Ajker Patrika

পদ্মপ্রেমে মুগ্ধতা

শাহীন রহমান
আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২১, ১১: ৪৫
পদ্মপ্রেমে মুগ্ধতা

প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রামের একপাশে কলমীগাড়া বিল। তার চারপাশে ধানখেত। মাঝের বেশ কিছু অংশজুড়ে পদ্ম ফুলের সমারোহ। সবুজ পাতার মাঝে মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাদা-গোলাপি রঙের একেকটি পদ্ম। শেষ বিকেলে যেন মোহনীয় আবেশ তৈরি হয় বিলে। আর এই সময়ে পদ্মবিল মুগ্ধতা ছড়ায় প্রকৃতিপ্রেমীদের মাঝে।

পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের সুঁইগ্রামে অবস্থিত কলমীগাড়া বিল। উপজেলা সদর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে সবুজে ঘেরা গ্রামে প্রথমে পিচঢালা, পরে মেঠো পথ পেরিয়ে পৌঁছাতে হয় প্রত্যন্ত গ্রামের বিলটিতে। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত—এ দুটি সময়ে পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ্য হয়ে ওঠে। পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এলাকাবাসীর পাশাপাশি প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসছে এ বিলের পাড়ে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের শেষ প্রান্তে কলমীগাড়া বিল। একটি বাড়ির মাঝখান দিয়ে বিলের পাড়ে ধানখেতের কিনারে পৌঁছে দেখা গেল ডিঙি নৌকায় মাছ শিকারে ব্যস্ত স্থানীয় কৃষক হারুন আলী। তার ডিঙি নৌকায় বিলের মাঝখানে গেলে হৃদয় হারিয়ে যায় ভালো লাগার অন্য জগতে। চারপাশে ফুটে আছে অনেকগুলো পদ্ম ফুল। কোনোটি আবার অভিমানে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে। হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে শরীরে শিহরণ খেলে যায়। বিলের চারপাশে সবুজ ধানখেত আর মাঝখানে সাদা-গোলাপি রঙের পদ্ম ফুল তৈরি করেছে অন্যরকম সৌন্দর্য। সূর্যাস্তের সঙ্গে পদ্মফুলের রং-রূপ তৈরি করে মোহনী আবেশ। 

তবে কিছু সমস্যাও রয়েছে পদ্ম ফুলের সৌন্দর্যের মাঝে। বিলে যাতায়াতের তেমন ব্যবস্থা নেই। ডিঙি নৌকায় দুজনের বেশি ওঠা যায় না। আর প্রকৃতিগতভাবে বেড়ে ওঠা পদ্মবিলের মাঝে মাঝে কচুরিপানা ও অন্যান্য আগাছা রয়েছে। যেগুলো পরিকল্পিতভাবে নিরসন করা গেলে সৌন্দর্য আরও উপভোগ্য হবে। 

সুঁইগ্রামের বাসিন্দা আতাউর রহমান স্বপন বলেন, 'কলমীগাড়া বিলে সাধারণত বর্ষা মৌসুমে পদ্ম ফুল ফোটা শুরু হয়। শরৎকালে বেশি ফুল ফোটে। এখানে কেউ পদ্ম ফুলের চাষ করে না। বছরের পর বছর ধরে প্রাকৃতিকভাবে এই বিলে পদ্ম ফুল ফুটে আসছে। বিলের নিচু এলাকার কিছু জমি চাষাবাদের আওতায় আসায় পদ্ম বিলের পরিধি অতীতের চেয়ে এখন অনেক কমে গেছে।' 

শেষ বিকেলের আলোয় আরও মোহনীয় রুপে ধরা দিয়েছে পদ্মপদ্ম ফুল দেখতে আসা জাবের আল শিহাব, হুমায়ুন সজীব বলেন, 'গ্রামবাংলায় পদ্ম ফুল বেশ পরিচিত। খোঁজ পেয়ে দেখতে এসেছি। বিলে পদ্ম ফুল দেখে মুগ্ধ হলাম। তবে বিলটিকে পরিকল্পিতভাবে সাজানো গেলে দর্শনার্থী আরও বাড়বে।' 

স্থানীয় বাসিন্দা আবেদ আলী (৫০) পাঁচ বছর ধরে বছরের ছয় মাস কলমীগাড়া বিলের পদ্ম ফুল, পদ্ম চাক ও পদ্ম পাতা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি জানান, সকালে বাড়ির পাশের বিল থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা পদ্ম ফুল, পদ্ম চাক ও পদ্মপাতা তোলেন তিনি। দশটি পদ্ম ফুলের এক আঁটি ১৫ টাকা, ছয়টি পদ্ম চাক ১০ টাকায় এবং প্রতিটি পদ্ম পাতা ৬ টাকায় বিক্রি করেন তিনি। 

চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. রুহুল কুদ্দুস ডলার বলেন, 'পদ্ম ফুল কেবল সৌন্দর্যের আধারই নয়, উদ্ভিদটি ভেষজ গুণসমৃদ্ধও। এর ডাঁটা সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। মানুষের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে, চুলকানি ও রক্ত আমাশয় নিরাময়ে এই জলজ উদ্ভিদ ও ফুল বেশ উপকারী।' 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত