Ajker Patrika

৯০% ধান কাটার দাবি প্রশাসনের, কৃষকেরা বলছেন ‘মনগড়া’

শাল্লা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২২, ১২: ০৯
৯০% ধান কাটার দাবি প্রশাসনের, কৃষকেরা বলছেন ‘মনগড়া’

সুনামগঞ্জের শাল্লায় ছায়ার হাওরের মাউতির বাঁধ ভেঙে যায় গত রোববার ভোরে। এতে ওই হাওরের ৩০ ভাগ বোরো ধান তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। অথচ স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, ছায়ার হাওরের ৯০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে।

প্রশাসনের দেওয়া এমন তথ্য ‘মনগড়া ও মিথ্যা’ উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাওর আন্দোলন নেতারা। তাঁরা বলছেন, বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি ঢাকতে প্রশাসন মনগড়া তথ্য দিয়ে কৃষকদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

শুরু থেকেই বাঁধের কাজে অনিয়মের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) গাফিলতিকে দায়ী করে আসছেন স্থানীয় কৃষকেরা। কিন্তু তখন তাঁদের কথা কেউ কানে নেয়নি। এখন দুর্বল বাঁধ ভেঙে ক্ষতি যা হওয়ার কৃষকেরই হয়েছে।

গতকাল সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডুবে যাওয়া আধাপাকা ফসল ঘরে তুলতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করছেন কৃষকেরা। নারী-পুরুষ সবাই মিলে নেমে পড়েছেন ধান কাটার কাজে। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে শিশুরাও।

ছায়ার হাওরে সাড়ে ৮ কেয়ার জমিতে বোরো আবাদ করেছিলেন শাল্লা উপজেলার সুখলাইন গ্রামের কৃষক ডালিম দাস। এর মধ্যে আধ কেয়ার জমির ধান কাটা হয়েছে। বাকি ৮ কেয়ার পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

শুধু ডালিম দাস নয়, হরিধন দাস, আনোয়ার মিয়াসহ আরও অসংখ্য কৃষক রয়েছেন, যাঁরা এখন পথে বসার উপক্রম।

সুখলাইন গ্রামের বাসিন্দা হরিধন দাস বলেন, ‘আমার ৮ বিঘা জমি। অনেক আশা নিয়ে জমিতে ধান আবাদ করেছিলাম। এখন সব পানিতে তলিয়ে গেছে। মাত্র দুই কেয়ার জমির ধান এখন কাঁচা কেটে ফেলছি। সন্তানদের নিয়ে কীভাবে চলব?’

৬০ কেয়ার জমিতে ধান আবাদ করেছিলেন সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার মিয়া। তিনি বলেন, অর্ধেক জমির ধান কাটা হয়েছে। বাকিগুলো পানির নিচে।
কৃষকেরা সবাই কেউ অর্ধেক, কেউ ৩০ ভাগ, আবার কেউ আরও বেশি ধান তলিয়ে যাওয়ার তথ্য দিলেও উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, পুরো শাল্লা উপজেলায় ২১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে এবার। এর মধ্যে ছায়ার হাওরে শাল্লার অংশে আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৬৩৭ হেক্টর। কাটা হয়েছে ৪ হাজার ৩৭ হেক্টর জমির ধান। রোববার মাউতির বাঁধ ভেঙে হাওর ডুবে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে।

তবে কৃষি বিভাগের এমন ‘মনগড়া’ তথ্য মানতে পারেননি স্থানীয় কৃষক ও হাওর আন্দোলনের নেতারা। বাহাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘হাওরে এখনো প্রায় ৪০ ভাগ ধান রয়েছে। আমরা শুরু থেকেই পাউবোর দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

এখন বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় পাউবো আর কৃষি বিভাগ নিজেদের মনগড়া তথ্য দিয়ে কৃষকদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। আমি নিজে হাওরে হাওরে গিয়ে দেখেছি, নারী-পুরুষ সবাই নিজেদের ধান আনতে হাওরে কাজ করছেন। কেউ নৌকায় আবার কেউ মাথায় বহন করছেন।’

এদিকে শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব বলেন, ৯০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। আর দু-এক দিনের মধ্যে বাকি ধানগুলোও কাটার সুযোগ পাবেন কৃষকেরা। কারণ, নদীর পানির তেমন চাপ নেই। এরপরও আমরা চেষ্টা করছি, ভেঙে যাওয়া বাঁধের ভাঙা বন্ধ করতে। আশা করছি, রাতের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত