শহীদ মিনার থেকে ফেরার পথে রাজশাহীতে আ.লীগ কর্মী খুন

একুশের প্রথম প্রহরে ফুল দিয়ে ফেরার পথে রাজশাহীর তানোরে ছুরিকাঘাতে জিয়ারুল ইসলাম (৪৪) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী খুন হয়েছেন। আজ বুধবার উপজেলার তালন্দ ইউনিয়নের বিলশহর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। 

খবর পেয়ে পুলিশ ওই গ্রামের সড়কের পাশ থেকে জিয়ারুলের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করেছে। পরে সুরতহাল শেষ করে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়। 

নিহত আওয়ামী লীগ কর্মী উপজেলার তালন্দ ইউনিয়নের বিলশহর গ্রামের মহির আলী মণ্ডলের ছেলে। তিনি আলু চাষের পাশাপাশি স্থানীয় গভীর নলকূপ চালানোর কাজ করতেন। 

তানোর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে রাতে ওই ব্যক্তি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। তাঁর ঘাড়ের ডান দিকে ধারালো অস্ত্রের আঘাত আছে। হাতের কবজি ও পায়ের গোড়ালির ওপর ক্ষত আছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। হত্যায় জড়িত সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে এখন পর্যন্ত আটক করা হয়েছে। পুলিশ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু করেছে।’ এ ঘটনায় হত্যা মামলা হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। 

আটক ব্যক্তিরা হলেন–তালন্দ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য আবুল হাসানের স্ত্রী আয়েশা আক্তার সুমি (৩৩), একই এলাকার লুৎফর রহমানের ছেলে ফরহাদ হোসেন (৩১), আলাউদ্দিনের ছেলে সোহাগ (২৭)। 

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার একুশের প্রথম প্রহরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে স্থানীয় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীসহ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে মোটরসাইকেলে করে নিজ বাড়ি বিলশহর গ্রামের দিকে চলে যান জিয়ারুল ইসলাম। সকালে পুকুরে মাছ ধরতে গেলে লোকজন সড়কের পাশে জিয়ারুলের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর তাঁরা থানায় খবর দেন। 

খবর পেয়ে তানোর থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং জিয়ারুলের মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহের পাশে তাঁর মোটরসাইকেলটি পড়ে ছিল। এরপর গোদাগাড়ী সার্কেল এএসপি সোহেল রানাসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। রাজনৈতিক কারণে পূর্বশত্রুতার জের ধরে তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। 

এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তালন্দ ইউপি চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন বাবু ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য আবুল হাসান মেম্বারের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা চলে আসছে। নিহত জিয়ারুল ছিলেন বাবু চেয়ারম্যানের পক্ষের লোক এবং পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানীর চাচাতো ভাই। 

গত সংসদ নির্বাচনে বাবু চেয়ারম্যানসহ তাঁর পক্ষের নেতা-কর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। গত ৭ জানুয়ারি ভোটের ফলাফল প্রকাশের পরদিন এলাকার সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হাসান মেম্বারের নির্দেশে নিহত জিয়ারুলের একটি গভীর নলকূপে তালা মেরে দেওয়া হয়। জিয়ারুলকে এলাকা ছাড়ার হুমকিও দেওয়া হচ্ছিল। এ ঘটনার পরপর হাসান মেম্বারের পক্ষের তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।