Ajker Patrika

এক টুকরো সাবান

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২২, ০৯: ৫৫
এক টুকরো সাবান

রুশ সাহিত্যিক ইভান তুর্গিয়েনেভ সুপুরুষ ছিলেন। ছিলেন মুখচোরা আর লাজুক। কৈশোরে তাঁর একবার খুব অসুখ হয়েছিল। সেরে উঠবার পর চিকিৎসক তাঁকে কিছুদিন নেভা নদীর তীরে নির্জনে বিশ্রাম নিতে বলেছিলেন। নেভার পারে জেলেদের এক গ্রামে তখন বেশ কিছুটা সময় কাটিয়েছিলেন তুর্গিয়েনেভ। জেলেদের মেয়েরা জানত, এ রকম খানদানি ছেলে তাদের দিকে ফিরেও তাকাবে না। কিন্তু ওরা দেখল, ছেলেটা একেবারেই অহংকারী নয়। তিনি মেয়েদের দিকে তাকালেন।

এদেরই একটি মেয়ে মন কেড়ে নিল তুর্গিয়েনেভের। মেয়েটি পয়লা নম্বর সুন্দরী ছিল না, কিন্তু মন ভালো করে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল তার। ইভান তুর্গিয়েনেভের সঙ্গে মেয়েটির সখ্য গড়ে উঠল। ইভান কিন্তু অন্য মেয়েদের সঙ্গেও ভদ্র মিষ্টি আচরণ করতেন, তাই কেউই ওর দিকে ঈর্ষার চোখে তাকায়নি।

তুর্গিয়েনেভ সম্পূর্ণ সেরে উঠলে ঠিক হলো তাঁকে যেতে হবে প্যারিসে। মেয়েটির কাছ থেকে বিদায় নিতে এলেন তিনি। মেয়েটি কাঁদছিল। তুর্গিয়েনেভ বললেন, ‘এত কাঁদছ কেন? আমি তো আবার ফিরে আসব।’

তাতে মেয়েটির কান্না থামে না।

তুর্গিয়েনেভ আবার বলেন, ‘তোমার জন্য প্যারিস থেকে কী নিয়ে আসব?’

মেয়েটা কিছু চাইল না। বলল, ‘আমি শুধু চাই, তুমি ফিরে এসো।’

অনেক বলার পরে সে বলল, ‘আমার জন্য একটু সাবান নিয়ে এসো।’

জগতে এত কিছু থাকতে শুধু সাবান! তুর্গিয়েনেভ বললেন, ‘এত কিছু বাদ দিয়ে তুমি সাবান চাইলে?’

মেয়েটি বলল, ‘তুমি আমার হাতে চুমো খেতে ভালোবাস। কিন্তু আমার হাতে সব সময় থাকে আঁশটে গন্ধ। কিছুতেই ছাড়াতে পারি না। প্যারিসের সুগন্ধি সাবানে সে গন্ধ কেটে যাবে। তখন চুমো খেতে তোমার গন্ধ লাগবে না।’

সে গ্রামে আর কোনো দিন ফেরা হয়নি তুর্গিয়েনেভের। কিন্তু মেয়েটির সে কথা বুড়ো বয়স পর্যন্ত ভোলেননি তিনি।

সূত্র: সৈয়দ মুজতবা আলী রচনাবলি-২, পৃষ্ঠা ২৬-২৭

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত