Ajker Patrika

ওষুধ কিনতে ব্যর্থ দেশ এখন রপ্তানিকারক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ১১
ওষুধ কিনতে ব্যর্থ দেশ এখন রপ্তানিকারক

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর মুমূর্ষু বাংলাদেশে খাদ্য ও ওষুধের সংকট দেখা দেয়। বেঁচে থাকার জন্য এ দুটোই প্রয়োজন। প্রতিবেশী দেশ থেকে খাদ্যসহায়তা পাওয়া গেলেও ওষুধের সংকট রয়েই গেল। ইউরোপ, আমেরিকার বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিও ওষুধ দিতে রাজি হলো না। সাফ জানিয়ে দিল—ডলার দাও, ওষুধ নাও।

সদ্য স্বাধীন দেশে ডলারের রিজার্ভ তখন শূন্য। সেই কঠিন দুঃসময়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায় পূর্ব ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরি। সেখানকার ওষুধ সংস্থা ইগিস, গেইডেন, রিখটার কাইরন, মেডিম্পেস বাংলাদেশে ওষুধ দিতে রাজি হয়। তারা পণ্যের বিনিময়ে ওষুধ দেওয়া শুরু করে। তারপর হাঙ্গেরিতে যেতে লাগল বাংলাদেশের পাট আর অন্যান্য কাঁচা পণ্য। এর পরিবর্তে এল ওষুধ। টাকার অভাবে ওষুধ কিনতে না পারা সেই বাংলাদেশ বর্তমানে ১৫১টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বাধীনতার পর দেশের ওষুধশিল্প ছিল অবিকশিত একটি খাত। এমনকি স্থানীয় চিকিৎসকেরাও বিশ্বাস করতে চাইতেন না যে ওষুধের মতো একটি পণ্য বহুজাতিক ছাড়া স্থানীয় কোম্পানি উৎপাদন করতে পারে! আমদানিনির্ভরতা ছিল অনেক বেশি। সে সময় ওষুধের মোট চাহিদার ৭০ শতাংশই পূরণ করতে হতো আমদানির মাধ্যমে। এতে ব্যয় করতে হতো প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা।

জানা যায়, ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ বাজার আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া দখলে ছিল। ১৯৮২ সালে ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ জারি হওয়ার পর বিদেশি ওষুধ কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া বাণিজ্য থেকে দেশীয় ওষুধশিল্প মুক্তি পায় এবং আস্তে আস্তে বাজার সম্প্রসারণ শুরু করে।

২০০১ সালে বাংলাদেশে ওষুধ কারখানার সংখ্যা ছিল ১৫০টি এবং হাতে গোনা কয়েকটি দেশে ওষুধ রপ্তানি করা হতো। ২০১৪ সালে সে তালিকায় আসে ৮৭টি দেশ। রপ্তানির পরিমাণ ৩১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে প্রায় ৬০৪ কোটি টাকায় উন্নীত হয়, আর ওষুধ তৈরির কাঁচামাল রপ্তানি বাড়ে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা থেকে ১৬ কোটি ৬ লাখ টাকা।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের ৪৮টি স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যেখানে ওষুধশিল্প স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পথে রয়েছে। স্থানীয় ওষুধ কোম্পানিগুলো উচ্চ প্রযুক্তির ওষুধ তৈরিসহ স্থানীয় বাজারের ৯৮ শতাংশ চাহিদা পূরণ করছে। উচ্চ প্রযুক্তির মাত্র ২ শতাংশ ওষুধ আমদানি হচ্ছে। ওষুধশিল্পের গড় প্রবৃদ্ধি আনুমানিক ১২ শতাংশ। এ খাতে প্রত্যক্ষভাবে দুই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। পরোক্ষভাবে আরও প্রায় তিন লাখ লোক এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত।

পোশাকশিল্পের সাফল্যের পর ওষুধশিল্পকে বাংলাদেশ অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য হিসেবে দেখছে। বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাঝেও মানুষের ওষুধের পাশাপাশি কৃষি ক্ষেত্রের ওষুধ তৈরিতেও অনুরূপ সক্ষমতা অর্জন করেছে এ শিল্প।

বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান বলেন, ‘আমরা সব ধরনের ওষুধ তৈরি করতে পারি। প্রথম দিকে আমাদের কষ্ট হয়েছে। আমরা আমরা ৪৫টির মতো কোম্পানি ১৫১টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করি। এটা বিশাল সাফল্য। আগামীতে আরও ভালো করব বলেই আমার বিশ্বাস।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত