Ajker Patrika

সত্যজিতের শিক্ষা

সম্পাদকীয়
সত্যজিতের শিক্ষা

ববিতা তখন কাজ করছেন সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনিসংকেত’ ছবিতে। এই ছবিতে তাঁকে নিচ্ছেন সত্যজিৎ রায়, সে কথা প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেননি ববিতা। প্রথম যেদিন শুনেছিলেন, ভেবেছিলেন কেউ বুঝি তাঁর সঙ্গে রসিকতা করছে। কিন্তু একসময় তো সত্যিই কলকাতায় যেতে হলো, স্ক্রিন টেস্ট দিতে হলো এবং করতে হলো শুটিং।

যাঁরা ছবিটি দেখেছেন, তাঁদের মনে পড়ে যাবে, ‘অশনিসংকেত’ সিনেমায় একটা দৃশ্য আছে, যেখানে মেটে আলুর সন্ধানে ববিতারা তিনজন একটা জঙ্গলে গিয়েছিলেন। সেখানে শুটিং হলো। শুটিং শেষ করে সবাই ফিরে আসছেন। ওই জঙ্গলের মধ্যেই ছোট্ট একটি নালা ছিল। রাস্তার মাঝ দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল পানি। খুব বেশি গভীর না নালাটা, তবে পা ডোবানো মুশকিল।

ইউনিটের অন্যরা ছোট্ট একটা লাফ দিয়ে নালা পার হচ্ছেন। ববিতার পায়ে ছিল স্যান্ডেল। তিনি ভাবতে লাগলেন কী করে নালা পার হবেন। ততক্ষণে সবাই নালা পার হয়ে গেছেন। নালার অন্য পাড়ে শুধু ববিতাই দাঁড়িয়ে আছেন। ববিতা ছোটখাটো মানুষ। ভাবছেন, লাফ দিতে গিয়ে নালার ভেতরে পড়ে যাবেন কি না। পায়ে ছিল স্পঞ্জের স্যান্ডেল।

সেই স্যান্ডেল খুলে লাফ দিয়ে নালা পার হলেন ববিতা। কিন্তু স্যান্ডেলটা পড়ে রইল নালার অন্য পাড়ে।

এ রকম অবস্থায় কী করা যায়, সেটা আর ভেবে পান না ববিতা। হঠাৎ দেখেন, সত্যজিৎ রায় স্বয়ং এগিয়ে আসছেন। তারপর নালা পার হয়ে ববিতার স্যান্ডেল হাতে তুলে নিয়ে আসছেন। এসে সেটা তুলে দিচ্ছেন ববিতাকে। ববিতা বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেলেন এবং ববিতা বুঝলেন, এটা আসলে সত্যজিৎ রায় করেছেন অন্যদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য।

ইউনিটে পরিচালকের কত ধরনের সহকারী থাকেন, তাঁদের কাজই হচ্ছে ইউনিটের সব ব্যাপারে খেয়াল রাখা। ববিতা যে স্যান্ডেল নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন, সেটা দেখার দায়িত্বও ইউনিটের লোকদের। সেটাই নিজে স্যান্ডেল তুলে এনে অন্যদের বোঝালেন সত্যজিৎ রায়। কোনো কাজেই লজ্জা নেই, সেটাও এক শিক্ষা। 

সূত্র: সাজ্জাদ হুসাইন, বিস্ময়ে ববিতা, পৃষ্ঠা ৭৯-৮০

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত