অধ্যাপক নিলুফার সুলতানা
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি। দেশি-বিদেশি চক্রান্তে নিহত হয়েছিলেন এ দেশের স্থপতি।আজ আমি স্মৃতিচারণা করব বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের। সে দিনগুলো এখনো চোখে ভাসে।
বঙ্গমাতা বা ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে আমি জানতাম মুজিব চাচি বলে। আর আম্মা ডাকতেন ‘রেণু’। আত্মীয়তা, বন্ধুত্ব, রাজনৈতিক সহকর্মী—তিন ধরনের বন্ধনে জড়িয়ে ছিল দুই পরিবার, সেই কলকাতার আমল থেকে। তাই আমি খুব ছোটবেলায় চাচিকে দেখেছি, যখন তাঁর বয়স একেবারেই কম। ঢাকায় এলেই চাচি আমাদের ওয়ারীর বাসায় আসতেন দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে (শেখ হাসিনা ও শেখ কামাল)। আম্মার সঙ্গে বসে মজা করে পান খেতেন আর বলতেন, ‘ছোট বুজির কাছে এলে বাপের বাড়ির আরাম পাই।’ এ কথার অর্থ তখন বুঝতাম না, পরে আম্মার কাছে জেনেছি, ওনার বাপের বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি একটাই। উনি পিতৃ-মাতৃহারা ছিলেন। এটা বোঝার পর মুজিব চাচির জন্য আমার বিশেষভাবে মায়া লাগত।
সেই পঞ্চাশের দশকের প্রথম দিকে চাচি কেমন ছিলেন, তা পরবর্তীকালে তাঁকে যাঁরা দেখেছেন বা যে ছবি সারা দুনিয়া দেখে, তা থেকে কল্পনাও করতে পারবেন না। আমার শিশুচোখে তাঁকে মনে হতো যেন জ্যান্ত একটি ‘জাপানি পুতুল’। ছোটখাটো, পাঁচ ফুটের কম লম্বা, হাত-পা নিখুঁত, মসৃণ, সুডৌল, কবজির, কনুইয়ের বা আঙুলের হাঁড় দেখা যেত না। মুখটাও নিখুঁত ডিম্বাকৃতি। আর গায়ের রং সাদার মধ্যে হঠাৎ কমলার ছোঁয়া। অমন নিখুঁত গোলগাল, মসৃণ সাদার মধ্যে কমলা আভা একমাত্র বড় দোকানের শোকেসে দেখা জাপানি পুতুল ছাড়া আর কোথাও দেখিনি। আমার স্মৃতিতে সেই চমৎকার পুতুলচাচির গায়ের একটি সরু কালো পাড় কমলা রঙের শাড়ি বাঙালি ঢঙে পরা। চাচি বাড়িতে সব সময় ওভাবে শাড়ি পরতেন। তবে ওনার নিজের বাড়িতে বড় হয়ে যখনই গিয়েছি, কখনো সাদা ছাড়া অন্য কোনো শাড়ি পরা অবস্থায় দেখিনি।
আজ একটা দিনের স্মৃতি তুলে ধরতে চাই, যা মুজিব চাচির জীবনের ব্যতিক্রমী দিন নয়; বরং বলা যায় প্রায়ই যেমন কাটত তাঁর দিন, তারই একটি উদাহরণ।
তখন দেশে সামরিক শাসন। আইয়ুব আমল। আমরা বড় হয়েছি, স্কুলে পড়ি। একদিন আব্বু (এম এ জলিল) বললেন, ‘আজ রেণুকে দেখতে যাব। অনেক দিন খোঁজ নিতে পারিনি। তা ছাড়া, নতুন বাড়িতে কী অবস্থায় আছে দেখা দরকার।’ আম্মা (জায়নাব আখতার) আর আব্বু যাচ্ছেন দেখে আমিও বায়না ধরলাম,
চাচির ধানমন্ডির বাসা দেখিনি। আমিও যাব। রিকশায় চড়ে আমরা ওয়ারী থেকে ধানমন্ডি গেলাম।
পড়ন্ত বিকেলে একটা অর্ধসমাপ্ত বাড়ির সামনে আমরা নামলাম। দুই ধাপ সিঁড়ি বেয়ে একটা বারান্দায় উঠলাম। সেখানেই দুটো চেয়ার ছিল। আম্মা আর আব্বু বসলেন, আমি দাঁড়িয়ে চারদিক দেখছি। তখনই চাচিকে দেখলাম। বারান্দাটা বেঁকে পূর্ব-পশ্চিম থেকে উত্তর-দক্ষিণে চলে গেছে। কত দূর তা দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু বেশ কিছু দূরে মুজিব চাচি একটা কাঠের চেয়ারে আমাদের দিকে মুখ করে বসে আছেন। আর ওনার সামনে আমাদের দিকে পেছন ফিরে একটা লোক আরেকটা চেয়ারে বসা। লোকটাকে দেখা যাচ্ছে পেছন থেকে, তিনি আমাদের দেখতে পাচ্ছেন না। কিন্তু চাচি আমাদের দেখেছেন। তিনি হেসে হাত ইশারা করে আমাদের বসতে বললেন। কিন্তু উনি উঠে এলেন না।
আব্বু ব্যাপারটা বুঝে ফেলেছেন। আস্তে আস্তে বললেন, ‘দেখেছ, পুলিশের লোক এসে বিরক্ত করছে।’ আমরা অনেকক্ষণ বসে রইলাম। লোকটা যায় না। চাচি বারবার হাত তুলে ইশারা করছেন যেন বসি। ঘণ্টাখানেক পর তিনি লোকটাকে বিদায় করে আমাদের কাছে এলেন। ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে এসেছে।
একটা মোড়া নিয়ে এসে চাচি আমাদের সামনে বসলেন। এখানে বলে রাখি, মুজিব চাচা তখন জেলে। অনেক দিন। নতুন বাড়িটিও শেষ করতে পারেননি। সেই আধা তৈরি বাড়িতেই চাচি ছেলেমেয়েদের নিয়ে থাকছেন। তিনি বলতে লাগলেন সব কথা। ওই লোকটা ডিবি বা সরকারের গোয়েন্দা বিভাগের লোক। প্রায়ই আসে। আজ নাকি বেলা ১১টার দিকে এসেছে। আর যায়নি। আমরা যাওয়াতে কোনোমতে মেহমান বসে আছে বলে সন্ধ্যায় তাঁকে বিদায় করা গেল।
আম্মাকে নিজের মলিন শাড়িটি দেখিয়ে চাচি বললেন, সারা দিন গোসল করতে পারেননি। কাপড় বদলাতে পারেননি। খাওয়া হয়নি। লোকটা তাঁকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। চাচি ম্লান মুখে হেসে বললেন, ‘ও ভেবেছে আমি ক্লান্ত হয়ে হঠাৎ কিছু বলে ফেলব, যার সূত্র ধরে ওরা আপনার ভাইকে আরও বেকায়দায় ফেলতে পারবে। আমি সবই বুঝি।’
কথা বলতে বলতে তিনি কয়েকবার উঠে পাকঘরে গেলেন, আবার আমাদের হাতে বানানো পায়েস, মোরব্বা ইত্যাদি নাশতা খেতে দিলেন। হাসিনা আপাও সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন। তাঁকে চাচি রান্নাঘরে কিছু একটা দেখতে বললেন, তারপর তাঁর প্রিয় তালপাতার হাতপাখাটি হাতে নিয়ে কথা বলতে লাগলেন। ছোট মেয়েটা (শেখ রেহানা) বারান্দার এমাথা-ওমাথা একটা বল নিয়ে খেলছে। তাকে ধরতে চেষ্টা করলাম, কিছুতেই এল না। চাচি নালিশ করলেন, ‘মেয়েটা ভীষণ জেদি, খাবার সময় বেশি জ্বালায়, খায় না। বকা দিলে বলে, “আব্বা আসে না কেন? আব্বা না এলে খাব না।” আচ্ছা ছোট বুজি কন তো, ও কি বাপকে দেখেছে যে বাপের জন্য জেদ করে? এই মাইয়ে তোর কি বাপ আছে?’ বলেই হাতের পাখাটা উঁচা করলেন, রেহানা ছুটে পালাল।
আব্বু চাচিকে বাড়ির বিষয়ে নানা উপদেশ দিলেন। নানান বিষয়ে প্রশ্ন করলেন। আমি চুপ করে আম্মার চেয়ারের পেছনে দাঁড়িয়ে আছি। এমন সময় হাসিনা আপা আস্তে আস্তে এসে মায়ের পেছনে দাঁড়ালেন। ছোট বুজি আর জলিল ভাইকে পেয়ে চাচি মন খুলে তাঁর সুখ-দুঃখের কথা উজাড় করে দিচ্ছেন। হঠাৎ তিনি চমকে উঠলেন। তারপর ছুটে ভেতরে গেলেন চুলায় রেখে আসা কিছু একটা দেখতে। মনে হয়, ডাল বা ভাত উতরে পড়েছিল। তিনি ঠিকই টের পেয়েছেন।
চুলা বন্ধ করে ফিরে এসে উনি হাতপাখাটা উঁচিয়ে মেয়েকে ধরলেন। ‘এই হাসু, তোরে না কলাম চুলার দিকে একটু খেয়াল রাখতি, তুই এখানে দাঁড়ায়ে আছিস,’ বলেই হাতপাখা তুলে মোক্ষম এক ঘা দিতে উদ্যত হলেন। চোখের পলকে আব্বু তাঁর পাখাসহ হাত ধরে ফেললেন। ‘ভাবি, ভাবি, ও ছোট মানুষ না, ও কি বোঝে..., ’ বলতে বলতে হাত থেকে পাখাটা নিয়ে নিলেন। এখন বুঝি, সেদিন তাঁর অমন ধৈর্যচ্যুতির কারণ।
সারা দিন পুলিশি হয়রানি, অভুক্ত বিশ্রামহীন অবস্থা। তিনি বসলেন বটে, তবে থামলেন না। আব্বুকে পাল্টা প্রশ্ন করলেন, ‘ছোট? তয় কবে বড় হবি? কবে ওর আক্কেল হবি, কোহানে দেব? ওরে কেডা নিবি? কন দেহি?’
কত যে বঞ্চনা, অনিশ্চয়তা, ভোগান্তি, হয়রানি সহ্য করে চাচি চারটি ছেলেমেয়ে (শেখ রাসেলের তখন জন্ম হয়নি) সামলে হাসিমুখে সংসার করেছেন, তা আজকের বাঙালি সমাজ সত্যিই উপলব্ধি করতে পারবে বলে মনে হয় না। স্থিরচিত্তে ভেবে দেখলে বুঝি তাঁর জীবন কেমন ছিল। একেবারে অবুঝকালে নিশ্চয় তিনি দেবর-ননদদের সঙ্গে খেলে দিন কাটিয়েছেন, কিন্তু যে বয়সে আজ সব বাচ্চা স্কুলে যায়, সে বয়স থেকেই তিনি রান্নাঘরের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। কিশোরী থাকতেই সংসারের ভার কাঁধে চেপেছে, যুবতী হতে-না হতেই শুরু হয়েছে সংগ্রামী জীবন স্বামীর অসাধারণ পেশার কারণে। তবে সৃষ্টিকর্তা তাঁকে সেই জীবনের উপযুক্ত করেই গড়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো রাষ্ট্রনায়কের উপযুক্ত সঙ্গিনী ছিলেন বেগম ফজিলাতুন নেছা রেণু। ৩২ নম্বর রোডের এ বাড়িটিতেই হত্যা করা হয়েছিল তাঁকে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি। দেশি-বিদেশি চক্রান্তে নিহত হয়েছিলেন এ দেশের স্থপতি।আজ আমি স্মৃতিচারণা করব বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের। সে দিনগুলো এখনো চোখে ভাসে।
বঙ্গমাতা বা ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে আমি জানতাম মুজিব চাচি বলে। আর আম্মা ডাকতেন ‘রেণু’। আত্মীয়তা, বন্ধুত্ব, রাজনৈতিক সহকর্মী—তিন ধরনের বন্ধনে জড়িয়ে ছিল দুই পরিবার, সেই কলকাতার আমল থেকে। তাই আমি খুব ছোটবেলায় চাচিকে দেখেছি, যখন তাঁর বয়স একেবারেই কম। ঢাকায় এলেই চাচি আমাদের ওয়ারীর বাসায় আসতেন দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে (শেখ হাসিনা ও শেখ কামাল)। আম্মার সঙ্গে বসে মজা করে পান খেতেন আর বলতেন, ‘ছোট বুজির কাছে এলে বাপের বাড়ির আরাম পাই।’ এ কথার অর্থ তখন বুঝতাম না, পরে আম্মার কাছে জেনেছি, ওনার বাপের বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি একটাই। উনি পিতৃ-মাতৃহারা ছিলেন। এটা বোঝার পর মুজিব চাচির জন্য আমার বিশেষভাবে মায়া লাগত।
সেই পঞ্চাশের দশকের প্রথম দিকে চাচি কেমন ছিলেন, তা পরবর্তীকালে তাঁকে যাঁরা দেখেছেন বা যে ছবি সারা দুনিয়া দেখে, তা থেকে কল্পনাও করতে পারবেন না। আমার শিশুচোখে তাঁকে মনে হতো যেন জ্যান্ত একটি ‘জাপানি পুতুল’। ছোটখাটো, পাঁচ ফুটের কম লম্বা, হাত-পা নিখুঁত, মসৃণ, সুডৌল, কবজির, কনুইয়ের বা আঙুলের হাঁড় দেখা যেত না। মুখটাও নিখুঁত ডিম্বাকৃতি। আর গায়ের রং সাদার মধ্যে হঠাৎ কমলার ছোঁয়া। অমন নিখুঁত গোলগাল, মসৃণ সাদার মধ্যে কমলা আভা একমাত্র বড় দোকানের শোকেসে দেখা জাপানি পুতুল ছাড়া আর কোথাও দেখিনি। আমার স্মৃতিতে সেই চমৎকার পুতুলচাচির গায়ের একটি সরু কালো পাড় কমলা রঙের শাড়ি বাঙালি ঢঙে পরা। চাচি বাড়িতে সব সময় ওভাবে শাড়ি পরতেন। তবে ওনার নিজের বাড়িতে বড় হয়ে যখনই গিয়েছি, কখনো সাদা ছাড়া অন্য কোনো শাড়ি পরা অবস্থায় দেখিনি।
আজ একটা দিনের স্মৃতি তুলে ধরতে চাই, যা মুজিব চাচির জীবনের ব্যতিক্রমী দিন নয়; বরং বলা যায় প্রায়ই যেমন কাটত তাঁর দিন, তারই একটি উদাহরণ।
তখন দেশে সামরিক শাসন। আইয়ুব আমল। আমরা বড় হয়েছি, স্কুলে পড়ি। একদিন আব্বু (এম এ জলিল) বললেন, ‘আজ রেণুকে দেখতে যাব। অনেক দিন খোঁজ নিতে পারিনি। তা ছাড়া, নতুন বাড়িতে কী অবস্থায় আছে দেখা দরকার।’ আম্মা (জায়নাব আখতার) আর আব্বু যাচ্ছেন দেখে আমিও বায়না ধরলাম,
চাচির ধানমন্ডির বাসা দেখিনি। আমিও যাব। রিকশায় চড়ে আমরা ওয়ারী থেকে ধানমন্ডি গেলাম।
পড়ন্ত বিকেলে একটা অর্ধসমাপ্ত বাড়ির সামনে আমরা নামলাম। দুই ধাপ সিঁড়ি বেয়ে একটা বারান্দায় উঠলাম। সেখানেই দুটো চেয়ার ছিল। আম্মা আর আব্বু বসলেন, আমি দাঁড়িয়ে চারদিক দেখছি। তখনই চাচিকে দেখলাম। বারান্দাটা বেঁকে পূর্ব-পশ্চিম থেকে উত্তর-দক্ষিণে চলে গেছে। কত দূর তা দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু বেশ কিছু দূরে মুজিব চাচি একটা কাঠের চেয়ারে আমাদের দিকে মুখ করে বসে আছেন। আর ওনার সামনে আমাদের দিকে পেছন ফিরে একটা লোক আরেকটা চেয়ারে বসা। লোকটাকে দেখা যাচ্ছে পেছন থেকে, তিনি আমাদের দেখতে পাচ্ছেন না। কিন্তু চাচি আমাদের দেখেছেন। তিনি হেসে হাত ইশারা করে আমাদের বসতে বললেন। কিন্তু উনি উঠে এলেন না।
আব্বু ব্যাপারটা বুঝে ফেলেছেন। আস্তে আস্তে বললেন, ‘দেখেছ, পুলিশের লোক এসে বিরক্ত করছে।’ আমরা অনেকক্ষণ বসে রইলাম। লোকটা যায় না। চাচি বারবার হাত তুলে ইশারা করছেন যেন বসি। ঘণ্টাখানেক পর তিনি লোকটাকে বিদায় করে আমাদের কাছে এলেন। ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে এসেছে।
একটা মোড়া নিয়ে এসে চাচি আমাদের সামনে বসলেন। এখানে বলে রাখি, মুজিব চাচা তখন জেলে। অনেক দিন। নতুন বাড়িটিও শেষ করতে পারেননি। সেই আধা তৈরি বাড়িতেই চাচি ছেলেমেয়েদের নিয়ে থাকছেন। তিনি বলতে লাগলেন সব কথা। ওই লোকটা ডিবি বা সরকারের গোয়েন্দা বিভাগের লোক। প্রায়ই আসে। আজ নাকি বেলা ১১টার দিকে এসেছে। আর যায়নি। আমরা যাওয়াতে কোনোমতে মেহমান বসে আছে বলে সন্ধ্যায় তাঁকে বিদায় করা গেল।
আম্মাকে নিজের মলিন শাড়িটি দেখিয়ে চাচি বললেন, সারা দিন গোসল করতে পারেননি। কাপড় বদলাতে পারেননি। খাওয়া হয়নি। লোকটা তাঁকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। চাচি ম্লান মুখে হেসে বললেন, ‘ও ভেবেছে আমি ক্লান্ত হয়ে হঠাৎ কিছু বলে ফেলব, যার সূত্র ধরে ওরা আপনার ভাইকে আরও বেকায়দায় ফেলতে পারবে। আমি সবই বুঝি।’
কথা বলতে বলতে তিনি কয়েকবার উঠে পাকঘরে গেলেন, আবার আমাদের হাতে বানানো পায়েস, মোরব্বা ইত্যাদি নাশতা খেতে দিলেন। হাসিনা আপাও সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন। তাঁকে চাচি রান্নাঘরে কিছু একটা দেখতে বললেন, তারপর তাঁর প্রিয় তালপাতার হাতপাখাটি হাতে নিয়ে কথা বলতে লাগলেন। ছোট মেয়েটা (শেখ রেহানা) বারান্দার এমাথা-ওমাথা একটা বল নিয়ে খেলছে। তাকে ধরতে চেষ্টা করলাম, কিছুতেই এল না। চাচি নালিশ করলেন, ‘মেয়েটা ভীষণ জেদি, খাবার সময় বেশি জ্বালায়, খায় না। বকা দিলে বলে, “আব্বা আসে না কেন? আব্বা না এলে খাব না।” আচ্ছা ছোট বুজি কন তো, ও কি বাপকে দেখেছে যে বাপের জন্য জেদ করে? এই মাইয়ে তোর কি বাপ আছে?’ বলেই হাতের পাখাটা উঁচা করলেন, রেহানা ছুটে পালাল।
আব্বু চাচিকে বাড়ির বিষয়ে নানা উপদেশ দিলেন। নানান বিষয়ে প্রশ্ন করলেন। আমি চুপ করে আম্মার চেয়ারের পেছনে দাঁড়িয়ে আছি। এমন সময় হাসিনা আপা আস্তে আস্তে এসে মায়ের পেছনে দাঁড়ালেন। ছোট বুজি আর জলিল ভাইকে পেয়ে চাচি মন খুলে তাঁর সুখ-দুঃখের কথা উজাড় করে দিচ্ছেন। হঠাৎ তিনি চমকে উঠলেন। তারপর ছুটে ভেতরে গেলেন চুলায় রেখে আসা কিছু একটা দেখতে। মনে হয়, ডাল বা ভাত উতরে পড়েছিল। তিনি ঠিকই টের পেয়েছেন।
চুলা বন্ধ করে ফিরে এসে উনি হাতপাখাটা উঁচিয়ে মেয়েকে ধরলেন। ‘এই হাসু, তোরে না কলাম চুলার দিকে একটু খেয়াল রাখতি, তুই এখানে দাঁড়ায়ে আছিস,’ বলেই হাতপাখা তুলে মোক্ষম এক ঘা দিতে উদ্যত হলেন। চোখের পলকে আব্বু তাঁর পাখাসহ হাত ধরে ফেললেন। ‘ভাবি, ভাবি, ও ছোট মানুষ না, ও কি বোঝে..., ’ বলতে বলতে হাত থেকে পাখাটা নিয়ে নিলেন। এখন বুঝি, সেদিন তাঁর অমন ধৈর্যচ্যুতির কারণ।
সারা দিন পুলিশি হয়রানি, অভুক্ত বিশ্রামহীন অবস্থা। তিনি বসলেন বটে, তবে থামলেন না। আব্বুকে পাল্টা প্রশ্ন করলেন, ‘ছোট? তয় কবে বড় হবি? কবে ওর আক্কেল হবি, কোহানে দেব? ওরে কেডা নিবি? কন দেহি?’
কত যে বঞ্চনা, অনিশ্চয়তা, ভোগান্তি, হয়রানি সহ্য করে চাচি চারটি ছেলেমেয়ে (শেখ রাসেলের তখন জন্ম হয়নি) সামলে হাসিমুখে সংসার করেছেন, তা আজকের বাঙালি সমাজ সত্যিই উপলব্ধি করতে পারবে বলে মনে হয় না। স্থিরচিত্তে ভেবে দেখলে বুঝি তাঁর জীবন কেমন ছিল। একেবারে অবুঝকালে নিশ্চয় তিনি দেবর-ননদদের সঙ্গে খেলে দিন কাটিয়েছেন, কিন্তু যে বয়সে আজ সব বাচ্চা স্কুলে যায়, সে বয়স থেকেই তিনি রান্নাঘরের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। কিশোরী থাকতেই সংসারের ভার কাঁধে চেপেছে, যুবতী হতে-না হতেই শুরু হয়েছে সংগ্রামী জীবন স্বামীর অসাধারণ পেশার কারণে। তবে সৃষ্টিকর্তা তাঁকে সেই জীবনের উপযুক্ত করেই গড়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো রাষ্ট্রনায়কের উপযুক্ত সঙ্গিনী ছিলেন বেগম ফজিলাতুন নেছা রেণু। ৩২ নম্বর রোডের এ বাড়িটিতেই হত্যা করা হয়েছিল তাঁকে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫