Ajker Patrika

এসএমই খাত অর্থনীতিতে ফুসফুসের মতো কাজ করে

জয়নাল আবেদীন খান
আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২১, ১১: ২৬
এসএমই খাত অর্থনীতিতে ফুসফুসের মতো কাজ করে

আজকের পত্রিকা: এসএমই ফাউন্ডেশনের মূলত লক্ষ্যটা কী?

মফিজুর রহমান: বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রকৃতি মূলত মিশ্র। এর অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে কৃষি, শিল্প এবং প্রবাসীদের আয়কে বিবেচনা করা হয়। তবে শিল্প খাতের অবদান দিন দিন বাড়ছে। দেশে প্রায় ১ কোটি উদ্যোক্তা রয়েছে। তাঁদের মধ্যে বৃহৎ উদ্যোক্তার সংখ্যা হাতে গোনা পাঁচ-ছয় হাজার। আর বাকি সব কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি উদ্যোক্তা। তাঁদের কর্মের ওপরই অর্থনীতির প্রবাহ নির্ভর করে। এমনকি এসএমই খাতে স্বল্প বিনিয়োগ করলেই নগর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। নতুন নতুন শিল্প গড়ে ওঠে। সেখানে একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মধ্যে কর্মতৎপরতা সৃষ্টি হয়। নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়। আর সবকিছুর সারসংক্ষেপ হলো এসএমই খাত অর্থনীতির জন্য ফুসফুসের মতোই কাজ করে।

আজকের পত্রিকা: এসএমই খাতের উন্নয়নে ফাউন্ডেশন কী ভূমিকা রাখছে?

মফিজুর রহমান: এসএমই উদ্যোক্তাদের ব্যবসা পরিচালনাসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ, দেশি-বিদেশি বাজার সম্পর্কে অবহিতকরণ, কারিগরি সহায়তা প্রদান, গ্রুপভিত্তিক ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহ এবং ঋণ প্রদানসহ প্রয়োজনীয় সব বিষয় নিয়ে এসএমই ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এমনকি যদি কোনো ব্যাংক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে না চায়, তখন ফাউন্ডেশন ব্যাংক এবং উদ্যোক্তাদের মাঝে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা রাখে। এমনকি এসএমই উদ্যোক্তাদের ব্যবসা করতে শুল্কসংক্রান্ত বাধা চিহ্নিত করে তা সমাধানের সুপারিশও করে ফাউন্ডেশন।

আজকের পত্রিকা: করোনাকালে এসএমই খাতের চ্যালেঞ্জ কী ছিল?

মফিজুর রহমান: করোনাকালে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাদ পড়েনি এসএমই খাতও। লকডাউনের সময় উদ্যোক্তাদের ব্যবসা থমকে গিয়েছিল। অনেকে লোকসানের ঘানি টানতে না পেরে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে লকডাউন শিথিল করা হলে অধিকাংশ উদ্যোক্তাই ব্যবসা চালু করেছেন। তাঁদের ব্যবসা সচল রাখার জন্য সরকার এসএমই খাতের জন্য প্রথমে ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দেয়।

আজকের পত্রিকা: এসএমই খাতের জন্য সরকারের প্রণোদনা যথেষ্ট ছিল কি?

মফিজুর রহমান: সরকার অর্থনীতিকে সচল এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এসএমই খাতে যে প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছিল, তা উদ্যোক্তাদের ব্যবসা চালু করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। তবে ঘোষিত প্রণোদনার সুবিধা স্বল্পসংখ্যক উদ্যোক্তাই পেয়েছেন। প্রায় ১ কোটি উদ্যোক্তার জন্য চাহিদা অনুযায়ী যথেষ্ট ছিল না এবং তা পূরণ করাও সম্ভবপর নয়। তবে এ খাতে প্রণোদনার পরিমাণ যত বেশি হবে, অর্থনীতি তত দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

আজকের পত্রিকা: এসএমই উদ্যোক্তাদের বড় সমস্যা ঋণপ্রাপ্তিতে জটিলতা। এ ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশনের করণীয় কী?

মফিজুর রহমান: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার পরে বর্তমানে এ সমস্যা কিছুটা কমে গেছে। সুদের হারের দিকটাও কম, যা উদ্যোক্তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর এখন প্রায় সব ব্যাংকই এসএমই খাতে ঋণ দেয়। এমনকি ঋণ পেতে বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগও রক্ষা করে ফাউন্ডেশন।

আজকের পত্রিকা: নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আপনারা বিশেষ কী করছেন?

মফিজুর রহমান: এসএমই ফাউন্ডেশনের একটা স্বতন্ত্র বিভাগ নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তা করার জন্য কাজ করছে। নতুন নারী উদ্যোক্তা চিহ্নিত করতে জরিপ চলমান রয়েছে। নারী উদ্যোক্তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আর নারী উদ্যোক্তাদের ঋণেরও একটা বিশেষ কোটা সংরক্ষণ করা হয়।

আজকের পত্রিকা: করোনা-পরবর্তী জাতীয় এসএমই মেলা সম্পর্কে হালনাগাদ কী তথ্য রয়েছে?

মফিজুর রহমান: করোনার পরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তাদের পণ্যমেলা বিশাল পরিসরে আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আট দিনব্যাপী নবম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা-২০২১ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। এ মেলা আগামী ৫ ডিসেম্বর শুরু হচ্ছে। এ বছর এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে নানা উন্মুক্ত প্রশিক্ষণ ও সেমিনারের আয়োজন করা হবে। মেলায় সারা দেশ থেকে মোট ৩২৫ জন উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করবেন। যার মধ্যে নারী উদ্যোক্তা ৬০ শতাংশ। আর এসএমই খাতে ঋণ বিতরণকারী ১০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ঢাকা স্টোক এক্সচেঞ্জ মেলায় অংশগ্রহণ করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত