Ajker Patrika

ময়মনসিংহ নগরীতে ছিনতাই আতঙ্ক

ইলিয়াস আহমেদ, ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ নগরীতে ছিনতাই আতঙ্ক

ময়মনসিংহ নগরীতে হঠাৎ করেই ছিনতাইকারীদের উৎপাত বেড়ে গেছে। টাকাসহ মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এতে ব্যর্থ হলে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত, এমনকি হত্যা করার মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন ছিনতাইকারীরা। এ পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার স্বার্থে প্রশাসনকে প্রয়োজনে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে জেলার সুশীল সমাজ।

গত ১৬ আগস্ট বেলা সোয়া ৩টার দিকে মহানগরীর ছায়াবাণী সিনেমা হলের সামনে ছিনতাই করতে ব্যর্থ হয়ে মো. মুনতাসির আল মামুন (২৩) নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাত করে ছিনতাইকারীরা। পরে পথচারীরা তাঁকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে পাঠান। আহত মুনতাসির আল মামুন গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের নাহড়া গ্রামের মো. ফজলুল হকের ছেলে। তিনি ফুডপান্ডায় ডেলিভারি ম্যান হিসেবে যোগদানের জন্য শহরে এসেছিলেন।

পুলিশ জানায়, মুনসতাসির আল মামুন ভালো আছেন। তাঁকে মমেক হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

আহত মুনসতাসির আল মামুন বলেন, ‘ফুডপান্ডায় ডেলিভারি ম্যান হিসেবে যোগদানের জন্য শহরে এসেছিলাম। দুপুরের দিকে নগরীর ছায়াবাণী সিনেমা হলের সামনে চা খেতে গেলে ৪–৫ জন অজ্ঞাত যুবক আমার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতে চায়। এতে বাঁধা দিলে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তাঁরা আমার পেটে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে সেখানে উপস্থিত অন্যরা আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন।’

এদিকে গত ১৫ আগস্ট রাতে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে মেছুয়াবাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বহুমুখী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদকে কুপিয়ে আহত করে দুই ছিনতাইকারী। এ সময় ২৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান তাঁরা।

ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘রাতে বাজার থেকে রেলস্টেশনের ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম দিয়ে বাঘমারার বাসায় যাওয়ার পথে দুজন ছিনতাইকারী ছুরি ও রামদা নিয়ে আমার ওপর আক্রমণ করে। এ সময় ছিনতাইকারীরা টাকা ছিনিয়ে নিতে ধস্তাধস্তি করে। একপর্যায়ে তাঁরা ব্যর্থ হয়ে হাতে কোপ দিয়ে ২৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ কথা কাউকে জানালে খুন করারও হুমকি দেয় ছিনতাইকারীরা। পরে সেখানে উপস্থিত অন্যরা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’

গত ১৩ জুলাই শম্ভুগঞ্জে রুবেল মিয়া (৩২) নামে এক চালককে হত্যা করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ছিনতাই করা হয়। এ ঘটনায় নিহত রুবেল মিয়া সদর উপজেলার ৭ নম্বর চর নিলক্ষিয়া রাঘবপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে।

পুলিশ জানায়, ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর শম্ভুগঞ্জ বাজারের চান মিয়া পাম্প এলাকা থেকে অটোরিকশাচালকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই নিহত রুবেল মিয়ার ভাই মো. আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করেন। পরদিন গত ১৪ জুলাই গাজীপুরের বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, অটোরিকশা ছিনতাই করতেই রুবেলকে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে ও কোমরের বেল্ট দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরে ওই তিনজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, ‘যখন মানুষ অভাবে পড়ে, তখন ছিনতাই–রাহাজানি বেড়ে যায়। দেখা যাচ্ছে, ছিনতাইকারীদের ফাঁদে পড়ে অনেককেই প্রাণ দিতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের আরও নজরদারি প্রয়োজন। তা না হলে এর মাত্রা বেড়ে যাবে।’ 

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি চাঁদ মিয়া বলেন, ‘পরপর ছিনতাইকারীদের হামলার ঘটনা দুঃখজনক। এ বিষয়ে পুলিশ তৎপর রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, অচিরেই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান বলেন, ‘ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়ে কেউ পার পাচ্ছে না। আমরা দোষীদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হচ্ছি। ছিনতাই রোধে মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে।’ পাশাপাশি পুলিশের তৎপরতা বেড়েছে বলেও জানান আহমার উজ্জামান। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত