Ajker Patrika

‘এবার ভোটের বদলে মুলা ধরে দেমো’

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ (রংপুর)
‘এবার ভোটের বদলে মুলা ধরে দেমো’

গত ২৩ আগস্ট পানির স্রোতে ভেঙে গেছে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার চিকলী নদীর শাইলবাড়ি খেয়া ঘাটের বাঁশের সাঁকোটি। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে ১২টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ। অতিরিক্ত চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তাঁদের উপজেলা শহরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। 

শাইলবাড়ি গ্রামের গৃহবধূ আনিছা বেগমের (৪৫) আক্ষেপ, ‘বাহে, এটে সাঁকো ভাঙে নাই, হামার কপাল ভাঙছে। হামার যাওয়া আসইরা পথ বন্ধ হইছে। কী দুর্দশাত পড়ি আছি, তাক কয়া বুঝার পামো না। এমতোন কষ্ট করি কি বাঁচা যায়! সরকার এ্যাটে একনা পুল বানাইলে কী হয়?

উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে শাইলবাড়ি গ্রাম। ওই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে চিকলী নদী। নদীর শাইলবাড়ি খেয়াঘাটে পারাপারের জন্য চাঁদা তুলে বাঁশের সাঁকো করেছিলেন স্থানীয়রা। কিন্তু বর্ষার পানিতে সাঁকোটি ভেঙে ভেসে গেছে। 

আজ রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাঁকোটি মাঝখান থেকে ভেঙে গেছে। খেয়াঘাটটি দিয়ে চলাচল বন্ধ। ভাঙা সাঁকোর ছবি তুলতে দেখে এগিয়ে আসেন দর্জিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আলতাফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘ছবি তুলি কী হইবে? বছরে বছরে কতো মানুষ আইল, ছবি তুলি টেলিভিশন-পেপারোত দেখায়, তাও তো সেতু হইল না। এবার ভালো করি নেখি দ্যাও, হামরা শেখের বেটিরটে এ্যাটে একনা পুল বানে চাই। সেতু না থাকায় হামার নদী পারাপার হইতে খুব সমস্যা হয়।’ 

দুই নাতনীকে নিয়ে সাঁকো পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন চকতাহীরা গ্রামের ৬০ বছরের বৃদ্ধা ফাতেমা বেগম। তিনি বলেন, ‘বাবা, নদীর ওপারোত শাইলবাড়িত বেটির বাড়ি। সাঁকো কোনা পার হইলে যাওয়া যায়। মুই তো জানো না সাঁকো ভাঙি গেইছে, এ্যাটে আসি তো বিপদোত পনু। এ্যালা ছাওয়াগুলাক ধরি কেমন করি বেটির বাড়ি যাঁও। পাঁচ কিলো ঘুরে যাওয়া ছাড়া তো আর উপায় দেখচোঁ না।’ 

জনপ্রতিনিধিদের বারবার বলেও কোনো সাড়া না পাওয়ায় চাঁদা তুলে এই সাঁকো বানিয়েছিলেন স্থানীয়রা। খ্যানপাড়া গ্রামের দিনমজুর দিনেশ রায় (৪০) বলেন, ‘আশেপাশের সউগ গ্রামোত ঘুরি চাঁদা তুলি সোবায় মিলি সাঁকো কোনা বানাছনো। তাক এবার পানির সোঁতোত ভাঙি গেল। এতে হামার যাতায়াতোত খুব কষ্ট হওছে। সরকারেরটে হামার একটাই দাবি, এ্যাটে একনা পুল বানে চাই।’ 

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে ক্ষুব্ধ ভীমপুর গ্রামের বাসিন্দা ওয়াহেদ আলী। তিনি বলেন, ‘এ্যাটে যদ্দিনই ভোট আলছে, তদ্দিনই নেতা-কর্মী, প্রার্থীরা পুল বানে দিবার চাইছে। যখন ভোট শ্যাষ, তখন কথাও শ্যাষ। এবার ভোটের বদলে মুলা ধরে দেমো।’ 

এই সাঁকোর বিষয়ে জানতে চাইলে আলমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেন বলেন, শাইলবাড়ি ঘাটে পাকা সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে পড়ায় দর্জিপাড়া, খ্যানপাড়, ডাঙ্গাপাড়া, মহেশখোলা, শাইলবাড়ি, নলুয়ারডাঙ্গা, প্রামানিকপাড়া, কোরানীপাড়া, ভীমপুর, মৌলভীপাড়া, বানিয়াপাড়াসহ ১২টি গ্রামের ১০ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদে বরাদ্দ না থাকায় সাঁকোটি সংস্কার করতে পারছি না। 

উপজেলা প্রকৌশলী আহম্মেদ হায়দার জামান বলছেন, শাইলবাড়িসহ বেশ কয়েকটি ঘাটের কথা জানা আছে তাঁর। এক বছর আগে বরাদ্দ চেয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এখনও বরাদ্দ মেলেনি। বরাদ্দ পেলেই নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত