Ajker Patrika

ডলার বাড়াতে নতুন নির্দেশনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২২, ১০: ৪৫
ডলার বাড়াতে নতুন নির্দেশনা

বর্তমানে দেশে ডলারের খরা চলছে। এটি সহজে কাটছে না। এই চলমান খরা কাটাতে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে এবার রপ্তানিকারকদের রিটেনশন কোটা (ইআরকিউ) হিসাবে জমাকৃত বৈদেশিক মুদ্রার ৫০ শতাংশ নগদায়ন (জমাকৃত ডলারের ৫০ শতাংশ বাজারে ছাড়) করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর করতে বলা হয়েছে। আর পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত নতুন নির্দেশনা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের সঙ্গে জড়িত সব অনুমোদিত ডিলার (এডি) ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক নীতি ও প্রবিধি বিভাগ।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রচলিত ব্যবস্থায় বিদেশে বিনিয়োগকারী দেশের রপ্তানিকারকেরা তাদের রপ্তানি পণ্য ও সেবার আয় থেকে পাওয়া আয়ের নির্দিষ্ট অংশ ইআরকিউ হিসাবে জমা রাখেন। দেশের স্থানীয় মুদ্রার মূল্যমান অনুযায়ী রিটেনশন কোটার হার সর্বনিম্ন ১৫ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ। তবে প্রযুক্তি খাতে এই হার শতকরা ৭০ শতাংশ বিশেষ সুযোগের আওতায় রাখা হয়েছে। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী রিটেনশন কোটা হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রা জমার হার ৫০ শতাংশ কমিয়ে ১৫ শতাংশের স্থলে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, ৬০ শতাংশের পরিবর্তে ৩০ শতাংশ এবং ৭০ শতাংশের বদলে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দেশে ডলার সংকটের মুহূর্তে বিদেশে বিনিয়োগ করা উচিত হবে না। বর্তমানে ডলারের বাজারে যে সংকট, তা তো চোখে দেখতে পাচ্ছেন সবাই। এখন বিবেচনা করতে হবে বিদেশে বিনিয়োগের সক্ষমতা কোন পর্যায়ে রয়েছে। আগে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য রিজার্ভ থাকতে হবে। তা না করে বিদেশি বিনিয়োগ অব্যাহত রাখা কীভাবে যুক্তিযুক্ত। বরং ডলারের সংকট মোকাবিলা করতে বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে আনতে সাড়ে ৭ শতাংশ কর পরিশোধের শর্ত তুলে দিয়ে তা বিনা শর্তে শিল্প খাতে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া উচিত।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, যেসব প্রতিষ্ঠান রপ্তানি করে সেই সব প্রতিষ্ঠানের অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে আসার পরে ইআরকিউ হিসাবে রপ্তানির আয়ের ৬০ শতাংশ ডলারে জমা রাখতে হবে এবং বাকি ৪০ শতাংশ দেশীয় মুদ্রায় (টাকা) থাকতে হবে। আর হিসাবধারীরা প্রয়োজনমতো যেকোনো সময় জমানো ডলার থেকে ব্যয় করতে পারে। এমনকি দেশের বাইরে যদি তার ডলার পাঠানো বা বিদেশে কেনাকাটার প্রয়োজন পড়ে, তাঁরা সেই হিসাব থেকে ডলার বিদেশে পাঠাতে পারবেন বা কেনাকাটা করতে পারবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বের জারি করা এক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী যেকোনো প্রতিষ্ঠান তাদের আগের পাঁচ বছরের গড় রপ্তানি আয়ের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ অথবা তার সর্বশেষ নিরীক্ষিত বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে দেখানো নিট সম্পদের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দেশ থেকে প্রতিবছর মোটা অঙ্কের অর্থ পাচার হচ্ছে বলে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে আসছে। তার ওপর বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কঠোর তদারকি রাখতে হবে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৩ সালে প্রথম বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি দেয় সরকার। তখন থেকে স্বল্প পরিসরে কয়েকজন উদ্যোক্তা বিদেশে বিনিয়োগ শুরু করেন। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে বিদেশে বিনিয়োগ শুরু হয় ২০২০ সালে। সেই থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিদেশে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩৯ কোটি ডলারে। যার পরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত