Ajker Patrika

অভিনব প্রতিবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২: ৫৯
অভিনব প্রতিবাদ

রাজধানীর পূর্ব জুরাইনের একটি গলিতে ফাতেমার (৩৫) চায়ের দোকান ছিল। একটু অবসর পেলেই সেখানে ছুটে যেতেন অনেকে। দিনরাত চায়ের কাপ হাতে চলত আড্ডা। সেই দোকানের দুধের কৌটা, চায়ের কাপ আর চামচ—সবকিছুই আছে। শুধু নেই চা বানিয়ে দেওয়া মানুষটি। গত আগস্টের মাঝামাঝি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ফাতেমা।

গতকাল বৃহস্পতিবার হাইকোর্টসংলগ্ন কদম ফোয়ারা চত্বরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত ব্যক্তিদের এমন সব স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে সচেতন নাগরিক সমাজ। আয়োজকদের দাবি, এই স্মৃতিচিহ্ন যেন নগর জাদুঘরে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন মোট ১৪ হাজার ৮৩১ জন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫৭ জন।

স্মৃতিচিহ্ন প্রদর্শনীতে ফাতেমা বেগমের চায়ের কাপ ও দুধের কৌটা ছাড়াও সংবাদকর্মী আবুল কালাম আজাদ বিপ্লবের টি-শার্ট ও মগ উপস্থাপন করা হয়। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্মৃতিচিহ্নের মধ্যে ছিল সেলুন দোকানি রণজিতের চিরুনি ও কাঁচি, আর্টিস্ট রুবেলের তুলি, সুমন উদ্দিনের ডেঙ্গু পজিটিভ সার্টিফিকেট, জামাল মিয়ার টুপিসহ প্রায় ১৯ জনের ব্যবহৃত জিনিসপত্র।

সচেতন নাগরিক সমাজের সমন্বয়ক জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘ডেঙ্গুতে অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন, অনেকে মারা গেছেন। জুরাইনে কমপক্ষে ২০ জন মারা গেছেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর সিটি করপোরেশনের যে দরদ নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল, তারা তা করেনি। মানুষের খোঁজ নেয় না তারা। জাতির এ দুঃসময়ে মেয়র (শেখ ফজলে নূর তাপস) দেশে নেই। বড় কর্মকর্তারাও ভ্রমণে গেছেন ঢাকার বাইরে। এটা মানুষের প্রতি তাঁদের অবজ্ঞা। তাঁরা এড়িয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের আচরণ দেখে মনে হয় ডেঙ্গু গত বছর এসেছে। ডেঙ্গু নিয়ে তাঁদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই।’

মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়াদের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়েও সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপে ঘাটতি আছে।’

আল মদিনা মসজিদসংলগ্ন সেলুন দোকানি রণজিৎ আক্রান্ত হয়েছিলেন ডেঙ্গুতে। তিনি বলেন, ‘আমি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে ছিলাম। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে আমার পরিবার ঋণ করে চিকিৎসার খরচ বহন করেছে। সিটি করপোরেশন একটু দায়িত্ব নিয়ে কাজ করলে আমাদের পরিবারগুলো এমন ভুক্তভোগী হতো না।’

ডেঙ্গু আক্রান্ত মেয়ে অলকৃতার (৫) ফ্রক নিয়ে কদম ফোয়ারা চত্বরে এসেছেন বাবা পলাশ দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘আক্রান্ত হওয়ার পর মেয়েকে সাত দিন হাসপাতালে রাখতে হয়েছে। আমাদের প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। একমাত্র মেয়ের দুরবস্থা দেখে চোখে অন্ধকার দেখছি।’

এদিকে ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ার কারণ হিসেবে মানুষের সচেতনতার অভাবকে দায়ী করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘মশা নিয়ন্ত্রণে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। জনগণ সচেতন না হলে পুরোপুরি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। মানুষ সচেতন হলে স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতিতে আনা যেত।’

সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের চেয়ারম্যান ও কীটতত্ত্ববিদ ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘উচ্চপর্যায়ের সংক্রমণে ঢাকার পরিস্থিতি এখন বেশ ভয়াবহ। তবে অক্টোবরের মাঝামাঝি প্রাকৃতিক কারণেই ডেঙ্গু কমে আসবে। বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্তের হিসাবে ব্রাজিলের পর বাংলাদেশের অবস্থান।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত