Ajker Patrika

চুরির সন্দেহে মাদক খাইয়ে বন্ধুকে হত্যা, আদালতে স্বীকারোক্তি

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
চুরির সন্দেহে মাদক খাইয়ে বন্ধুকে হত্যা, আদালতে স্বীকারোক্তি

কিশোরগঞ্জে সোহান আহমেদ আলিফ (২৩) নামে এক যুবককে হত্যার ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভাগনের জন্য কেনা রুপার বিছা ও নগদ অর্থ চুরির সন্দেহে আলিফকে মাদক খাইয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত আলিফের বন্ধু ও গ্রেপ্তারকৃত মাসুদের (২৪) আদালতে আদালতে জবানবন্দি এমন তথ্য উঠে আসে বলে জানায় পুলিশ।

আজ রোববার বিকেলে কিশোরগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদুল আমিনের আদালতে আসামি মাসুদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। এর আগে একই দিন সকালে সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের ভাস্করখিলা গ্রাম থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে কিশোরগঞ্জ মডেল থানা-পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃত মাসুদ সদর উপজেলার রশিদাবাদ ইউনিয়নের উলুহাটি গ্রামের মফিজ মিয়ার ছেলে।

রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ আল আমিন হোসাইন আজকের পত্রিকাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

জবানবন্দির বরাতে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, মাসুদ ও আলিফ একই এলাকার এবং বন্ধু। তাঁরা এক সঙ্গে মাদক সেবন করতেন। সম্প্রতি মাসুদ তাঁর বোনের ছেলের জন্য রুপার বিছা কেনেন। ওই রুপার বিছা এবং নগদ সাড়ে তিন হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যান বলে সোহান আহমেদ আলিফকে সন্দেহ করেন মাসুদ। আলিফকে অনেক বার বলার পরেও চুরির বিষয়টি স্বীকার করেননি। পরে হারানো জিনিস ও টাকা উদ্ধারের জন্য গত ২০ মার্চ (সোমবার) দোকান থেকে মো. অন্তরকে (১৯) নামের একজনকে দিয়ে আলিফকে ডেকে নিয়ে যান মাসুদ।

পরে রশিদাবাদ ইউনিয়নের উলুহাটি গ্রামের মতি মিয়ার পরিত্যক্ত বাড়িতে গিয়ে তাঁরা আলিফকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে তৈরি ‘ঝাঁকি’ নামক মাদক সেবন করান। এ সময় মাসুদ কৌশলে কম মাদক সেবন করেন। পরে আলিফকে নিয়ে উলুহাটির বন্দে নিয়ে যান মাসুদ ও তাঁর সহযোগীরা।

 অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, উলুহাটির বন্দে নিয়ে গিয়ে আলিফকে গাছের ডাল ভেঙে পিটানো শুরু করেন মাসুদ এবং চুরি করা রুপার বিছা দিতে বলেন। আলিফ অস্বীকৃতি জানালে বেধড়ক পেটান মাসুদ ও তাঁর সহযোগীরা। মারধরের ফলে আলিফের মৃত্যু হয়। আলিফের মৃত্যু হলে আসামিরা বাড়ি থেকে দুটি কোদাল এনে মাটি খুঁড়ে লাশ গুম করার উদ্দেশে মাটিতে পুতে রাখেন।

মোহাম্মদ আল আমিন হোসাইন আরও বলেন, আসামি মাসুদকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর দেখানো মতো হত্যার পূর্বে সেবনকৃত ঘুমের ট্যাবলেটের খালি পাতা, খালি কাশির সিরাপের বোতল, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত লাঠি ও লাশ গুম করার জন্য গর্ত খোঁড়ার কাজে ব্যবহৃত দুটি কোদাল উদ্ধার করে জব্দ করা হয়।

এর আগে পরিবারের লোকজন সোহান আহমেদ আলিফকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে গত ২৮ মার্চ (মঙ্গলবার) তাঁর মা হাওয়া আক্তার সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে গত ২৯ মার্চ (বুধবার) সদর উপজেলার রশিদাবাদ ইউনিয়নের উলুহাটির বন্দে গাউসুল আজম গোরস্থান থেকে মাটিতে পুঁতে রাখা অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিখোঁজ হওয়া সোহানের মা লাশের পরনে কালো রঙের জিনস প্যান্ট ও কোমরে কালো রঙের বেল্ট দেখে ছেলের মরদেহ নিশ্চিত করেন।

সোহান আহমেদ আলিফ। ছবি: সংগৃহীতপরে গত ৩০ মার্চ (বৃহস্পতিবার) হাওয়া বাদী হয়ে পাঁচজনের নামসহ ৬ থেকে ৭ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই দিনই পুলিশ এজাহারনামীয় আসামি হুমায়ুন ও আনন্দকে গ্রেপ্তার করে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত