Ajker Patrika

আহা বৃষ্টি!

সম্পাদকীয়
আহা বৃষ্টি!

বড় ভালো হতো, যদি বৃষ্টি নিয়ে খানিক কাব্য করা যেত। সত্যিই তো, আশীর্বাদ হয়ে আসতে পারে বৃষ্টি। গুমোট গরমের পর হঠাৎ করে ঝরঝর বারিধারা মনে নিয়ে আসতে পারে আনন্দের হিল্লোল। বাঙালির সঙ্গে বৃষ্টির এক অপূর্ব সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণে বাংলা সাহিত্যে বৃষ্টির রয়েছে বড় আসন। এক রবীন্দ্রনাথই তাঁর বর্ষার গান দিয়ে প্রকৃতিকে অনুভব করার কত উপকরণ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছেন। বর্ষাকাল সাহিত্যিকদের খুব প্রিয় একটি ঋতু। কিন্তু আমরা যখন এ লেখাটি লিখছি, তখন বর্ষা পেরিয়ে গেছে অনেক দিন। ভাদ্র মাস যায় যায়; অর্থাৎ শরতের সাদা মেঘের আকাশ আর কাশফুল বন্দনার সময় এখন। এ রকম সময় যে বৃষ্টি হলো, কিংবা হচ্ছে কয়েক দিন ধরে, তা নিয়ে হয়তো কাব্য করা যায়, কিন্তু বাস্তব অবস্থা আমাদের সেদিকে নিয়ে যাচ্ছে না।

রাজধানী ঢাকার কথাই যদি বলি, তাহলে থেমে থেমে কিংবা অবিরাম বর্ষণের ফলে রাস্তাঘাটে যান চলাচলে দারুণ বিঘ্ন ঘটেছে। রাস্তার গর্ত কিংবা জলাবদ্ধতা শহরের গতিকে অনেকটাই মন্থর করে দিয়েছে। রাজধানী থেকে বের হওয়ার পথগুলোতেও রয়েছে সংকট। আর এতে সবচেয়ে বিপদে পড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। রিকশা, অটোরিকশা কিংবা হিউম্যান হলারে যাঁরা চলাচল করেন, তাঁদের দীর্ঘ সময় পথে অপেক্ষা করতে হয় অথবা চালকের সঙ্গে নির্দিষ্ট হারের চেয়ে বেশি টাকায় রফা করতে হয়।

টঙ্গী কিংবা গাজীপুরের দিকে যাওয়ার অর্থই হচ্ছে দীর্ঘ সময় অনিশ্চিত যাত্রার সাক্ষী হওয়া। যানজটের কারণে স্থবির হয়ে যাওয়া জনজীবনে বৃষ্টি তাই খুব কি আনন্দ দিতে পারে? অনেক হাঙ্গামা পেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছেই কেবল ফেলা যায় স্বস্তির নিশ্বাস। তার আগপর্যন্ত মানুষের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, এত যে পরিকল্পনা, মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়, তার সুফল কবে পাবে রাজধানীর মানুষ? টঙ্গী ও গাজীপুরে এ রকম অব্যবস্থা কি দিনের পর দিন চলতেই থাকবে?

রাস্তার ফাঁকফোকরগুলো কি ভরাট হয়ে কোনো দিন তৈরি হবে মসৃণ চলার পথ? কথাগুলো ঢাকা এবং তার আশপাশ নিয়ে বলা হলেও প্রায়ই আমরা দেখি, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাস্তাঘাটের নাজুক অবস্থার ছবি। লঘুচাপের কারণে উপকূলের মানুষ কতটা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে, সেটাও কিন্তু অনুভূত হচ্ছে।
বৃষ্টি হলে গোটা দেশই বিপদে পড়ে যায়। বিভিন্নভাবে উন্নয়ন প্রকল্পে টাকা খরচ করার সুযোগ থাকায় একই রাস্তা বারবার গড়া এবং ভাঙার খেলা আমরা বহুবার দেখেছি। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে দুর্নীতির একটা মধুর সম্পর্ক থাকার কারণেই কি এত যন্ত্রণা?

সবকিছু মেনে নিয়ে চাল এবং ডাল মিলিয়ে খিচুড়ি তৈরি করে বৃষ্টির আনন্দ উপভোগ করা, অথবা জনজীবনের এই দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে নিরুপায় হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কোনো গতি কি আছে আমাদের?

বৃষ্টি এসে জনজীবনে দুর্ভোগ আনবে না, এ রকম বাস্তব পরিকল্পনা নেওয়া হলে দীর্ঘশ্বাসগুলো কেটে যেত। যাবে কি?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত