Ajker Patrika

৩০ বছরের কষ্ট ঘুচল

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
৩০ বছরের কষ্ট ঘুচল

‘একটি হুইলচেয়ারের জন্য কত জনকে বলেছি। সবাই কথা দিয়েছে, কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। ৩০ বছর রাস্তার ধারে বসে মানুষের কাছে হাত পেতেছি। তাদের দানে চলেছি, কিন্তু একটি হুইল চেয়ারের আশা পূরণ হয়নি।’

গতকাল শুক্রবার বিকেলে সদর উপজেলা পরিষদে হুইলচেয়ার নিতে আসেন শারীরিক প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক উজ্জ্বল মিয়া (৪৫)। সেখানে আনন্দে আত্মহারা হয়ে করুণ সুরে নিজের দুঃখের কথা বলছিলেন। তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ঘারিন্দা গ্রামে।
উজ্জ্বল বলেন, ‘আইজক্যা এই চেয়ারটি পেয়ে আমার আনন্দের শেষ নেই। এই হুইল চেয়ারে বসে ৩০ বছরের কষ্ট যেন ভুলে গেছি।’ উজ্জ্বলের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে সেই অবয়ব।

উজ্জ্বলের মতো কথা বললেন গোসাইজোয়ার গ্রামের সাজেদা বেগম। নিজের প্রতিবন্ধী সন্তান সাদিকুল ইসলামকে (৩০) হুইল চেয়ার কিনে দিতে পারেননি। নিজ সন্তানের কষ্ট সহ্য করতে পারছিলেন না। সাজেদা আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘মা হয়ে সন্তানের জন্য যা করতে পারিনি, ইউএনও আপা তাই করছে। আল্লাহ যেন তাঁর ভালো করেন।’
হুইল চেয়ার নিতে আসা উজ্জ্বল ও সাজেদা বেগমের সঙ্গে কথা হয় উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে। তাঁদের হাতে হুইল চেয়ার তুলে দেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রানুয়ারা খাতুন।

উজ্জ্বল জন্মের পর পোলিও রোগের কারণে পায়ের কর্মক্ষমতা হারায়। তারপর থেকেই তিনি ঘারিন্দা বাজারের পাশে বসে ভিক্ষাবৃত্তি করতেন। নিজে ও বৃদ্ধ বাবা-মায়ের আহার জোটে তাঁর ভিক্ষার টাকায়। অপর শারীরিক প্রতিবন্ধী সাদিকুল একেবারেই সজ্জাশায়ী।

উজ্জ্বল ও সাদিকুরের কষ্টের কথা জেনেছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রানুয়ারা খাতুন। প্রতিনিধির মাধ্যমে তাঁদের খবর নেন তিনি। বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত। সরকারি সহায়তার খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেন তাঁদের কাছে। হুইল চেয়ার দেওয়ার আশ্বাসও দেন। এবার সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলেন।

ইউএনও আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি প্রায় এক মাস করোনায় আক্রান্ত ছিলাম। এরই মধ্যে তাঁদের দুর্দশার কথা জানতে পারি। অসহায় পরিবার দুটির হাতে হুইল চেয়ার তুলে দিতে পেরে করোনামুক্ত হওয়ার মতোই আনন্দ অনুভব করছি।’

সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান আনসারী গতকাল শনিবার সকালে আজকের পত্রিকাকে বলেন, `মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এবং সদরের সাংসদ মো. ছানোয়ার হোসেনের সহযোগিতায় এই হুইল চেয়ার দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আরও বলেন, এসব অসহায়, দুস্থ মানুষের সাহায্যার্থে আমাদের একটি প্রকল্প আছে। সেখান থেকে দুজনকে দুটি হুইল চেয়ার দেওয়া হলো। পর্যায়ক্রমে সব প্রতিবন্ধীকে দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত