Ajker Patrika

করোনা নয়, চাকরি যাওয়া নিয়ে আমাগো বেশি ভয়

প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ 
করোনা নয়, চাকরি যাওয়া নিয়ে আমাগো বেশি ভয়

আজ রোববার থেকে চালু হয়েছে নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ কারখানা। শিল্প পুলিশের তথ্য অনুযায়ী ঈদের পর আজ থেকে ৯০৪টি রপ্তানিমুখী কারখানার কাজ শুরু হয়। একই সঙ্গে নিজ নিজ কর্মস্থলে ৬৫ শতাংশ শ্রমিক যোগদান করেছেন। কিন্তু হঠাৎ করে কারখানা খোলার খবরে ঢাকার বাইরে থাকা শ্রমিকেরা লকডাউনের মধ্যে ফিরতে অবর্ণনীয় ভোগান্তির মুখোমুখি হয়েছেন।

জানা গেছে, গত ১ দিনে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কাজে যোগদান করতে নারায়ণগঞ্জে এসেছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। তাঁরা লকডাউনে গাড়ি না পেয়ে ভেঙে ভেঙে ঢাকায় ফিরেছেন। এতে মূল ভাড়ার ১০ গুণ বেশি টাকা ব্যয় করতে হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক শ্রমিক বলেন, চাকরি ও বেতন কাটা থেকে বাঁচাতে শত কষ্টেও ঢাকায় ফিরছি। যদি কাজে না ফিরতাম তাইলে চাকরি থেকে বের করে দিত। চাকরি গেলে খামু কি? এখন করোনা নয়, চাকরি যাওয়া নিয়ে আমাগো বেশি ভয়।

রংপুর থেকে নারায়ণগঞ্জে আসা নাহিদা আক্তার নামে এক শ্রমিক বলেন, যেমনে কষ্ট কইরা বাড়ি ফিরছি তাতে আমার হাত পা ফুইলা গেছে। সারা রাত ঠিকমতো ঘুমাইতে পারি নাই। মাইলের পর মাইল খালি হাঁটছি। এমনে মানুষ বাঁচে কন? তাও আজকে সকালে একটা নাপা (প্যারাসিটামল) খাইয়া কামে আইয়া পরছি।

ময়মনসিংহ থেকে আসা মাকসুদ বলেন, আমার পা-পিঠ সব ব্যথা করতাছে কাল রাত থিকা। আজকে সকালে আবার কামেও আইসি। একটা দিন আগে গাড়িগুলা ছাড়লে এত কষ্ট হইতো না আমাগো। শুধু শুধু কষ্ট দিসে আমাগো। মালিকও খবর নেয় না সরকারও বুঝে না। হেরা খালি ভাবে কামে তো আইবোই শ্রমিক। কিন্তু কত যে কষ্ট করি আমরা ঐটা তাঁরা দেইখাও দেখে না।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা দাবি করে বলেন, শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফেরার সুবিধার্থে গণপরিবহন খুলে দেওয়া হলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গাড়ির চাপ ছিল না বললেই চলে। নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় লঞ্চ টার্মিনালেও খুব বেশি যাত্রীদের ফিরতে দেখা যায়নি। সড়কের অধিকাংশ বাস কাউন্টার ছিল বন্ধ। শ্রমিকেরা গতকাল শনিবার যে যার মত এসে পড়েছেন বলে আজ রোববার গণপরিবহন চললেও যাত্রী ছিল না।

তিশা পরিবহনের চালক রবিন বলেন, মানুষ যা আওনের তাঁরা কালকেই (শনিবার) আইয়া পড়ছে। আজকে গাড়ি নামায়া লাভ হয় নাই। অর্ধেক সিট ফাঁকা নিয়া আইসি। আবার ফিরতে হইবো তো ফাঁকাই। ভাবছিলাম এত দিন পর বাস চালায়া কিছু আয় রোজগার হইব। ঐটাও হইলো না। যা ভাড়া উঠছে ঐটা তেলের খরচেই যাইবো গা।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, আজ সকালের দিকে কিছু মানুষ ফিরেছে। তবে সকাল ১০টার পর মহাসড়কে গাড়ির কোন চাপ নেই। পণ্যবাহী যানবাহনই চলছে বেশি। যাত্রীবাহী বাস থাকলেও সেগুলোতে লোক ছিল না বললেই চলে।

কারখানা শ্রমিকদের বিষয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-৪ নারায়ণগঞ্জের পরিদর্শক শেখ বশির উল্লাহ বলেন, আমাদের কাছে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জেলা জুড়ে ৯০৪টি কারখানা খোলা হয়েছে। এদের মধ্যে খাদ্য প্রস্তুতকারক কারখানা ৭৮টি এবং তৈরি পোশাক কারখানা ৮২৬ টি। কারখানাগুলোতে শতকরা ৬৫ ভাগ শ্রমিক যোগদান করেছেন।

কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নে শেখ বশির উল্লাহ বলেন, সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নির্দেশনা দেওয়া আছে। আমরা কারখানাগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করছি। যদি কোন কারখানায় অনিয়ম পাওয়া যায় তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত