Ajker Patrika

দেশের যোগাযোগে বড় সফলতা স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ১৭
দেশের যোগাযোগে বড় সফলতা স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল

নদীমাতৃক বাংলাদেশে জালের মতো ছড়িয়ে আছে প্রায় সাড়ে সাত শ নদ-নদী। মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে নির্মাণ করা হয়েছে অসংখ্য সেতু এবং কালভার্ট। সময়ের প্রয়োজনেই পরিকল্পনা করা হয় কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণের। ইতিমধ্যে এর ৮০ শতাংশ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। যার মাধ্যমে ৫০ বছর আগের সেই দরিদ্র বাংলাদেশ নিজের উন্নয়ন সক্ষমতা প্রমাণে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল।

এক যুগ আগেও দেশে টানেল নির্মাণ ছিল শুধুই স্বপ্ন। টানেলের মাধ্যমে দেশ যুক্ত হবে আন্তর্জাতিক সড়ক যোগাযোগে। এর মাধ্যমে পর্যটন, শিল্প উৎপাদন এবং আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন প্রাণ সঞ্চার হবে। চাঙা হবে দেশের অর্থনীতি। এর সুফল পাবে চট্টগ্রামসহ সারা দেশের মানুষ।

বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রাম কর্ণফুলী নদীর বিভাজনের শিকার। এ প্রকল্পের এক প্রান্তে রয়েছে চট্টগ্রাম নগরী, বিমান ও সমুদ্রবন্দর। অপর প্রান্তে আনোয়ারা। যেখানে রয়েছে অসংখ্য ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান। বিভক্ত দুই অংশকে একই সুতোয় যুক্ত করতে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’-এর আদলে কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করছে সরকার।

নদীর উভয় প্রান্তে টানেলে থাকবে চার মুখ এবং দুটি টিউব। ইতিমধ্যে টানেলের সার্বিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ। বাংলাদেশ সরকার ও চীনা এক্সিম ব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে টানেলটি।

২০২২ সালের ডিসেম্বরের আগে এ টানেল নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি চালু হলে প্রথম দিকে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে। তিন বছর পর তা হবে ৭৬ লাখ। এর ৫১ শতাংশ হবে কনটেইনারবাহী ট্রেইলর এবং বিভিন্ন আকারের ট্রাক ও ভ্যান। বাকি ৪৯ শতাংশের মধ্যে থাকবে ১৩ লাখ বাস, মিনিবাস ও মাইক্রোবাস এবং ১২ লাখ গাড়ি, জিপ ও ছোট গাড়ি।

প্রকল্পটির পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, এটি বিশাল আকৃতির টানেল, যার বোরিং মেশিন–টিবিএমের সম্মুখভাগ পতেঙ্গা পয়েন্টে, দ্বিতীয় টিউবের খনন পর্ব শেষ হয়েছে। আর এটি ছিল টানেল নির্মাণের মূল চ্যালেঞ্জ। টানেলটি আবার দুই টিউবে চার লেনবিশিষ্ট। আর প্রয়োজনীয় লাইটিং, অক্সিজেন সরবরাহ ও বিউটিফিকেশনের কাজও প্রায় শেষ হয়েছে।

হারুনুর রশীদ চৌধুরী আরও বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। এ ছাড়া এখানে দেশের সর্ববৃহৎ ৬০০ মেগাওয়াট করে ১,২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।

কর্ণফুলী নদীর তলায় পলি জমার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে উল্লেখ করে হারুনুর রশীদ বলেন, পলি জমার সমস্যা সমাধানের জন্য নদীতে অন্য কোনো সেতু নির্মাণ না করে নদীর নিচ দিয়ে টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে। এর দুই পাশে নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। আর ভবিষ্যতে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের সরাসরি সড়ক যোগাযোগও স্থাপিত হবে।

ভারত ও মিয়ানমার হয়ে এশিয়ান হাইওয়ে যাবে চীনে। আর এর সংযোগমাধ্যম হচ্ছে কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত টানেলটি। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম জহিরুল ইসলাম বলেন, এই টানেল চালু হলে যোগাযোগ যেমন উন্নত হবে, তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্যও ব্যাপক উন্নতি হবে। পাল্টে যাবে দেশের উন্নয়নচিত্র।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, টানেলের কারণে নদীর আনোয়ারা প্রান্তে বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠছে। এখন চাইলে বন্দরও তাদের বেশ কিছু কার্যক্রম নদীর ওই প্রান্তে স্থানান্তর করতে পারে।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, এই সাড়ে তিন কিলোমিটার টানেল চট্টগ্রামকে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত করবে। এশিয়ান হাইওয়ে যুক্ত হবে চীনের প্রস্তাবিত সিল্ক রোডের সঙ্গে। এক টানেলের মাধ্যমে নতুন একটি বলয় তৈরি হবে। ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে খুলে যাবে সম্ভাবনার এক নতুন দুয়ার।

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৫ সালের নভেম্বরে এর অনুমোদন দেওয়া হয়। নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ২০১৬ সালের অক্টোবরে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্মাণকাজ শুরু হয়। আর সেটি চালু হতে যাচ্ছে ২০২২ সালে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত