Ajker Patrika

মনে কেন এত ভয়

রানা আব্বাস, দুবাই থেকে
আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২২, ১২: ১৯
মনে কেন এত ভয়

দলকে উজ্জীবিত করতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) শীর্ষ কর্তাদের প্রায় সবাই এখন আমিরাতে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন দুবাইয়ের আরেক হোটেলে থাকলেও প্রায় প্রতিদিনই তিনি চলে এসেছেন টিম হোটেলে। একাধিক মিটিং-সিটিং করেছেন দলের সঙ্গে। কিন্তু শারজায় গতকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে এসবের প্রতিফলন খুব একটা দেখা গেল না।

বরং বাংলাদেশের ব্যাটারদের ‘অ্যাপ্রোচে’ ফুটে উঠছিল ভয় আর দ্বিধা। খেলছেন টি-টোয়েন্টি, অথচ টপ অর্ডার ব্যাটাররা শুরু করলেন ‘একটু দেখে খেলি’ মনোভাবে। প্রথম ওভারেই যেমন ফজলহক ফারুকির লোপ্পা ফুলটস মোহাম্মদ নাঈম ব্যাট চালালেন সংশয়ভরা মনে। যদিও লং অন-লং অফের মাঝ দিয়ে বাউন্ডারি পেয়েছেন, কিন্তু আফগান বোলাররা বুঝে গেছেন ব্যাটার ভেতরে ভেতরে স্বস্তিতে নেই।

সুযোগটা ভালোই কাজে লাগিয়েছে আফগানিস্তান। গত পরশু সংবাদ সম্মেলন শেষে অনুশীলনে যাওয়ার আগে রশিদ খানকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো, এই যে আফগানিস্তান ম্যাচের আগে বাংলাদেশ দলের সামনে এত ‘রশিদ-রশিদ’ প্রসঙ্গ আসে, এটা কি আফগানদের বাড়তি সুবিধা দেয়? আফগান তারকা লেগ স্পিনার শূন্যে দৃষ্টি ছুড়ে বললেন, ‘এটা তো বলতে পারব না।’

রশিদ মুখে না বললেও ভালোই জানেন, তাঁকে আর মুজিব উর রহমানকে নিয়ে কতটা চাপে থাকে বাংলাদেশ। ক্রিকেটীয় সৌজন্য পাশে সরিয়ে রেখে ‘চাপ’ শব্দটার জায়গায় ‘ভয়’ শব্দটাও ব্যবহার করা যায়। এটা ঠিক, রশিদ-মুজিবকে সমীহ করে না, এমন ব্যাটার টি-টোয়েন্টিতে কমই আছে। বিশ্বমানের বোলার, শীর্ষ সব ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেই খেলেন তাঁরা। এরই মধ্যে অনেক রেকর্ড দুজনের চরণতলে সুড়সুড়িয়ে চলে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটাররা রশিদ-মুজিবকে সবার চেয়ে একটু বেশিই সমীহ করে। এই তালিকায় আবার নতুন সংযোজন বাঁহাতি পেসার ফারুকি।

বাংলাদেশের ব্যাটারদের ‘অ্যাপ্রোচে’ ফুটে উঠছিল ভয় আর দ্বিধা। খেলছেন টি-টোয়েন্টি, অথচ টপ অর্ডার ব্যাটাররা শুরু করলেন ‘একটু দেখে খেলি’ মনোভাবে

প্রতিপক্ষ দলে দুর্দান্ত সব বোলার তো আছেই, নিজেদের মনের ভেতর আবার নিয়ত হারানোর ভয়, দল থেকে বাদ পড়ার ভয়, দর্শক-সংবাদমাধ্যম থেকে ধেয়ে আসা সমালোচনা আর ক্রিকেট প্রশাসকদের অতি সক্রিয়তা, সব মিলিয়ে বাংলাদেশ খেলার মধ্যে ‘উপভোগের মন্ত্র’ খুঁজে পাওয়া কঠিন।

শারজায় ম্যাচের শুরু থেকেই আফগানিস্তান দলটাকে কী চনমনে, সতেজ আর আত্মবিশ্বাসী লাগল। অথচ গ্যালারিতে প্রায় ৮০ শতাংশ বাংলাদেশি সমর্থন থাকার পরও মুশফিকরা কেমন গুটিয়ে থাকলেন। প্রথম পাঁচ ব্যাটারই মুজিব-রশিদের লাইন-লেংথের কোনো কূলকিনারা করতে না পেরে আউট হয়েছেন। নাঈম (৬), এনামুল হক বিজয় (৫), সাকিব আল হাসান (১১), মুশফিকুর রহিম (১) আর আফিফ হোসেন (১২)—হয় এলবিডব্লু হয়েছেন, না হয় বোল্ড। সাকিব বাদে চার ব্যাটারেরই স্ট্রাইক রেট ৮০-এর নিচে। 

বাংলাদেশের ব্যাটাররা পাওয়ার হিটিং দক্ষতায় পিছিয়ে, স্কিল হিটিংয়েও দুর্বলতা অনেক। তবে এর চেয়ে বোধ হয় তাঁদের বেশি সমস্যা মনে। অদ্ভুত দ্বিধা আর সংশয় নিয়ে খেললে কীভাবে রশিদ-মুজিবদের রহস্যে ঘেরা ঘূর্ণির জবাব দেবেন তাঁরা?

আফগান বোলররা যত ভালো বোলিং করছেন, বাংলাদেশের ব্যাটারদের তত ‘প্যানিক অ্যাটক’ হয়েছে। এতশত না ভেবে খেলি নিজের মতো—এই অ্যাপ্রোচটা শুধু মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের মধ্যেই কিছুটা দেখা গেল। যদিও তিনি ভাগ্যের ছোঁয়াও পেয়েছেন। ভাগ্য তো বেশির ভাগ সময়ে সাহসীদের সঙ্গেই থাকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত