Ajker Patrika

নামের মিলে কারাবরণ করতে হলো নিরপরাধ ব্যক্তিকে

পাবনা প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২৩, ০৯: ৪৮
নামের মিলে কারাবরণ করতে হলো নিরপরাধ ব্যক্তিকে

মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি হলেন আনোয়ার হোসেন (৭০) নামের এক ব্যক্তি। তাঁকে অনেক দিন ধরে খুঁজছে পুলিশ। কিন্তু সেই আসামিকে না পেয়ে নামের মিল থাকায় আরেক আনোয়ার হোসেনকে (৩০) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে আদালত থেকে তিনি জামিনে রয়েছেন। 

আবার যাঁর বিরুদ্ধে ভুল আসামিকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ উঠেছে, তাঁর নাম আনোয়ার হোসেন। তিনি পাবনার বেড়া মডেল থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই)। বিনা দোষে গ্রেপ্তার হয়ে ছয় দিন জেল খাটেন নিরপরাধ আনোয়ার। পরে আদালতে বিষয়টি প্রমাণ হওয়ার পর এএসআই আনোয়ারের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। 

নিরপরাধ আনোয়ার পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা গ্রামের ওহাব ব্যাপারীর ছেলে। আর মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আনোয়ারের বাড়ি বেড়া পৌর এলাকার স্যানালপাড়া গ্রামে। 

ভুক্তভোগী পরিবার ও আদালত থেকে জানা গেছে, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জিআর মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আনোয়ারের বিরুদ্ধে আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। কিন্তু পরোয়ানা সঠিকভাবে যাচাই না করেই গত ১০ জুন নিরপরাধ আনোয়ারকে গ্রেপ্তার করেন বেড়া মডেল থানার এএসআই আনোয়ার। 

মামলায় কোনো সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও নিরপরাধ আনোয়ারকে ১১ জুন আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। তিনি বিনা দোষে ছয় দিন কারাগারে থাকেন। 

এদিকে বিনা দোষে কারাবরণের বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন নিরপরাধ আনোয়ারের আইনজীবী। আদালতের জিজ্ঞাসাবাদে করমজা গ্রামের আনোয়ার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক মাদক ব্যবসায়ী আনোয়ার নন বলে নিশ্চিত হন বিচারক সুরাইয়া সরকার। আদালতে দাখিল করা নাগরিক সনদ, প্রত্যয়নপত্রসহ প্রয়োজনীয় নথি পর্যালোচনা করে তাঁকে ৬ জুলাই পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন আদালত। একই সঙ্গে বিষয়টি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে বেড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। 

এদিকে, আদালতে নির্দেশনা পেয়ে বিষয়টি তদন্তে বেড়া থানার এএসআই আরিফকে দায়িত্ব দিয়েছে বেড়া থানা-পুলিশ। ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য এএসআই আনোয়ার ভুক্তভোগী আনোয়ারকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

ভুক্তভোগী আনোয়ার হোসেন বলেন, “১০ জুন বিকেলে এএসআই আনোয়ার করমজা গ্রামে আমার বাড়িতে এসে জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোর নাম কী?’ আমি বলি, আনোয়ার। ‘বাবার নাম কী?’ আমি বলি, ওহাব ব্যাপারী। তখন আমাকে বলে, ‘থানায় চল, তুই সাজাপ্রাপ্ত আসামি।’ আমি ও আমার পরিবারের লোকজন বারবার তার ভুল হচ্ছে জানালেও তিনি কারও কথা শোনেননি। আমাকে ধরে নিয়ে যান। সারারাত থানায় আটকে রাখার পর পরদিন আমাকে আদালতে চালান করে দেন। ” 

ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলে ছয় দিন পর পুলিশ টাকা খরচ করে কারাগার থেকে বের করেন বলে জানান ভুক্তভোগী আনোয়ার। তিনি বলেন, ‘চলতি মাসের ৬ তারিখে হাজিরা দিছি। আমি গরিব মানুষ কীভাবে এই মামলা থেকে রেহাই পাব বুঝতে পারছি না।’ 

আনোয়ার আরও বলেন, ‘এখন আদালতের নির্দেশে তদন্ত হচ্ছে। আমি যেন পুলিশের বিরুদ্ধে কিছু না বলি তাঁর জন্য নানাভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এএসআই আনোয়ার নিজের ভুলে নিজে ফেঁসেছেন। এখানে তো আমার দোষ নেই।’ 

অভিযোগের বিষয়ে এএসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গ্রেপ্তারের সময় করমজার আনোয়ার অস্বাভাবিক আচরণ করেন। তিনি বিষয়টি পরিষ্কার করতে না পারায় থানায় আনা হয়। সাক্ষাতে কথা বলব, ফোনে বেশি কিছু বলতে পারব না।’ 

বেড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাদিউল ইসলাম বলেন, ‘দুই আনোয়ারের বাবার নামে মিল থাকা এবং গ্রেপ্তারের সময় আনোয়ার ঘটনায় জড়িত না থাকার বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারেননি বলে এএসআই আনোয়ার জানিয়েছেন। আমরা আদালতের নির্দেশে বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। আনোয়ারের জামিন চলমান আছে।’ 

বেড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্লোল কুমার দত্ত বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া আনোয়ার এক সময় স্যান্যালপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত না হলেও তাঁর নামে আলাদা মামলা আছে। এ কারণে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আদালতের নির্দেশনায় বিষয়টির তদন্ত চলছে। পরে বিস্তারিত জানানো যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত