Ajker Patrika

নগরীর বুকে ঘোড়ার ঘানি

রংপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২১, ১৫: ৫১
নগরীর বুকে ঘোড়ার ঘানি

কাঁধে জোয়াল দেওয়া ঘোড়ার সঙ্গে ঘুরছে ঘানি আর সরিষা পিষে ফোটায় ফোটায় তেল পড়ছে মাটির পাত্রে। এভাবে তৈরি হচ্ছে খাঁটি সরিষার তেল। তেলের ঝাঁজালো গন্ধে চোখে পানি এসে যায়।

নগরীর মডার্ন মোড়ে গিয়ে দেখা গেল এই দৃশ্য। সেখানে বাপ-দাদার পেশার ধারাবাহিকতায় ঘানিতে সরিষার তেল তৈরির কাজ করেন সাইফুল ইসলাম। আদি বাড়ি কুড়িগ্রামে হলেও এখন তিনি রংপুরেই থাকেন।

কাঠের ঘানির তেল এক সময় জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি হতো। এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় আর এ দৃশ্য চোখে পড়ে না। তবে মডার্ন মোড় এলাকায় আসলে যে কারওরই চোখে পড়ে রাস্তার ধারে একটি টেবিলের ওপর কিছু তেলের বোতলসহ মাটির পাতিলের। পাশেই সাইফুল প্রতিদিন সকাল ৬ থেকে সন্ধ্যা ৭ পর্যন্ত তলে উৎপাদনের কাজ করেন।

এ তেল বিক্রি করেই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে চলছে সাইফুলের সুখের সংসার। শুরুর দিকে বলদ দিয়ে ঘানিতে সরিষা পিষে তেল তৈরি করলেও এখন ঘোড়া দিয়ে তেল করেন। কারণ ঘানি টানার গরুর দাম অনেক বেশি।

সাইফুল জানান, শক্তিধর গরু না হলে ঘানি টানতে পারে না। ঘানি টানার কাজে যে ধরনের গরু লাগে, বর্তমান বাজার হিসেবে তার দাম প্রায় লাখ টাকা। ফলে আস্তে আস্তে সবাই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছে। এখন তিনি একটি ঘোড়া দিয়ে মাড়াই সম্পন্ন করেন। প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ কেজি সরিষা মাড়াই করেন। পাঁচ কেজি সরিষায় দেড় কেজি তেল হয়। প্রতি কেজি তেল ৩৫০ টাকায় বিক্রি করেন। আর খৈল বিক্রি করেন ১২০ টাকায়। এক মণ সরিষায় ১৩ কেজি তেল ও ২৪ কেজি খৈল হয় বলে জানান তিনি।

ঘানির ঘোড়া ঘোরানো হয় চোখ বেঁধে। ঘোরার সময় চোখ খোলা থাকলে ঘোর লাগে। এ ছাড়া কুকুর-বিড়াল দেখলে ঘোড়া ঘুরতে চায় না। এ কারণে চোখ বেঁধে দিতে হয় বলে সাইফুল জানান।

সাইফুল বলেন, তাঁর ঘানিতে একবারে পাঁচ কেজি সরিষা ভাঙানো যায়। সময় লাগে পাঁচ ঘণ্টা। মেশিনে সরিষা ভাঙাতে সময় লাগে কম। ১০ কেজি সরিষা ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ভাঙানো যায়। তবে মেশিনে সরিষা ভাঙালে তেলের মান কিছুটা কমে যায়। কিন্তু ভাঙানোর খরচ ও সময় কম লাগার কারণে মেশিনে সরিষা ভাঙাতে মানুষের ঝোঁক বেশি। তা ছাড়া হাতের কাছে ঘানিও এখন তেমন মেলে না।

কুড়িগ্রামের উলিপুর এবং রংপুরের বদরগঞ্জের চাষিদের কাছ থেকে সাইফুল সরাসরি সরিষা সংগ্রহ করেন। তাঁর দাবি, বর্তমানে ভেজালের দিনে তাঁর তেল শতভাগ খাঁটি। এ কারণে তাঁর ক্রেতাও বেশি। শুধু এলাকার মানুষই এ খাঁটি তেল কেনেন না, আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকেও ক্রেতারা এসে তেল নিয়ে যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত