Ajker Patrika

এবারও তালিকায় নেই তারকা ব্যবসায়ীরা

ফারুক মেহেদী, ঢাকা
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২১, ১৬: ৩০
এবারও তালিকায় নেই  তারকা ব্যবসায়ীরা

দেশ এগোচ্ছে। অর্থনীতি বড় হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে বিস্ময়করভাবে। আমদানি-রপ্তানি খাতেরও ব্যাপক বিস্তার ঘটছে। দেশের প্রতিটি খাতে উন্নয়নের ছোঁয়া। আর এসবের পেছনে অন্যতম ভূমিকা রাখছেন বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। প্রতিবছর স্বীকৃতি হিসেবে তাঁরা সিআইপি হয়ে তারকা ব্যবসায়ীর মর্যাদাও পাচ্ছেন। দেশের এমন অসংখ্য তারকা ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা নাম-জস কামিয়ে সরকারের মন্ত্রী, সাংসদও হচ্ছেন। কিন্তু সেরা করদাতার তালিকায় এবারও এমন অসংখ্য তারকা ব্যবসায়ীদের নাম নেই। ঘুরেফিরে সেই জর্দা ব্যবসায়ীই আবারও সেরা করদাতা। এনবিআরের প্রকাশিত সেরা করদাতার তালিকা থেকে পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে যাঁরা সেরা করদাতা হয়েছেন, এঁদের মধ্যে যাঁরা আগেও সেরা হয়েছেন, কিংবা নিয়মিত কর দেন, তাঁরাই তালিকায় এসেছেন। বিশেষ করে ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে দেশের নামজাদা ব্যক্তিদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তালিকা থেকে দেখা যায়, ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে সেরা হয়েছেন পুরান ঢাকার জর্দা ব্যবসায়ী কাউছ মিয়া, বৃহৎ করদাতা ইউনিট-এলটিইউর করদাতা নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, এলটিইউর করদাতা ব্যবসায়ী নাফিস সিকদার, এলটিইউর করদাতা মো. শওকত আলী ও কর অঞ্চল-২-এর করদাতা ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন। তালিকায় ব্যাংক মালিকদের সংগঠন-বিএবির প্রেসিডেন্ট ও নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ছাড়া বলতে গেলে অন্যদের ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে তেমন তারকা খ্যাতি নেই।

জানা যায়, শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিচেনায় সিআইপি হিসেবে যেসব ব্যবসায়ীদের প্রতিবছর মর্যাদাপূর্ণ যে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, হিসাব করলে এ পর্যন্ত তাঁদের সংখ্যা হবে কয়েক শ। আর দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনসহ খাতভিত্তিক আরও নামকরা সংগঠনও সংখ্যায় কম নয়। এসব সংগঠনের শীর্ষ পদে যাঁরা আছেন বা আগে যাঁরা ছিলেন তাঁরা কমবেশি সবাই নিজ নিজ খাতে সেরা, সফল ব্যবসায়ী হিসেবেই স্বীকৃত। তাঁদের অনেককেই সবাই চেনেন। অথচ প্রতিবছর যে সেরা করদাতার তালিকা হয়, সেখানে তাঁদের নাম দেখা যায় না। কেন তারকা ব্যবসায়ীরা সেরা করদাতা হতে পারেন না—এ প্রশ্ন সবার। তাঁরা কি তবে কম কর দেন? তাঁরা কি তবে ফাঁকি দেন?

এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক আয়কর নীতির সদস্য ড. সৈয়দ আমিনুল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, আসলে প্রকৃত করদাতার আয়ের যে গভীরে যাওয়া, সেটা হচ্ছে না। একেকজন বিত্তশালী করদাতার যে জীবনযাত্রা, এ থেকে আয়ের যে একটা প্রাক্কলন করা বা তাঁর প্রকৃত আয়টা কোথা থেকে আসছে—সেটার উদঘাটন করা হচ্ছে না। সিআইসির সাবেক মহাপরিচালক হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা বড় অনেকের ফাইল ধরে দেখেছি, আয় ২ লাখ টাকাও নেই। অথচ জীবনযাত্রায় বেশ চাকচিক্য।’

এনবিআরের কর বিভাগের সাবেক সদস্য ও এলটিইউর সাবেক কমিশনার অপূর্ব কান্তি দাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, তালিকার বাইরেও দেশে অসংখ্য বড় ব্যবসায়ী রয়েছেন। তাঁদের নাম কেন সেরাদের তালিকায় আসে না—এটা একটা প্রশ্ন। তবে সাধারণত যাঁরা সেরা হচ্ছেন, কর দেওয়ার ব্যাপারে তাঁরা নিয়মনীতি মেনে চলেন, তাঁদের কোনো কর ফাঁকি নেই বা তাঁদের নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। এটাই তাঁদের সেরা হওয়ার কারণ। আর যাঁরা হন না, স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেওয়া যায়, তাঁরা হয়তো এ নিয়মগুলো ঠিকমতো পরিপালন করেন না বা তাঁদের আয়-ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন আছে।

এ ব্যাপারে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট-পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বড় ব্যবসায়ী অনেকের অ্যাকাউন্ট প্রশ্নবিদ্ধ। তাঁদের নাম সেরা করদাতার তালিকায় থাকা উচিত। এটা কর কর্মকর্তাদেরই কাজ। তাঁরা কি কম্প্রমাইজ করছে? নাকি অনিচ্ছাকৃতভাবেই করছেন না, সেটাও একটা বিষয়। বিশ্বে কর বিভাগের সঙ্গে করদাতার দেখাদেখি হয় না। দেখা হলেই একটা কম্প্রমাইজের সুযোগ থাকে। যে কাজ অন্যরা ৫০ বছর আগেই করেছে, আমরা তা করতে পারছি না।’

পর্যালোচনায় দেখা যায়, রপ্তানিমুখি তৈরি পোশাক ক্যাটাগরিতে যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে, তাদের বাইরেও বহু রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের নাম সেরা করদাতার তালিকায় আসতে পারত, অথচ আসেনি। নাম এসেছে ইউনিভার্সেল জিন্স লিমিটেড, ইয়ংওয়ান হাইটেক স্পোর্টসওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স লিমিটেড, রিফাত গার্মেন্টস লিমিটেড, স্কয়ার ফ্যাশন লিমিটেড, হামিম ডেনিম লিমিটেড ও জিএমএস কোম্পোজিট নিটিং ইন্ড্রাস্টিজ লিমিটেডের। আবাসন খাতে নাম এসেছে রেব-আরসি (প্রা.) লিমিটেড, রিজভী কনসট্রাকশন লিমিটেড, বে ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের। অথচ এ খাতে আরও অনেক তারকা প্রতিষ্ঠান আছে, যাদের নাম সেরা করদাতার তালিকায় আসতে পারত, কিন্তু আসেনি। বেতনভোগী ক্যাটাগরিতে নাম এসেছে মোহাম্মাদ ইউসুফ, হোসনে আরা হোসেন, রুবাইয়াৎ ফারজানা হোসেন, লায়লা হোসেন ও এম এ হায়দার হোসেনের। দেশে এখন অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানির চেয়ারম্যান, এমডি, সিইও রয়েছেন, যাঁরা বিপুল অংকের বেতনভাতা গ্রহণ করেন। কিন্তু তালিকায় এমন বেতনভোগীদের নাম আসেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত