Ajker Patrika

দেশপ্রেম

সম্পাদকীয়
দেশপ্রেম

আশির দশকে কোনো এক সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন সৈয়দ শামসুল হক। সভায় আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ‘মুক্তিযুদ্ধ এবং বর্তমান প্রজন্ম’। যাঁরা বক্তা ছিলেন, তাঁদের প্রায় সবাই এ কথাই বলতে লাগলেন যে ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমরা ভুলে গেছি। তরুণদের সেই ইতিহাস জানানোর দায়িত্ব আজ আমাদের গ্রহণ করতে হবে।’

সৈয়দ হক তাঁর বক্তৃতায় সে কথা মেনে নিয়েও বলেছিলেন উল্টো কথা; অর্থাৎ বড়দের পক্ষ থেকে তরুণদের ইতিহাস জানানোর দরকার তো আছেই, কিন্তু তরুণদেরও তো দায়িত্ব আছে। তিনি একটি পথ দেখিয়েছিলেন। বেরিয়ে পড়ার পথ। তরুণদের নিয়মিত বেরিয়ে পড়তে হবে নিজের শহর বা গ্রাম থেকে। খুব দূরে নয়, কাছাকাছি এলাকায় গিয়ে মিশতে হবে মানুষের সঙ্গে, চিনতে হবে মাটি, জানতে হবে গাছ, ফুল, ফল, মাছের কথা। কীভাবে ফসল ফলানো হয়, কীভাবে মানুষ জীবনযাপন করে, পাশের নদীটির নাম কেন এ রকম হলো, জানতে হবে তার ইতিহাস। এ রকম ব্যাপারগুলোয় থাকতে হবে কৌতূহল। আর এভাবেই একসময় চোখের সামনে পড়বে পুরাকীর্তিগুলো, ঐতিহাসিক স্থানগুলো। সেগুলোর বিষয়ে যে প্রশ্ন জাগবে মনে, সেটাই জাগিয়ে তুলবে ইতিহাসবোধ। নিজের মনটি গড়ে উঠলে এমনিতেই সে উদগ্রীব হয়ে মুক্তিযুদ্ধের কথা জানবে, বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস আবিষ্কার করবে।

শুধু বক্তৃতা দিয়ে দেশপ্রেম জাগানো যায় না। তাই দেশটিকে জানা, দেশের মানুষকে জানা, দেশের প্রকৃতিকে জানা, পুরাকীর্তির মাঝ দিয়ে নিজেকে চেনার মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া যাবে।

এ ব্যাপারে একটা আক্ষেপ ছিল তাঁর মনে। একবার ময়নামতির পুরাকীর্তি দেখতে যাওয়ার পর সেখানে কৌতূহলী পর্যটকদের দেখতে পেলেন না। যখন জানলেন, পিকনিক করা ছাড়া সেভাবে কেউ এখানে আসে না, তখনই তাঁর মনে হয়েছিল, কী যেন ‘নেই’ হয়ে যাচ্ছে। হ্যাঁ, ওই ‘কী যেন’টাই দেশপ্রেম। 
সে অবস্থা এখনো কাটেনি। 

সূত্র: সৈয়দ শামসুল হক, হৃৎকলমের টানে, পৃষ্ঠা ২৭২-২৭৩ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত