Ajker Patrika

যশোরে দুদকের মামলার আসামিদের বেশির ভাগ সরকারি চাকুরে 

জাহিদ হাসান, যশোর
আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ২১: ১০
যশোরে দুদকের মামলার আসামিদের বেশির ভাগ সরকারি চাকুরে 

যশোরে গত বছর অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলার আসামিদের বেশির ভাগ সরকারি চাকুরে। তবে মোট ২২টি মামলার মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র জমা পড়েছে মাত্র ৮টির; যার মধ্যে ৭ মামলায় অভিযুক্তদের সাজা হয়েছে। 

যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দুদকের উপপরিচালক আল আমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ২০২২ সালে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা এসব মামলায় ৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। 

দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের ডিসেম্বরে প্রায় ১ কোটি ২৭ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে যশোর সদরের সাবেক সাব-রেজিস্ট্রার শাহজাহান আলীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। সাব-রেজিস্ট্রার পিআরএলে (অবসরোত্তর ছুটি) রয়েছেন। 

চাকরিতে দুর্নীতির মাধ্যমে নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ রয়েছে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল হাসেম খানের বিরুদ্ধে। এসব সম্পদের খোঁজ পেয়ে গত বছর দুদক আবুল হাসেম খান ও তাঁর স্ত্রী মাহফিজা বেগম চম্পার নামে মামলা করে। তদন্ত শেষে মাহফিজার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। 

মামলায় অভিযোগ করা হয়, যশোর শহরের বারান্দি মৌজায় ওসি হাসেমের নামে ১০ শতক জমি, মনিরামপুর উপজেলার দুর্গাপুর মৌজায় সাড়ে ৭ শতক জমি, কচুয়া মৌজায় ৫ দশমিক ৪০ একর জমি রয়েছে। এসব জমির অনেকাংশ তিনি পৈতৃক সূত্রে পাওয়ার কথা বললেও কোনো দলিল দেখাতে পারেননি। 

ওসি হাসেম ও তাঁর স্ত্রীর যৌথ নামে যশোর শহরের বারান্দি মৌজায় ২৭ শতক জমির ওপর চারতলা বাড়ি ও একটি নির্মাণাধীন বাড়ি রয়েছে। মনিরামপুরের দুর্গাপুর মৌজায় দুজনের নামে ২৮ দশমিক ১২ শতক জমিতে একটি একতলা পাকা বাড়ি ও সেমি পাকা তিনটি বাড়ি রয়েছে। 

কেনাকাটায় অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মোল্লা আমির হোসেনসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। যশোর দুদকের সহকারী পরিচালক মাহফুজ ইকবাল বাদী হয়ে মামলাটি করেন। 

মামলার আসামিরা হলেন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব মোল্লা আমির হোসেন, সহকারী সচিব (কমন সার্ভিস) জাহাঙ্গীর আলম ও আশরাফুল ইসলাম, নিরাপত্তা কর্মকর্তা মনির হোসেন, উপসহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন, ক্রীড়া কর্মকর্তা আ ফ ম আসাফুদৌলা, অডিট অফিসার আব্দুস সালাম, হিসাব কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ও মোছা. জাহানারা খাতুন এবং সিস্টেম অ্যানালিস্ট শরিফ সালমা কহিনুর। 

তাঁরা সবাই ওই কেনাকাটা কমিটির সদস্য ছিলেন বলে মামলার এজাহারে বলা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৬-১৯—তিন অর্থবছরে কম্পিউটার ও কম্পিউটার যন্ত্রাংশ কেনাকাটায় বাজারমূল্যের চেয়ে আসামিরা অতিরিক্ত ১ কোটি ২০ লাখ ১৪ টাকা ব্যয় করেছেন। 

গত ১৯ মে ভিজিএফের চাল আত্মসাতের অভিযোগে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা কামরান হোসেন তাঁর সঙ্গে যোগসাজশে ৩ দশমিক ৬ টন চাল ব্যবসায়ী মো. শাহাবুর রহমানের কাছে বিক্রি করেন; যার মূল্য ১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৫৩ টাকা। 

এ ছাড়া জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বেনাপোলে কাস্টম কর্মকর্তা দেবাশীষ কুন্ডু ও তাঁর স্ত্রী লতিকা কুন্ডুকে আসামি করেও মামলা করে দুদক। 

দুদকের উপপরিচালক আল আমিন বলেন, ‘অভিযোগ পেলেই আমরা তদন্ত করেছি। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। পরে আদালত দোষীদের শাস্তির আওতায় আনছেন। তা ছাড়া বিভিন্ন সময় অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্নজনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত