Ajker Patrika

শিকলে বন্দী ১২ বছর

প্রতিনিধি, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ)
শিকলে বন্দী ১২ বছর

সাহিদা বেগম। মানসিক ভারসাম্যহীন এই নারী প্রায় দীর্ঘ ১২ বছর শিকলে বন্দী হয়ে আছেন। হরিরমপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের গালা গ্রামের বাসিন্দা আমেরুদ্দিন মোল্লার স্ত্রী সাহিদা বেগম তিন সন্তানের মা।

সাহিদা বেগমের দুই ছেলে, এক মেয়ে। ছেলেরা মায়ের কোনো খোঁজ রাখে না। বিয়ের পর মেয়েও দূরে। আর টাকার অভাবে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করার সামর্থ্য নেই তাঁর দিনমজুর স্বামী। তবে সম্প্রতি হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম আর্থিক সহায়তা করেছেন বলে জানিয়েছেন আমেরুদ্দিন। তবে শিকল থেকে মুক্তি মেলেনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, শূন্য বাড়িতে ছোট এক ঘরে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে সাহিদা বেগমকে। বাড়িতে কোনো লোকজন নেই। সন্তানদের মধ্যে বড় ছেলে স্বপন মোল্লা  মানিকগঞ্জে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করেন এবং স্ত্রী–সন্তান নিয়ে সেখানেই থাকে। ছোট ছেলে সোহেল মোল্লা ঢাকায় ছাপাখানায় চাকরি করেন। সোহেলের স্ত্রী–সন্তান বাড়িতে থাকলেও বাবামায়ের কোনো খোঁজখবর রাখেন না। মেয়ের বিয়ে হয়েছে অনেক আগেই। ফলে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন আমেরুদ্দিন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় পনেরো বছর আগে হঠাৎ করেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন সাহিদা। দিন দিন অসুস্থতা বাড়তে থাকে। একসময় পাবনা মানসিক হাসপাতালেও ভর্তি করা হয় তাঁকে। সে সময় প্রায় ৩৫ হাজার টাকা খরচ করে দেড় মাস হাসপাতালে রাখা হয়। কিন্তু চিকিৎসা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই অর্থাভাবে চলে আসতে হয়। গত প্রায় দু বছর ধরে এমনকি ওষুধের খরচও চালাতে পারছে না আমেরুদ্দিন।

আমেরুদ্দিন মোল্লা বলেন, দিনমজুরের কাজ করে অনেক টাকা খরচ করে স্ত্রীর চিকিৎসা করিয়েও কোনো উপকার হয়নি। প্রতি মাসে এক হাজার টাকার ওপরে ওষুধ কিনতে হয়। পরের বাড়ি কাজ করে তাঁর পক্ষে এই টাকা জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। দুই ছেলে বিয়ে করে নিজেদের মতো আলাদা আছে; কোনো খোঁজখবর রাখে না। স্ত্রীর দেখাশোনা, রান্না নিজেই করেন। সব মিলিয়ে তাঁর সংসার জীবনটাই এলোমেলো হয়ে গেছে।

সাহিদা বেগমের ভাইয়ের স্ত্রী বিলকিস জানান, অসুস্থতার আগে মানুষের সাথে খুব ভালো ব্যবহার করতেন। সবসময় পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন থাকতেন।

গালা ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য শেখ বারেক বলেন, ‘সাহিদা বেগম সঠিক চিকিৎসার অভাবেই এখনও মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় রয়েছেন। রোগীর যে অবস্থা, তাতে সঠিক চিকিৎসা করতে পারলে হয়তো ভালো হতো। সমাজের কেউ যদি দায়িত্ব নিয়ে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিতেন, তাহলে হয়তো পরিবারটি স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত