Ajker Patrika

ছোট সিলেবাসে রেকর্ড সাফল্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯: ৪২
ছোট সিলেবাসে রেকর্ড সাফল্য

একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার আগেই করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দ্বাদশেও কোনো ক্লাস হয়নি। পরে মাত্র দুই মাসের সশরীরে ক্লাস শেষে সরাসরি এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বসেন শিক্ষার্থীরা। তবে সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা দিয়ে রেকর্ড সাফল্য পেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ২০২০ সালের অটোপাসের ঘটনা বাদ দিলে আগের যেকোনো বছরের তুলনায় উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফল করেছেন তাঁরা।

গতকাল প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে গড় পাসের হার ছিল ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। এই পরীক্ষায় মোট অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ছিলেন ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৬৮১ জন। এর মধ্যে পাস করেছেন ১৩ লাখ ৬ হাজার ৭১৮ জন। আর জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন।

করোনার সংক্রমণের কারণে ২০২১ সালের উচ্চমাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় আট মাস পিছিয়ে গত ডিসেম্বরে। বিশেষ পরিস্থিতিতে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে ছয়টি পত্রে এই পরীক্ষা হয়। সময় কমিয়ে আনা হয় দেড় ঘণ্টায়। বাংলা ও ইংরেজির মতো আবশ্যিক বিষয়গুলোর পরীক্ষা এবার নেওয়া হয়নি। তার বদলে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে সেসব বিষয়ের মূল্যায়ন করে পূর্ণাঙ্গ ফলাফল তৈরি করা হয়েছে। আর এতেই ভালো ফলের নতুন রেকর্ড হয়েছে এবার।

 গতকাল প্রকাশিত ফলাফলে ছাত্রদের পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছেন ছাত্রীরা। শুধু পাসের হারেই নয়, ফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রেও এবার মেয়েরা এগিয়ে আছেন। ছেলেদের পাসের হার যেখানে ৯৪ দশমিক ১৪ শতাংশ, সেখানে মেয়েদের পাসের ৯৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া মেয়েদের ১৫ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং ছেলেদের ১২ দশমিক ১৩ শতাংশ জিপিএ–৫ পেয়েছে। পাসের হারে সেরা হয়েছে যশোর শিক্ষা বোর্ড। আর সবচেয়ে পিছিয়ে আছে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড। সারা দেশের পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো পরীক্ষার্থীই পাস করতে পারেননি। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে ৫টি শূন্য পাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বোর্ডে ২টি, দিনাজপুর বোর্ডে ২টি ও ময়মনসিংহ বোর্ডে ১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর ১ হাজার ৯৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাসের হার শতভাগ।

২০২০ সালে আটোপাস ছাড়া অন্যান্য বছরের ফলের সব রেকর্ড ভেঙেছে এই ফল। এমনকি ২০২০ সালের চেয়েও এই বছর ২৭ হাজার ৩৬২ জিপিএ-৫ বেড়েছে।

কেন এত ভালো ফল জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে অন্য বিষয়ে ফলাফল দেওয়া হয়েছে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে, কম সময়ে পরীক্ষা হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পেরেছেন, সে জন্য এবার ভালো ফল হয়েছে।

গতকাল ফল প্রকাশের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস ছিল অনেকটা ঘরবন্দী। ঢাকা মহানগরের বড় কলেজগুলোতে ভালো ফল পাওয়া শিক্ষার্থীরা কিছুটা উচ্ছ্বাস দেখালেও অধিকাংশ বিষয়ে অটোপাসের কারণে চিরায়ত সেই বাঁধভাঙা আনন্দ এবার চোখে পড়েনি।

কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, এসএসসি পর্যন্ত রেজাল্টের একটা আমেজ ছিল। এখন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতির সময়। সবাই বাসায় বসে পড়াশোনায় ব্যস্ত। এই সময়ে কলেজে আসতে হবে এমন ইচ্ছা অনেকেরই নেই।

এদিকে রেকর্ডসংখ্যক শিক্ষার্থী পাস এবং জিপিএ-৫ পেলেও তাঁদের মনে চিন্তার মেঘ জমতে শুরু করেছে ভর্তিযুদ্ধ নিয়ে। এবার জিপিএ-৫ পেয়েও ১ লাখের বেশি শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে পড়ার সুযোগবঞ্চিত হবেন। ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী, উন্মুক্ত, জাতীয় এবং ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বাদে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রথম বর্ষের আসন ৬৪ হাজার ১৮৫টি। এ ছাড়া মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ১০ হাজারের কিছু বেশি আসন রয়েছে। সে হিসাবে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েও ১ লাখ ১৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত