Ajker Patrika

শোয়া-বসার খেলা

সম্পাদকীয়
শোয়া-বসার খেলা

জার্মানিতে একবার এক অবাক কাণ্ডের মুখোমুখি হয়েছিলেন শঙ্খ ঘোষ। ফ্রাঙ্কফুর্ট এয়ারপোর্টে নেমে রেলস্টেশনে এসে লুডভিগ্স্হাফেন নামের একটি ছোট শহরের উদ্দেশে বেরিয়েছেন। সস্ত্রীক এই যাত্রা। ছোট শহরটায় জার্মান বউ নিয়ে থাকেন শঙ্খ ঘোষের শ্যালক প্রবোধ।

ট্রেন স্টেশনে এসে দেখেন, অল্প সময়ের মধ্যেই ছেড়ে যাবে একটি ট্রেন। সেই ট্রেন থামবে আরাধ্য স্টেশনে। তাই তড়িঘড়ি উঠে পড়েন তাঁরা রেলগাড়িতে।

অল্প যাত্রী। আরামদায়ক ভ্রমণ।

এক সহযাত্রীকে ইশারা আর আধো ভাষায় শঙ্খ ঘোষ জিজ্ঞেস করেন, ‘কত সময় লাগতে পারে লুডভিগ্স্হাফেন শহরে পৌঁছুতে?’

জার্মান ভদ্রলোক ইংরেজিতে উত্তর দেন, ‘ওয়ান আওয়ার।’

দরজার পাশে দাঁড়িয়ে দ্রুত অপস্রিয়মাণ গাছপালা দেখতে থাকেন শঙ্খ ঘোষ। একসময় লক্ষ করেন, ঘণ্টা দেড়েক পেরিয়ে গেছে, কিন্তু ‘ওয়ান আওয়ার’ আর শেষ হচ্ছে না।

সেই ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করেন, ‘এক ঘণ্টা তো অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে, শহর তো আর আসে না!’

ভদ্রলোক কোনো উত্তর দেন না। পাশ থেকে আরেকজন জানতে চান, ‘কোথায় যাবেন?’

‘লুডভিগ্স্হাফেন।’

‘তাহলে চিন্তা নেই। নিশ্চিত হয়ে বসুন। সবে তো আটটা বাজে। এখনো অনেক দেরি।’

‘উনি যে বললেন, এক ঘণ্টা লাগবে?’

‘উনি বললেন? উনি হয়তো বলতে চেয়েছেন রাত একটা। সেটিই হয়েছে ওয়ান আওয়ার। হ্যাঁ, তা প্রায় একটা তো হবেই।’

রাত একটা! তাহলে তো শ্যালক প্রবোধ জানতেও পারবে না কখন তাঁরা পৌঁছুবেন!

ঘড়ির কাঁটায় রাত একটা বাজতেই ট্রেন থামল লুডভিগ্স্হাফেন স্টেশনে। কিন্তু এ সময় সাহস করে বাইরে যাওয়ার কথা ভাবলেন না তাঁরা। স্টেশনেই অনেক মানুষ বসে আছে, শুয়ে আছে।

এ সময় অদ্ভুত এক খেলা দেখলেন শঙ্খ ঘোষ। কিছুক্ষণ পর পর কয়েক শ শোয়া মানুষ ঝট করে বসে পড়ছে। আবার কিছুক্ষণ পর শুয়ে পড়ছে। আবার বসে পড়ছে।

কেন এই খেলা? জানা গেল এক দোকানির কাছে। স্টেশনে পুলিশ এলেই সবাই কারও এক ইশারায় উঠে বসছে। কারণ, স্টেশনে বসা যাবে, ঘুমানো যাবে না। ঘুমালেই জরিমানা। তাই এই শোয়া আর বসা! সারা রাত এই খেলাই চলল। 

সূত্র: শঙ্খ ঘোষের গদ্যসংগ্রহ, পৃষ্ঠা ৪২৫-৪২৭ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত