Ajker Patrika

গবেষণা না করেই ভাতা পাচ্ছেন শিক্ষকেরা

মিনহাজ তুহিন, চবি
গবেষণা না করেই ভাতা পাচ্ছেন শিক্ষকেরা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ২০২০-২১ অর্থবছরে গবেষণা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। নিয়ম অনুযায়ী, গবেষণা খাতে এই অর্থ ব্যয় হওয়ার কথা। কোনো শিক্ষক গবেষণা করতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকেন্দ্রে প্রস্তাবনা জমা দেবেন। তাঁর প্রস্তাবনা অনুমোদন পেলে তিনি গবেষণা ভাতা পাবেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই নিয়ম পাশ কাটিয়ে প্রতি মাসে শিক্ষকদের বেতন-ভাতার সঙ্গে ৩ হাজার টাকা করে গবেষণা ভাতা দিচ্ছে, যার পরিমাণ বছরে প্রায় ৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। সম্প্রতি ইউজিসির এক প্রতিবেদনে এই ভাতাকে বিধিবহির্ভূত ও সরকারের আর্থিক ক্ষতি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইউজিসির অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক মো. শাহ আলম স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০-২১ অর্থবছরে শুধু গবেষণা নয়, ১১টি খাতে প্রায় ১২ কোটি ৯০ লাখ ১৫ হাজার টাকা আর্থিক অনিয়ম পাওয়া গেছে। সম্প্রতি ওই প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে গবেষণা খাতে বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ থাকে। কোনো শিক্ষক গবেষণার জন্য চাইলে কয়েক লাখ টাকা পেতে পারেন। কিন্তু প্রতি মাসে বেতনের সঙ্গে অতিরিক্ত টাকা দেওয়া সম্পূর্ণ অনৈতিক। শিক্ষকদের খুশি রাখতে মূলত এই অর্থ দেওয়া হচ্ছে। এই টাকা দিয়ে কেউ গবেষণা করেন না।

যেসব খাতে অনিয়ম গবেষণার অর্থ ব্যয়ে অনিয়মের পাশাপাশি আরও কিছু অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সিটি করপোরেশনের বাইরে হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সিটি করপোরেশন এলাকার সমপরিমাণ বাড়িভাড়া দেওয়া হয়। এতে বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ক্ষতি প্রায় ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে বসবাসরত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুরো বাড়িভাড়া দেওয়া হয়। এটিকে অনিয়ম বলছে ইউজিসি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বছরে আর্থিক ক্ষতি ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিধিবহির্ভূতভাবে সেশন বেনিফিট দেওয়া হয়, যাতে ক্ষতি ২ কোটি টাকা।

এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি রয়েছে এমন শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্টসহ বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতি ১ কোটি টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, ডিন, প্রভোস্ট, প্রক্টর, বিভাগীয় সভাপতি, আবাসিক শিক্ষক, মেডিকেল সেন্টারের ডাক্তার ও অন্যান্য পদের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের একাডেমিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব ভাতা হিসেবে মূল বেতনের ৬-১৫ শতাংশ পর্যন্ত দেওয়া হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি ১ কোটি টাকা।

উপাচার্যের বাংলো থাকা সত্ত্বেও বাড়িভাড়া দেওয়া, শিক্ষকদের বই ভাতা দেওয়া, সিটি করপোরেশন এলাকার হারে কর্মচারীদের যাতায়াত ভাতা দেওয়া ও উপ-রেজিস্ট্রার বা সমমানের কর্মকর্তাদের তৃতীয় গ্রেডে বেতন দেওয়াকেও অনিয়ম হিসেবে চিহ্নিত করেছে ইউজিসি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল ফারুক আজকের পত্রিকাকে বলেন, কোনো শিক্ষককে গবেষণার জন্য অনুদান নিতে হলে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকেন্দ্রে প্রস্তাবনা জমা দিতে হয়। প্রস্তাবনা পর্যালোচনার জন্য বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হয়। বিশেষজ্ঞরা ইতিবাচক মতামত দিলে আমাদের এ-সংক্রান্ত কমিটির সভায় অনুমোদন দেওয়ার পাশাপাশি গবেষণা খাত থেকে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

হিসাব নিয়ামক (ভারপ্রাপ্ত) মো. ফরিদুল আলম চৌধুরী বলেন, শিক্ষকদের গবেষণার জন্য প্রতি মাসে বেতনের সঙ্গে ৩ হাজার টাকা দেওয়া হয়। বছরে একবার বই কেনার টাকা দেওয়া হয়। তিনি এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।

রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বলেন, ‘গবেষণা ভাতা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ও আমাদের মতো ৪০ শতাংশ বাড়িভাড়া নেয়। তারাও শহর থেকে দূরে। তারা আদালতের মাধ্যমে ৪০ শতাংশ করে ফেলছে। আমরাও এই প্রক্রিয়া এগোব।’

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক আবু তাহের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অর্থনৈতিক নয়, একাডেমিক স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সরকারি নিয়ম-নীতি মেনে পরিচালনা করতে অনুরোধ করি।’  

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত