রজত কান্তি রায়
২০১০ সালে একটি মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিনোদন জগতে যাত্রা করেছিলেন বীথি সরকার। টেলিভিশন মাধ্যমে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের নাটকে অভিনয় করেছেন। অভিনয় করেছেন কয়েকটি চলচ্চিত্রেও। সম্প্রতি শুটিং ও ডাবিং শেষ করেছেন গিয়াস উদ্দিন সেলিমের চলচ্চিত্র ‘গুনিন’-এর। বীথি সরকারের সঙ্গে চলচ্চিত্র, অভিনয়, বিয়ে—এসব নিয়ে কথা বলেছেন রজত কান্তি রায়।
শুরুটা করেছেন কবে?
বীথি: শুরুটা ছিল ২০১০-এ। আমার প্রথম পরিচালক ছিলেন অমিতাভ রেজা। আমার ফার্স্ট কাজ গ্রামীণফোনের টিভিসি। শুরু যখন করি, তখন ইন্টারমিডিয়েট পাসও করিনি। পরীক্ষার পরপরই শুরু করি। আমার বাবা আর্মিতে ছিলেন। সেই সুবাদে ঝিনাইদহে থাকতাম। বাবা যখন রংপুরে বদলি হয়ে আসেন, তখন আমি ঢাকায় চলে আসি।
মিডিয়াতে কীভাবে এলেন?
বীথি: এটা মজার গল্প। কেউ বিশ্বাস করবে না। তবে এটাই গল্প। আমি ছবি তুলিয়েছিলাম চঞ্চল মাহমুদের কাছে। আমার কাছ থেকে ছবি তোলার পেমেন্ট ছাড়াও আরেকটা পেমেন্ট নেওয়া হয়। ওখানে লেখা ছিল, ওরা বারোটা এজেন্সিকে আমার ছবি পাঠাবেন। এক্সট্রা পেমেন্ট করে আমি চলে আসি। দু-আড়াই মাস পরও কোনো ফিডব্যাক আসেনি। একদিন ভাবলাম, ঢাকায় চলে যাই। বাসা থেকে বেরিয়ে এক কাপড়ে চলে আসি ঢাকায়। তারপর বাবাকে ফোন দিয়ে বলি, আমি ঢাকায় চলে আসছি। উদ্দেশ্য ছিল—এখানকার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। তখন আমার ইন্টারমিডিয়েটের রেজাল্ট হয়নি। আড়াই মাস হয়ে গেছে। তিন মাসের দিকে রেজাল্ট দেবে। রেজাল্ট পেলে শান্তা মরিয়মে বা বিজিএমইতে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে ভর্তি হব—এটা আমার টার্গেট।
অনেক দিন ধরে ছবিগুলোর কোনো ডাক না আসায় যন্ত্রণা পাচ্ছিলাম। নিশ্চয় কোনো সমস্যা হয়েছে। ওই ছবিগুলোতে ঠিকানা লেখা ছিল। সব ঠিকানা নোট করলাম; গুলশান, বনানী, উত্তরা, ধানমন্ডি। প্রথম দিন বনানী গেলাম। সেখানে গিয়ে বুঝলাম, যে ১২টি জায়গায় ছবি পাঠানোর কথা, সেখানে তা পাঠানো হয়নি। কারণ, ছবি তিন মাস আগে তোলা। যখন হেঁটে হেঁটে মোটামুটি হতাশ, তখন আমি ‘হাফ স্টেপ ডাউন’-এর সামনে। ‘হাফ স্টেপ ডাউন’ অমিতাভ ভাইয়ের। এটা এখন নিকেতনে। আগে ছিল বনানীতে। অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই আমি ঢুকতে চাচ্ছিলাম।
দারোয়ান আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে কিনা। আমি জানালাম নেই। তারপর তাঁকে বললাম, ‘একটু ঢুকতে দেন। কথা বলে চলে যাব।’ আমার সঙ্গে আমার বন্ধু ছিল। আমি এখানে তাঁর বাসায় উঠেছি। বাবা মানতে পারেননি আমার ঢাকায় আসা। তিনি আমাকে কারমাইকেলেই পড়াতে চেয়েছেন। আমার দুইটা জেদ ছিল—এক, মিডিয়াতে কাজ করা; আর দুই, ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে পড়া।
তো দারোয়ানের সঙ্গে তুমুল ঝগড়া করছিলাম। বলেছি, ‘ভেতরে ঢুকতে না দিলে আমি যাব না এখান থেকে। আপনি ভেতরে গিয়ে বলেন, রংপুর থেকে এক মেয়ে দেখা করতে এসেছে।’ তখন জানি না অমিতাভ রেজা কত বড় মাপের ডিরেক্টর। জানি যে, তিনি ভালো কাজ করেন। আমার তাঁকে ভালো লাগে। সেইম টাইমে ভাইয়া বের হচ্ছিলেন। তিনি এলেন। রাশেদ জামান এলেন। ভাইয়া জানতে চাইলেন, ‘এখানে কী হয়েছে, কীসের গ্যাঞ্জাম। ওদের ভেতরে আসতে দাও।’ আমাকে বলেছেন, ‘কী হয়েছে বাবা?’ বললাম, ‘ভাইয়া আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই। কিন্তু দারোয়ান দিচ্ছে না।’ তিনি জানতে চাইলেন, ‘আচ্ছা, তুমি কী করতে চাও?’ আমি জানালাম, তাঁর সঙ্গে টিভিসিতে কাজ করতে চাই। বলেছি, ‘আপনার কাজ অনেক ভালো লাগে।’ তিনি বলেন, ‘তুমি করতে পারবা?’ বললাম, ‘হ্যাঁ, আপনি দিলে করতে পারব।’ তিনি বললেন, ‘আচ্ছা, ঠিক আছে। একটু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছবি ওঠাও তো।’
রাশেদ ভাইয়ের কাছে ক্যামেরা ছিল। তিনি র্যান্ডমলি কিছু ক্লিক করলেন। অমিতাভ ভাইও কিছু ডিরেকশন দিলেন। ঠিক সেটাই করলাম। বৃষ্টি পড়ছিল। তখন বৃষ্টিধরার কিছু ছবি নিলেন। তখন তিনি ভিডিও ক্লিপ নিলেন। বললেন, ‘ভিডিওতে তোমার নাম বল, কী পড়ালেখা করো, কোথা থেকে আসছ?’ আমি সেভাবেই বললাম। তার পর তিনি বললেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে যাও। তোমাকে লাগলে জানাব।’ ফোন নম্বর নিলেন তিনি। চলে আসলাম। বাইরে খাওয়া-দাওয়া করে বিকেলে বাসায় যাচ্ছিলাম। ৫টার দিকে ফোন দিয়ে বললেন, ‘আবার কালকে অফিসে এসো।’
পরদিন গেলাম। যাওয়ার পর বিপুল নামের এক ভাই আমার হাতে স্ক্রিপ্ট ধরিয়ে দিলেন। বলেন, ‘এটা হলো তোমার জন্য গ্রামীণফোনের টিভিসি আর আমাদের ফিল্ম। এই নাও স্ক্রিপ্ট। পড়। আমি পড়লাম। একটা গ্রামের মেয়ে বসে আছে মন খারাপ করে। তার স্বামী বিদেশে থাকে। আমি বললাম, ‘আচ্ছা। পারব।’ তিনি বললেন, ‘পারবা?’ আমি বলে ফেলি, ‘এখানে তো কিছুই নাই। আমাকে তো কিছুই করতে হবে না। পারব না কেন?’ তিনি বললেন, ‘কিছুই নাই! এত কনফিডেন্স? তোমার সঙ্গে অমিতাভ ভাইয়ের কী সম্পর্ক?’ বললাম, ‘অমিতাভ রেজাকে আমি চিনিও না।’ তিনি বললেন, ‘তাহলে তোমাকে কেন কাস্ট করল?’ বললাম, ‘আমি তো জানি না। কালকেই প্রথম দেখা হলো।’
যেদিন অমিতাভ ভাইয়ের সঙ্গে আমার দেখা হলো, সেদিন ছিল ২ তারিখ। আমাকে অফিসে পুনরায় ডাকল ৩ তারিখ। সেদিন আমাকে স্ক্রিপ্ট দিল। ওদের টিভিসির শুট ছিল ৭ তারিখ। তারা দিনাজপুরে যাবে ৬ তারিখে। এর আর্টিস্ট ঠিক করা ছিল। খুব সুপরিচিত একজন। কিন্তু আমাকে দেখার পর ভাইয়ার মনে হলো—তিনি যে গল্পের মানুষটাকে খুঁজছিলেন, সে হয়তো আমি। তিনি সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন। তো তিনি আমাকে কেন কাস্ট করলেন সেই কৈফিয়ত আজ পর্যন্ত কাউকেই দিতে পারিনি।
তারপর আমরা ৬ তারিখে শুটিংয়ে গেলাম। এগারো দিন আমরা গ্রামীণফোনের শুট করলাম।
তখন অনেক ভালো কাজ হতো। দারুণ দারুণ টিভিসি হয়েছে সে সময়।
বীথি: হ্যাঁ। ১১ দিন পর আমাকে আর কিছুই করতে হয় নাই। সব বড় বড় বিলবোর্ডে আমি, আর আমি। কেউ কাউকে ফোন করলে ‘আমারে ছাড়িয়া বন্ধু কই রইলা রে’ গান। কিন্তু আমাকে সামনে এক, স্ক্রিনে অন্যরকম লাগত দেখতে। সে জন্য কেউ বুঝতে পারত না।
এমনও হয়েছে, নিজের কাছে গুছিয়ে রাখার জন্য নিজেই পত্রিকা কিনতে গেছি। পত্রিকার দোকানে গিয়ে পত্রিকার পাতা খুলে নিজেই নিজেকে দেখছিলাম। এত বড় বড় করে ফিচার হয়েছে। অনেকগুলো ম্যাগাজিনে কাভার হয়েছে। এমনও হয়েছে যে, পত্রিকা কিনছে, সে আমার ছবির জন্যই পত্রিকা কিনছে।
প্রথম টাকা পেয়ে কী করেছেন?
বীথি: আমি টিভিসির সম্মানীর টাকা দিয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হই। ভর্তি হয়েছিলাম শান্ত মারিয়মে। বাবা চেয়েছিলেন বিবিএ পড়াতে।
সম্মানী কত ছিল?
বীথি: ৩০ হাজার টাকা। আমার ভর্তি ফি ছিল ২৯ হাজার ৫০০ টাকা। বিজ্ঞাপনের পর গ্রামীণফোনের ব্যাপক প্রচার হলো। ওরা আমাকে ২ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ করে। তখন আমি নতুন। আমাকে যা বলবে তাই করব। আই ডোন্ট হ্যাভ এনি গডফাদার। মিডিয়া সম্পর্কে কোনো আইডিয়াই নাই। তো আমিও করে ফেললাম। এর মাঝখানে জুঁইসহ নানা তেল-শ্যাম্পু-সাবান আমাকে খুঁজল। আমি সরি বলে দিলাম। গ্রামীণফোন চুক্তি ভিত্তিতে আমাকে তিন মাস পরপর টাকা দিয়ে দিত। তখন বুঝতে পারিনি, আমার ক্যারিয়ারটা আমি খেয়ে ফেলছি। যাদের আমি র্যান্ডমলি না করে গেছি, দুই বছর পর তারা আমাকে আর খোঁজেনি।
এর পর আপনি টেলিভিশন নাটকের দিকে এলেন?
বীথি: বিজ্ঞাপন যাওয়ার দ্বিতীয় দিন থেকে আমি নাটক করি। ফার্স্ট সিঙ্গেল নাটক ছিল হিল্লোল ভাইয়ের সঙ্গে। সজল আহমেদ ছিলেন ডিরেক্টর। ওই নাটকের তিন দিন পর শিমুল সরকারের ‘ডাইরেক্টর’ ধারাবাহিক করি। এটা আরটিভিতে প্রচারিত হয়েছিল। তখন ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম। সিরিয়ালও শুরু করেছি। শুধু টিভিসি বাদে আমি সব কাজ করতাম। এরপর আমি প্রচুর নাটক করেছি। আমি অনেকগুলো সিনেমাও করেছি। সবগুলো কম বাজেটের।
প্রথম সিনেমা তো ছিল হেডমাস্টার?
বীথি: ২০১৩ সালে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত সিনেমা ‘হেডমাস্টার’ করেছিলাম। সেখানে আলমগীর স্যার ছিলেন, সুবর্ণা মোস্তফা ছিলেন।
আলমগীর, সুবর্ণা মোস্তফা থাকার পরও এটা লো বাজেটের মুভি হয় কী করে?
বীথি: অনুদানের ছবি ছিল। আমি যাদের ছবি করেছি তাদের একটাই প্রবলেম, তারা পাবলিসিটি করে না। ইনফ্যাক্ট আমি শাকিব খানের সঙ্গেও ছবি করেছি। নাম সত্তা। সেখানে পাউলি দাম লিড ক্যারেক্টার।
সেই অর্থে আপনি পাবলিসিটি পেলেন না কেন?
বীথি: সত্তায় তো পাউলি দাম লিড ক্যারেক্টার। সেখানে আমি জার্নালিস্টের ক্যারেক্টার করেছি। (সিনেমায়) পাউলি দাম মারা যাওয়ার পর আমার ক্যারেক্টার আসে। তা ছাড়া অনেকগুলো ইন্টারনাল প্রবলেম ছিল।
টেলিভিশন নাটক থেকে সিনেমাতে শিফট করার কারণ কী?
বীথি: তিন বছর আগে আমি নিজস্ব ফ্যাশন হাউস দিই গুলশান ১-এর পুলিশ প্লাজায়। নাম কুইন্স ক্লোজেট। যেহেতু অনেক টাকা ইনভেস্ট করে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে পড়েছি, তাই এটা নিয়ে আমার শখ ও স্বপ্ন আছে। জব তো করতে পারতাম না। নিজে কিছু করতে চেয়েছি। পুলিশ প্লাজায় শোরুম দিয়ে, নিজে ডিজাইন করে কাজ শুরু করলাম। বাইরে থেকে ড্রেস আনা, শো রুম চালানো, শুটিং সবকিছু ছিল। বুঝতে পারলাম শুটিংয়ের পেছনে দৌড়ালে এটা দাঁড়াবে না। ডিজাইনিং ও কালেকশনে ফোকাস করলাম। একাই সব করতাম। প্রফিটও অনেক ভালো। পার ডে যা প্রফিট হয়, সেটা বিশাল। তখন মিডিয়ার মানুষ, কাজগুলো—আমার কাছে ঝাপসা হতে লাগল। মনে হলো, মিডিয়াতে সব গতানুগতিক কাজ হচ্ছে। খুব বেশি ভেরিয়েশনের কাজ পাই নাই। তখন মনে হয়েছে, একই জিনিস প্রতিদিন করার চেয়ে আমি আমার প্রতিষ্ঠানে ফোকাস করি। এটা একদিন বড় হবে। আমি যেহেতু ডিজাইনার, আমি মালিক; আমাকে তো ফোকাস দিতে হবে।
যখন দেখলাম, আমার প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক টাকা আসছে, তখন ভাবলাম এত কম টাকার বিনিময়ে অখাদ্য প্রোডাকশনের কাজ করছি! কাজ করা বাদ দিলাম। এর পর যখন ফোন আসত, তখন না করে দিলাম। এখনো পর্যন্ত ‘না’ রয়ে গেছে তাদের মধ্যে।
এখন তো সিনেমা করছেন...
বীথি: এখন আমি আবার অনেক কাজ করছি। মার্চে আমি বিয়ে করেছি। আট মাস চলছে। সব মিলিয়ে সংসার গোছানোর চেষ্টা করছি। সবাই বলত, সেটল হও। আমি সেটল হয়ে গেছি। এখন সব মিলিয়ে কাজ নিয়ে থাকতে চাই।
এই কাজ বলতে কোনটাকে বোঝাচ্ছেন? আপনার প্রতিষ্ঠান নাকি মিডিয়া?
বীথি: প্রতিষ্ঠান বা মিডিয়া না। আমি যেটা করতে চাই। এখন আমার প্রতিষ্ঠান অফ আছে। কারণ, এক বছর ভালো চলার পর দ্বিতীয় বছর থেকে করোনা শুরু হলো। তাই দোকানটা অফ করেছি। আবার আমি ফ্রি হয়ে যাই।
‘গুনিন’ নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
বীথি: আমার শেষ সিনেমার নাম ‘গুনিন’। পরিচালনা করেছেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম। এ ছবিতে পরীমণি খুব ভালো কাজ করেছেন। শরীফুল রাজ, মুস্তফা মনোয়ার, ইরেশ যাকের কাজ করেছেন। গুনিন ক্যারেক্টারটা পাভেল ভাই করেছেন। গুনিন খুব সিম্পল একটা ছবি। এটা দেখতে বসলে আপনাকে মেথড অ্যাক্টিং জানতে হবে না। এটা হলে কিংবা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে দেখতে পারবেন। এটা চরকির প্রোডাকশন। সহজে সুন্দর সময় কাটবে আপনার। মজা আছে, ভালোবাসা আছে, গ্রাম্য পলিটিকস আছে।
গিয়াস উদ্দিন সেলিমের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
বীথি: তাঁর সঙ্গে প্রথম কাজ করেছি। তাঁকে চিনি ১০ বছর ধরে। আগেও কাজের কথা হয়েছিল। টাইম মেলেনি। এই প্রথম কাজ করা হলো। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি একটা শুদ্ধ প্রোডাকশনের বা শুদ্ধ ডিরেকশনের কাজ করেছি। গিয়াস উদ্দিন সেলিম ভাই খুব কমফোর্টেবল ডিরেক্টর। তিনি কাজ আদায় করে নিতে পারেন। আমার ছোট্ট ক্যারেক্টার ছিল। তিনি আমাকে বলেছেন, ‘তুই কর, নিশ্চয় ভালো লাগবে।’
শুট করেছেন কত দিন?
বীথি: আমি এটার শুট করেছি ৭-৮ দিন। ছবির টোটাল শুটিং হয়েছে ২৫ দিনের মতো। অর্ধেক শুটিং করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, বাকিটা হয়েছে মানিকগঞ্জে। মানিকগঞ্জের শুটে আমি ছিলাম।
সম্প্রতি বিয়ে করেছেন...
বীথি: করোনা না এলে হয়তো বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতাম না। করোনা আমাকে এমন একটা প্যারা দিয়েছে যে, বলার মতো না। আমার জীবনটা ইনসিকিউর, বাবা-মা অনেক দূরে থাকেন। করোনার শুরুর দিকে তো হাসপাতালেই যেতে পারতাম না। তখন বুঝতে পারি আমার কাছের একজন মানুষ দরকার, যে বিপদে-আপদে সব সময় পাশে থাকবে। তখন সিদ্ধান্ত নিই—বিয়েটা করে ফেলা ভালো। বিয়ে করা নিয়ে এত ভয়ে থাকার কিছু নেই। বর ও বউ দুজনেই যদি সাপোর্টিভ হয়, তাহলে দুজনই ভালো থাকতে পারে। আমার হাসব্যান্ড জার্নালিস্ট। আমার চেয়ে বেশি আমাকে পুশ করে কাজের জন্য। ওর পুশ না থাকলে হয়তো কাজ করলে করলাম, না করলে নাই। ও আমাকে সাজেশন দেয়।
আপনার এই ৭/ ৮ মাসের বিবাহিত জীবনের অভিজ্ঞতা কী?
বীথি: ভালো। একজন সাধারণ মানুষ বিয়ে করলে যা হয়, একদম তাই-ই। স্পেশাল কিছু নেই। আমি সংসারের বড় মেয়ে। আমরা পাঁচ ভাইবোন। ওরা সবাই আমার কথা শুনত। আমাকে কথা শোনানোর মতো কেউ ছিল না। এখন আমাকে কথা শোনানোর মতো কেউ আছে। সে ফ্যামিলির বড়। ফ্যামিলির গার্ডিয়ান। তার কথা আমাকে শুনতে হয়।
তিনি...
বীথি: দেবাশীষ রঞ্জন সরকার। তিনি মূলত একজন এনজিওকর্মী। একটি আন্তর্জাতিক এনজিওতে মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগে কাজ করেন। আর সন্ধ্যায় যমুনা টেলিভিশনের নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবে কাজ করেন। জার্নালিজমের সঙ্গে ১৭-১৮ বছর ধরে যুক্ত।
২০১০-এর ‘আমারে ছাড়িয়া বন্ধু কই গেলা রে’...
বীথি: আমি বুঝতেই পারিনি কখন কী হয়ে গেছে। এখন ২০২১ সালের শেষের দিক। এখনো ২০১০ সালের যে কেউ আমাকে রিকল করতে পারেন। বলেন, ওই যে গ্রামীণফোনের বীথি। এর পর আমার কোনো কাজ এটাকে ছুঁতে পারেনি। প্রথম কাজটাতেই এক্সপেক্টেশনের থেকে অনেক বেশি কিছু পেয়ে গেছি। মানুষের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি।
পরবর্তী পরিকল্পনা কী?
বীথি: ওটিটি। অনেকগুলো প্ল্যাটফর্ম আছে। আমি সবগুলোতেই কাজ করতে চাই। দেশে ও দেশের বাইরে কাজ করতে চাই। কাজের পরিধি বাড়াতে চাই। আমি ব্যবসা বন্ধ রেখে অভিনয়ে মনোনিবেশ করেছি। আমি চাই ধীরে ধীরে হলেও ভালো একটা জায়গায় পৌঁছাতে।
ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কনটেন্টগুলো ডার্ক হয়, ভায়োলেন্স থাকে...
বীথি: আমি জানি না আসলে। হয়তো মানুষ এগুলো দেখতে পছন্দ করে। আমিও যে দেখি না, তা নয়। তবে কাজ হচ্ছে তো। সেটাই বড় কথা।
আমাদের এখানে তো অনেক ট্যাবু আছে এসব বিষয় নিয়ে।
বীথি: আর্টিস্ট হিসেবে আমাকে আমার কাজের জায়গাটা পছন্দ করতে হবে। জনগণ আমাকে কোথায় দেখতে বেশি ভালোবাসে। আমি সে কাজটা করব না, যেখানে আমাকে ভালো লাগবে না। আর্টিস্টরা নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হলেই হয়। আমিও শুনেছি ওটিটির সমালোচনা। দুইটা কাজ সমালোচিত হলেও, ২০টা কাজ তো ভালো-ও। এর মাধ্যমে আর্টিস্টদের কাজ বাড়বে। এমনিতে তো আর্টিস্টদের কাজ কমে গেছে।
সম্প্রতি ‘বলি’ মুক্তি পেয়েছে। ‘বলি’ কিন্তু ভালো হয়েছে।
বীথি: আমাদের ডিরেক্টরদের সমস্যা হচ্ছে, তাঁরা নিজের গণ্ডির বাইরের কাউকে কাস্ট করেন না। অন্যদের কাজের সুযোগ দেওয়া হয় না। কিংবা ভয় পায়। এখন কিন্তু বাঁধন আপু খুব ভালো করছেন। তিনি আগেও ভালো করতে পারতেন। এটা তো আর্টিস্টের হাতে না। ডিরেক্টরের হাতে।
আপনার কামব্যাক, ফিল্ম, ওটিটি, বিবাহিত জীবন—সবকিছুর জন্য শুভকামনা।
বীথি: থ্যাংক ইউ। আমার মা তো গৃহিণী। স্কুলে থাকতে আমি সকালে স্কুলে যেতাম, বিকেলে স্কুল থেকে ফিরতাম। সকালে যখন যেতাম, তখন দেখতাম তিনি রান্না করছেন। ফিরেও দেখতাম, তিনি রান্না করছেন। তখন ভাবতাম, রান্না ছাড়া জীবনে কি আর কিছু নেই? মনে হতো, একজন মানুষ সারা জীবন রান্না করে কীভাবে কাটায়! তখন নিজেই নিজেকে বলতাম, আমি জীবনে অনেক কিছু করব। শুধু রান্নার মধ্যেই জীবন সীমাবদ্ধ নয়। আমি করেছি অনেক কিছুই। বাংলাদেশের বড় বড় পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি। এখন আমি বাইরের দেশের দিকে তাকাতে পারি। সৃজিত দা, শিবু দা, অঞ্জন দত্তের সঙ্গে কাজ করতে চাই। কাজটা কেউ দেখুক না দেখুক, আমি চাই কাজটা যেন করে যেতে পারি। কাজটা শিখতে চাই। এমন টিচারের হাতে পড়তে চাই, যারা আমাকে শিখিয়ে আমার কাছ থেকে কিছু বের করে নেবে। আমার অনেক কিছু হয়েছে, কিন্তু অনেক কিছু করার বাকি।
অনেক ধন্যবাদ বীথি।
বীথি: ধন্যবাদ।
২০১০ সালে একটি মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিনোদন জগতে যাত্রা করেছিলেন বীথি সরকার। টেলিভিশন মাধ্যমে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের নাটকে অভিনয় করেছেন। অভিনয় করেছেন কয়েকটি চলচ্চিত্রেও। সম্প্রতি শুটিং ও ডাবিং শেষ করেছেন গিয়াস উদ্দিন সেলিমের চলচ্চিত্র ‘গুনিন’-এর। বীথি সরকারের সঙ্গে চলচ্চিত্র, অভিনয়, বিয়ে—এসব নিয়ে কথা বলেছেন রজত কান্তি রায়।
শুরুটা করেছেন কবে?
বীথি: শুরুটা ছিল ২০১০-এ। আমার প্রথম পরিচালক ছিলেন অমিতাভ রেজা। আমার ফার্স্ট কাজ গ্রামীণফোনের টিভিসি। শুরু যখন করি, তখন ইন্টারমিডিয়েট পাসও করিনি। পরীক্ষার পরপরই শুরু করি। আমার বাবা আর্মিতে ছিলেন। সেই সুবাদে ঝিনাইদহে থাকতাম। বাবা যখন রংপুরে বদলি হয়ে আসেন, তখন আমি ঢাকায় চলে আসি।
মিডিয়াতে কীভাবে এলেন?
বীথি: এটা মজার গল্প। কেউ বিশ্বাস করবে না। তবে এটাই গল্প। আমি ছবি তুলিয়েছিলাম চঞ্চল মাহমুদের কাছে। আমার কাছ থেকে ছবি তোলার পেমেন্ট ছাড়াও আরেকটা পেমেন্ট নেওয়া হয়। ওখানে লেখা ছিল, ওরা বারোটা এজেন্সিকে আমার ছবি পাঠাবেন। এক্সট্রা পেমেন্ট করে আমি চলে আসি। দু-আড়াই মাস পরও কোনো ফিডব্যাক আসেনি। একদিন ভাবলাম, ঢাকায় চলে যাই। বাসা থেকে বেরিয়ে এক কাপড়ে চলে আসি ঢাকায়। তারপর বাবাকে ফোন দিয়ে বলি, আমি ঢাকায় চলে আসছি। উদ্দেশ্য ছিল—এখানকার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। তখন আমার ইন্টারমিডিয়েটের রেজাল্ট হয়নি। আড়াই মাস হয়ে গেছে। তিন মাসের দিকে রেজাল্ট দেবে। রেজাল্ট পেলে শান্তা মরিয়মে বা বিজিএমইতে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে ভর্তি হব—এটা আমার টার্গেট।
অনেক দিন ধরে ছবিগুলোর কোনো ডাক না আসায় যন্ত্রণা পাচ্ছিলাম। নিশ্চয় কোনো সমস্যা হয়েছে। ওই ছবিগুলোতে ঠিকানা লেখা ছিল। সব ঠিকানা নোট করলাম; গুলশান, বনানী, উত্তরা, ধানমন্ডি। প্রথম দিন বনানী গেলাম। সেখানে গিয়ে বুঝলাম, যে ১২টি জায়গায় ছবি পাঠানোর কথা, সেখানে তা পাঠানো হয়নি। কারণ, ছবি তিন মাস আগে তোলা। যখন হেঁটে হেঁটে মোটামুটি হতাশ, তখন আমি ‘হাফ স্টেপ ডাউন’-এর সামনে। ‘হাফ স্টেপ ডাউন’ অমিতাভ ভাইয়ের। এটা এখন নিকেতনে। আগে ছিল বনানীতে। অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই আমি ঢুকতে চাচ্ছিলাম।
দারোয়ান আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে কিনা। আমি জানালাম নেই। তারপর তাঁকে বললাম, ‘একটু ঢুকতে দেন। কথা বলে চলে যাব।’ আমার সঙ্গে আমার বন্ধু ছিল। আমি এখানে তাঁর বাসায় উঠেছি। বাবা মানতে পারেননি আমার ঢাকায় আসা। তিনি আমাকে কারমাইকেলেই পড়াতে চেয়েছেন। আমার দুইটা জেদ ছিল—এক, মিডিয়াতে কাজ করা; আর দুই, ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে পড়া।
তো দারোয়ানের সঙ্গে তুমুল ঝগড়া করছিলাম। বলেছি, ‘ভেতরে ঢুকতে না দিলে আমি যাব না এখান থেকে। আপনি ভেতরে গিয়ে বলেন, রংপুর থেকে এক মেয়ে দেখা করতে এসেছে।’ তখন জানি না অমিতাভ রেজা কত বড় মাপের ডিরেক্টর। জানি যে, তিনি ভালো কাজ করেন। আমার তাঁকে ভালো লাগে। সেইম টাইমে ভাইয়া বের হচ্ছিলেন। তিনি এলেন। রাশেদ জামান এলেন। ভাইয়া জানতে চাইলেন, ‘এখানে কী হয়েছে, কীসের গ্যাঞ্জাম। ওদের ভেতরে আসতে দাও।’ আমাকে বলেছেন, ‘কী হয়েছে বাবা?’ বললাম, ‘ভাইয়া আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই। কিন্তু দারোয়ান দিচ্ছে না।’ তিনি জানতে চাইলেন, ‘আচ্ছা, তুমি কী করতে চাও?’ আমি জানালাম, তাঁর সঙ্গে টিভিসিতে কাজ করতে চাই। বলেছি, ‘আপনার কাজ অনেক ভালো লাগে।’ তিনি বলেন, ‘তুমি করতে পারবা?’ বললাম, ‘হ্যাঁ, আপনি দিলে করতে পারব।’ তিনি বললেন, ‘আচ্ছা, ঠিক আছে। একটু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছবি ওঠাও তো।’
রাশেদ ভাইয়ের কাছে ক্যামেরা ছিল। তিনি র্যান্ডমলি কিছু ক্লিক করলেন। অমিতাভ ভাইও কিছু ডিরেকশন দিলেন। ঠিক সেটাই করলাম। বৃষ্টি পড়ছিল। তখন বৃষ্টিধরার কিছু ছবি নিলেন। তখন তিনি ভিডিও ক্লিপ নিলেন। বললেন, ‘ভিডিওতে তোমার নাম বল, কী পড়ালেখা করো, কোথা থেকে আসছ?’ আমি সেভাবেই বললাম। তার পর তিনি বললেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে যাও। তোমাকে লাগলে জানাব।’ ফোন নম্বর নিলেন তিনি। চলে আসলাম। বাইরে খাওয়া-দাওয়া করে বিকেলে বাসায় যাচ্ছিলাম। ৫টার দিকে ফোন দিয়ে বললেন, ‘আবার কালকে অফিসে এসো।’
পরদিন গেলাম। যাওয়ার পর বিপুল নামের এক ভাই আমার হাতে স্ক্রিপ্ট ধরিয়ে দিলেন। বলেন, ‘এটা হলো তোমার জন্য গ্রামীণফোনের টিভিসি আর আমাদের ফিল্ম। এই নাও স্ক্রিপ্ট। পড়। আমি পড়লাম। একটা গ্রামের মেয়ে বসে আছে মন খারাপ করে। তার স্বামী বিদেশে থাকে। আমি বললাম, ‘আচ্ছা। পারব।’ তিনি বললেন, ‘পারবা?’ আমি বলে ফেলি, ‘এখানে তো কিছুই নাই। আমাকে তো কিছুই করতে হবে না। পারব না কেন?’ তিনি বললেন, ‘কিছুই নাই! এত কনফিডেন্স? তোমার সঙ্গে অমিতাভ ভাইয়ের কী সম্পর্ক?’ বললাম, ‘অমিতাভ রেজাকে আমি চিনিও না।’ তিনি বললেন, ‘তাহলে তোমাকে কেন কাস্ট করল?’ বললাম, ‘আমি তো জানি না। কালকেই প্রথম দেখা হলো।’
যেদিন অমিতাভ ভাইয়ের সঙ্গে আমার দেখা হলো, সেদিন ছিল ২ তারিখ। আমাকে অফিসে পুনরায় ডাকল ৩ তারিখ। সেদিন আমাকে স্ক্রিপ্ট দিল। ওদের টিভিসির শুট ছিল ৭ তারিখ। তারা দিনাজপুরে যাবে ৬ তারিখে। এর আর্টিস্ট ঠিক করা ছিল। খুব সুপরিচিত একজন। কিন্তু আমাকে দেখার পর ভাইয়ার মনে হলো—তিনি যে গল্পের মানুষটাকে খুঁজছিলেন, সে হয়তো আমি। তিনি সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন। তো তিনি আমাকে কেন কাস্ট করলেন সেই কৈফিয়ত আজ পর্যন্ত কাউকেই দিতে পারিনি।
তারপর আমরা ৬ তারিখে শুটিংয়ে গেলাম। এগারো দিন আমরা গ্রামীণফোনের শুট করলাম।
তখন অনেক ভালো কাজ হতো। দারুণ দারুণ টিভিসি হয়েছে সে সময়।
বীথি: হ্যাঁ। ১১ দিন পর আমাকে আর কিছুই করতে হয় নাই। সব বড় বড় বিলবোর্ডে আমি, আর আমি। কেউ কাউকে ফোন করলে ‘আমারে ছাড়িয়া বন্ধু কই রইলা রে’ গান। কিন্তু আমাকে সামনে এক, স্ক্রিনে অন্যরকম লাগত দেখতে। সে জন্য কেউ বুঝতে পারত না।
এমনও হয়েছে, নিজের কাছে গুছিয়ে রাখার জন্য নিজেই পত্রিকা কিনতে গেছি। পত্রিকার দোকানে গিয়ে পত্রিকার পাতা খুলে নিজেই নিজেকে দেখছিলাম। এত বড় বড় করে ফিচার হয়েছে। অনেকগুলো ম্যাগাজিনে কাভার হয়েছে। এমনও হয়েছে যে, পত্রিকা কিনছে, সে আমার ছবির জন্যই পত্রিকা কিনছে।
প্রথম টাকা পেয়ে কী করেছেন?
বীথি: আমি টিভিসির সম্মানীর টাকা দিয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হই। ভর্তি হয়েছিলাম শান্ত মারিয়মে। বাবা চেয়েছিলেন বিবিএ পড়াতে।
সম্মানী কত ছিল?
বীথি: ৩০ হাজার টাকা। আমার ভর্তি ফি ছিল ২৯ হাজার ৫০০ টাকা। বিজ্ঞাপনের পর গ্রামীণফোনের ব্যাপক প্রচার হলো। ওরা আমাকে ২ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ করে। তখন আমি নতুন। আমাকে যা বলবে তাই করব। আই ডোন্ট হ্যাভ এনি গডফাদার। মিডিয়া সম্পর্কে কোনো আইডিয়াই নাই। তো আমিও করে ফেললাম। এর মাঝখানে জুঁইসহ নানা তেল-শ্যাম্পু-সাবান আমাকে খুঁজল। আমি সরি বলে দিলাম। গ্রামীণফোন চুক্তি ভিত্তিতে আমাকে তিন মাস পরপর টাকা দিয়ে দিত। তখন বুঝতে পারিনি, আমার ক্যারিয়ারটা আমি খেয়ে ফেলছি। যাদের আমি র্যান্ডমলি না করে গেছি, দুই বছর পর তারা আমাকে আর খোঁজেনি।
এর পর আপনি টেলিভিশন নাটকের দিকে এলেন?
বীথি: বিজ্ঞাপন যাওয়ার দ্বিতীয় দিন থেকে আমি নাটক করি। ফার্স্ট সিঙ্গেল নাটক ছিল হিল্লোল ভাইয়ের সঙ্গে। সজল আহমেদ ছিলেন ডিরেক্টর। ওই নাটকের তিন দিন পর শিমুল সরকারের ‘ডাইরেক্টর’ ধারাবাহিক করি। এটা আরটিভিতে প্রচারিত হয়েছিল। তখন ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম। সিরিয়ালও শুরু করেছি। শুধু টিভিসি বাদে আমি সব কাজ করতাম। এরপর আমি প্রচুর নাটক করেছি। আমি অনেকগুলো সিনেমাও করেছি। সবগুলো কম বাজেটের।
প্রথম সিনেমা তো ছিল হেডমাস্টার?
বীথি: ২০১৩ সালে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত সিনেমা ‘হেডমাস্টার’ করেছিলাম। সেখানে আলমগীর স্যার ছিলেন, সুবর্ণা মোস্তফা ছিলেন।
আলমগীর, সুবর্ণা মোস্তফা থাকার পরও এটা লো বাজেটের মুভি হয় কী করে?
বীথি: অনুদানের ছবি ছিল। আমি যাদের ছবি করেছি তাদের একটাই প্রবলেম, তারা পাবলিসিটি করে না। ইনফ্যাক্ট আমি শাকিব খানের সঙ্গেও ছবি করেছি। নাম সত্তা। সেখানে পাউলি দাম লিড ক্যারেক্টার।
সেই অর্থে আপনি পাবলিসিটি পেলেন না কেন?
বীথি: সত্তায় তো পাউলি দাম লিড ক্যারেক্টার। সেখানে আমি জার্নালিস্টের ক্যারেক্টার করেছি। (সিনেমায়) পাউলি দাম মারা যাওয়ার পর আমার ক্যারেক্টার আসে। তা ছাড়া অনেকগুলো ইন্টারনাল প্রবলেম ছিল।
টেলিভিশন নাটক থেকে সিনেমাতে শিফট করার কারণ কী?
বীথি: তিন বছর আগে আমি নিজস্ব ফ্যাশন হাউস দিই গুলশান ১-এর পুলিশ প্লাজায়। নাম কুইন্স ক্লোজেট। যেহেতু অনেক টাকা ইনভেস্ট করে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে পড়েছি, তাই এটা নিয়ে আমার শখ ও স্বপ্ন আছে। জব তো করতে পারতাম না। নিজে কিছু করতে চেয়েছি। পুলিশ প্লাজায় শোরুম দিয়ে, নিজে ডিজাইন করে কাজ শুরু করলাম। বাইরে থেকে ড্রেস আনা, শো রুম চালানো, শুটিং সবকিছু ছিল। বুঝতে পারলাম শুটিংয়ের পেছনে দৌড়ালে এটা দাঁড়াবে না। ডিজাইনিং ও কালেকশনে ফোকাস করলাম। একাই সব করতাম। প্রফিটও অনেক ভালো। পার ডে যা প্রফিট হয়, সেটা বিশাল। তখন মিডিয়ার মানুষ, কাজগুলো—আমার কাছে ঝাপসা হতে লাগল। মনে হলো, মিডিয়াতে সব গতানুগতিক কাজ হচ্ছে। খুব বেশি ভেরিয়েশনের কাজ পাই নাই। তখন মনে হয়েছে, একই জিনিস প্রতিদিন করার চেয়ে আমি আমার প্রতিষ্ঠানে ফোকাস করি। এটা একদিন বড় হবে। আমি যেহেতু ডিজাইনার, আমি মালিক; আমাকে তো ফোকাস দিতে হবে।
যখন দেখলাম, আমার প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক টাকা আসছে, তখন ভাবলাম এত কম টাকার বিনিময়ে অখাদ্য প্রোডাকশনের কাজ করছি! কাজ করা বাদ দিলাম। এর পর যখন ফোন আসত, তখন না করে দিলাম। এখনো পর্যন্ত ‘না’ রয়ে গেছে তাদের মধ্যে।
এখন তো সিনেমা করছেন...
বীথি: এখন আমি আবার অনেক কাজ করছি। মার্চে আমি বিয়ে করেছি। আট মাস চলছে। সব মিলিয়ে সংসার গোছানোর চেষ্টা করছি। সবাই বলত, সেটল হও। আমি সেটল হয়ে গেছি। এখন সব মিলিয়ে কাজ নিয়ে থাকতে চাই।
এই কাজ বলতে কোনটাকে বোঝাচ্ছেন? আপনার প্রতিষ্ঠান নাকি মিডিয়া?
বীথি: প্রতিষ্ঠান বা মিডিয়া না। আমি যেটা করতে চাই। এখন আমার প্রতিষ্ঠান অফ আছে। কারণ, এক বছর ভালো চলার পর দ্বিতীয় বছর থেকে করোনা শুরু হলো। তাই দোকানটা অফ করেছি। আবার আমি ফ্রি হয়ে যাই।
‘গুনিন’ নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
বীথি: আমার শেষ সিনেমার নাম ‘গুনিন’। পরিচালনা করেছেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম। এ ছবিতে পরীমণি খুব ভালো কাজ করেছেন। শরীফুল রাজ, মুস্তফা মনোয়ার, ইরেশ যাকের কাজ করেছেন। গুনিন ক্যারেক্টারটা পাভেল ভাই করেছেন। গুনিন খুব সিম্পল একটা ছবি। এটা দেখতে বসলে আপনাকে মেথড অ্যাক্টিং জানতে হবে না। এটা হলে কিংবা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে দেখতে পারবেন। এটা চরকির প্রোডাকশন। সহজে সুন্দর সময় কাটবে আপনার। মজা আছে, ভালোবাসা আছে, গ্রাম্য পলিটিকস আছে।
গিয়াস উদ্দিন সেলিমের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
বীথি: তাঁর সঙ্গে প্রথম কাজ করেছি। তাঁকে চিনি ১০ বছর ধরে। আগেও কাজের কথা হয়েছিল। টাইম মেলেনি। এই প্রথম কাজ করা হলো। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি একটা শুদ্ধ প্রোডাকশনের বা শুদ্ধ ডিরেকশনের কাজ করেছি। গিয়াস উদ্দিন সেলিম ভাই খুব কমফোর্টেবল ডিরেক্টর। তিনি কাজ আদায় করে নিতে পারেন। আমার ছোট্ট ক্যারেক্টার ছিল। তিনি আমাকে বলেছেন, ‘তুই কর, নিশ্চয় ভালো লাগবে।’
শুট করেছেন কত দিন?
বীথি: আমি এটার শুট করেছি ৭-৮ দিন। ছবির টোটাল শুটিং হয়েছে ২৫ দিনের মতো। অর্ধেক শুটিং করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, বাকিটা হয়েছে মানিকগঞ্জে। মানিকগঞ্জের শুটে আমি ছিলাম।
সম্প্রতি বিয়ে করেছেন...
বীথি: করোনা না এলে হয়তো বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতাম না। করোনা আমাকে এমন একটা প্যারা দিয়েছে যে, বলার মতো না। আমার জীবনটা ইনসিকিউর, বাবা-মা অনেক দূরে থাকেন। করোনার শুরুর দিকে তো হাসপাতালেই যেতে পারতাম না। তখন বুঝতে পারি আমার কাছের একজন মানুষ দরকার, যে বিপদে-আপদে সব সময় পাশে থাকবে। তখন সিদ্ধান্ত নিই—বিয়েটা করে ফেলা ভালো। বিয়ে করা নিয়ে এত ভয়ে থাকার কিছু নেই। বর ও বউ দুজনেই যদি সাপোর্টিভ হয়, তাহলে দুজনই ভালো থাকতে পারে। আমার হাসব্যান্ড জার্নালিস্ট। আমার চেয়ে বেশি আমাকে পুশ করে কাজের জন্য। ওর পুশ না থাকলে হয়তো কাজ করলে করলাম, না করলে নাই। ও আমাকে সাজেশন দেয়।
আপনার এই ৭/ ৮ মাসের বিবাহিত জীবনের অভিজ্ঞতা কী?
বীথি: ভালো। একজন সাধারণ মানুষ বিয়ে করলে যা হয়, একদম তাই-ই। স্পেশাল কিছু নেই। আমি সংসারের বড় মেয়ে। আমরা পাঁচ ভাইবোন। ওরা সবাই আমার কথা শুনত। আমাকে কথা শোনানোর মতো কেউ ছিল না। এখন আমাকে কথা শোনানোর মতো কেউ আছে। সে ফ্যামিলির বড়। ফ্যামিলির গার্ডিয়ান। তার কথা আমাকে শুনতে হয়।
তিনি...
বীথি: দেবাশীষ রঞ্জন সরকার। তিনি মূলত একজন এনজিওকর্মী। একটি আন্তর্জাতিক এনজিওতে মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগে কাজ করেন। আর সন্ধ্যায় যমুনা টেলিভিশনের নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবে কাজ করেন। জার্নালিজমের সঙ্গে ১৭-১৮ বছর ধরে যুক্ত।
২০১০-এর ‘আমারে ছাড়িয়া বন্ধু কই গেলা রে’...
বীথি: আমি বুঝতেই পারিনি কখন কী হয়ে গেছে। এখন ২০২১ সালের শেষের দিক। এখনো ২০১০ সালের যে কেউ আমাকে রিকল করতে পারেন। বলেন, ওই যে গ্রামীণফোনের বীথি। এর পর আমার কোনো কাজ এটাকে ছুঁতে পারেনি। প্রথম কাজটাতেই এক্সপেক্টেশনের থেকে অনেক বেশি কিছু পেয়ে গেছি। মানুষের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি।
পরবর্তী পরিকল্পনা কী?
বীথি: ওটিটি। অনেকগুলো প্ল্যাটফর্ম আছে। আমি সবগুলোতেই কাজ করতে চাই। দেশে ও দেশের বাইরে কাজ করতে চাই। কাজের পরিধি বাড়াতে চাই। আমি ব্যবসা বন্ধ রেখে অভিনয়ে মনোনিবেশ করেছি। আমি চাই ধীরে ধীরে হলেও ভালো একটা জায়গায় পৌঁছাতে।
ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কনটেন্টগুলো ডার্ক হয়, ভায়োলেন্স থাকে...
বীথি: আমি জানি না আসলে। হয়তো মানুষ এগুলো দেখতে পছন্দ করে। আমিও যে দেখি না, তা নয়। তবে কাজ হচ্ছে তো। সেটাই বড় কথা।
আমাদের এখানে তো অনেক ট্যাবু আছে এসব বিষয় নিয়ে।
বীথি: আর্টিস্ট হিসেবে আমাকে আমার কাজের জায়গাটা পছন্দ করতে হবে। জনগণ আমাকে কোথায় দেখতে বেশি ভালোবাসে। আমি সে কাজটা করব না, যেখানে আমাকে ভালো লাগবে না। আর্টিস্টরা নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হলেই হয়। আমিও শুনেছি ওটিটির সমালোচনা। দুইটা কাজ সমালোচিত হলেও, ২০টা কাজ তো ভালো-ও। এর মাধ্যমে আর্টিস্টদের কাজ বাড়বে। এমনিতে তো আর্টিস্টদের কাজ কমে গেছে।
সম্প্রতি ‘বলি’ মুক্তি পেয়েছে। ‘বলি’ কিন্তু ভালো হয়েছে।
বীথি: আমাদের ডিরেক্টরদের সমস্যা হচ্ছে, তাঁরা নিজের গণ্ডির বাইরের কাউকে কাস্ট করেন না। অন্যদের কাজের সুযোগ দেওয়া হয় না। কিংবা ভয় পায়। এখন কিন্তু বাঁধন আপু খুব ভালো করছেন। তিনি আগেও ভালো করতে পারতেন। এটা তো আর্টিস্টের হাতে না। ডিরেক্টরের হাতে।
আপনার কামব্যাক, ফিল্ম, ওটিটি, বিবাহিত জীবন—সবকিছুর জন্য শুভকামনা।
বীথি: থ্যাংক ইউ। আমার মা তো গৃহিণী। স্কুলে থাকতে আমি সকালে স্কুলে যেতাম, বিকেলে স্কুল থেকে ফিরতাম। সকালে যখন যেতাম, তখন দেখতাম তিনি রান্না করছেন। ফিরেও দেখতাম, তিনি রান্না করছেন। তখন ভাবতাম, রান্না ছাড়া জীবনে কি আর কিছু নেই? মনে হতো, একজন মানুষ সারা জীবন রান্না করে কীভাবে কাটায়! তখন নিজেই নিজেকে বলতাম, আমি জীবনে অনেক কিছু করব। শুধু রান্নার মধ্যেই জীবন সীমাবদ্ধ নয়। আমি করেছি অনেক কিছুই। বাংলাদেশের বড় বড় পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি। এখন আমি বাইরের দেশের দিকে তাকাতে পারি। সৃজিত দা, শিবু দা, অঞ্জন দত্তের সঙ্গে কাজ করতে চাই। কাজটা কেউ দেখুক না দেখুক, আমি চাই কাজটা যেন করে যেতে পারি। কাজটা শিখতে চাই। এমন টিচারের হাতে পড়তে চাই, যারা আমাকে শিখিয়ে আমার কাছ থেকে কিছু বের করে নেবে। আমার অনেক কিছু হয়েছে, কিন্তু অনেক কিছু করার বাকি।
অনেক ধন্যবাদ বীথি।
বীথি: ধন্যবাদ।
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫