Ajker Patrika

বিষখালীর তীরে তীব্র ভাঙন

ঝালকাঠি প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২: ২৮
বিষখালীর তীরে তীব্র ভাঙন

ঝালকাঠিতে বিষখালী নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙনে ইতিমধ্যে অনেক মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। রক্ষা পায়নি সরকার স্থাপনাও। ইতিমধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে কয়েকশত ঘরবাড়ি ও পাকা স্থাপনা। এরই মধ্যে বেশ কিছু গ্রাম নদীতে হারিয়ে গেছে। ফলে মূল মানচিত্র হারাতে বসেছে কয়েকটি ইউনিয়ন। অসহায় হয়ে পড়ছেন নদী তীরবর্তী হাজারো মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিষখালী নদীর ভাঙনে গত ২৪ আগস্ট ঝালকাঠির পশ্চিম দেউরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টারের অর্ধেক নদীতে বিলীন হয়ে যায়। পেনাবালিয়া ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকায় অব্যাহত ভাঙনের মধ্যেও অবৈধ বালু উত্তোলন থেমে নেই। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের ব্যবস্থা করেই অসাধু ব্যবসায়ীরা বালু উত্তোলন করে আসছে। এ ছাড়া ভাঙনকূল থেকে মাটি কেটে ইট ভাটায় নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে, ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার মঠবাড়ী ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের বাকি অংশ ও বাদুরতলা বাজারের সম্পূর্ণ বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। হুমকির মুখে রয়েছে বিষখালীর তীরবর্তী বড়ইয়া ডিগ্রি কলেজ, বড়ইয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মঠবাড়ী ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কয়েকটি বাজার, বেশকিছু বসতবাড়ি, মসজিদসহ অসংখ্য স্থাপনা ও ফসলি জমি।

নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, ঝালকাঠির বিষখালী নদীর ভাঙনে পৈতৃক ভিটামাটি হারিয়ে তারা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। ভাঙনে সব হারিয়ে কোনো সহায়তা না পেয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে। প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে মাত্র ছয় বছর (২০১৫ সালে) আগে এই প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টারটি নির্মাণ করা হয়। ওই সময় ভাঙন কবলিত বিষখালী নদীর মাত্র ১০০ গজের মধ্যে এ ধরনের ভবন নির্মাণে স্থানীয়রা আপত্তি জানালেও কর্তৃপক্ষ তাতে ভ্রুক্ষেপ করেনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, ইতিমধ্যে বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টারের পাশ দিয়ে যাওয়া সংযোগ সড়ক ও স্থানীয় বাজার বিলীন হয়ে গেছে। সরে গেছে সাইক্লোন শেল্টারের বেসমেন্টের নিচের মাটি। সেখানে ঢুকে পড়েছে পানি। ভবনটি এখন শুধু পাইলিংয়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তিন পাশেই বিষখালীর পানি থৈ-থৈ করছে। বিদ্যালয়ে মোট ১৩৭ জন শিক্ষার্থী থাকলেও ভয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আসা বন্ধ হয়েছে অনেকে আগেই। যে কোনো সময় নদীগর্ভে হারিয়ে যেতে পারে ভবনটি। শুধু বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টারটি নয়, নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে স্থানীয় বাজার, সড়ক, বসতঘর, ফসলি জমিসহ অসংখ্য গাছপালা।

গত ঘূর্ণিঝড়ে আঘাত হানার ভয়ে তিন শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল এই বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টারে। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় রাতে অনেকেই সেখান থেকে নেমে যায়।

পশ্চিম দেউরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেবাটি রক্ষা জন্য বিভিন্ন দপ্তরে অনেকবার জানিয়েও কোনো সমাধান পাইনি। এখন এটি নদীতে বিলীন হলে স্থানীয়রা চরম ভোগান্তিতে পরবে। কর্তৃপক্ষের কাছে এটি রক্ষার দাবি জানান তিনি।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের ঝালকাঠি অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রুহুল আমীন জানান, ভবন নির্মাণের সময় পাউবো নদী শাসনের একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করলেও তা শেষ করেনি। এ কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সাইক্লোন সেবাটি রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

ঝালকাঠি পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) মো. রাকিব হোসেন জানান, জেলায় মোট ১৫ কিলোমিটার নদী ভাঙন প্রবণ এলাকা রয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় ভাঙনরোধে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে।

ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী জানান, নদী ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধ দিতে হবে। অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে ভাঙনরোধ সম্ভব নয়। এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত