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ করলে ‘পাপ হবে’ মন্তব্য করে বসেন। কটূক্তি করেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকেও। এর দুটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে। এরপর গা-ঢাকা দেন মেয়র। তাঁর বিরুদ্ধে রাজশাহীতে নানা কর্মসূচি পালিত হয়। মামলা করা হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং কাটাখালী পৌর শাখার আহ্বায়কের পদ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আর তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন পৌরসভার সব ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। পরে গত শুক্রবার অজ্ঞাত স্থান থেকে ফেসবুকে লাইভে এসে মেয়র আব্বাস একজন মুসলমান হিসেবে ম্যুরাল নিয়ে নিজের বক্তব্য স্বীকার করেন। তবে বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তি করেননি বলে দাবি করেন।

গতকাল বুধবার ভোরে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হন মেয়র আব্বাস আলী। এর আগের রাতে রাজশাহী নগরীর কাটাখালী বাজার থেকে আব্বাসের দুই চাচাতো ভাই জহুরুল ইসলাম লিটন ও মনিরুল ইসলাম রিপনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। লিটন মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে মাসিক ২০ হাজার টাকা বেতনে কাটাখালী পৌরসভায় চাকরি করতেন।

এদিকে, মেয়রের গ্রেপ্তারের খবরে কাটাখালী বাজারে গতকাল মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। আর বিকেলে মেয়রের স্থায়ী বরখাস্তের দাবিতে ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত