ম্যাজিস্ট্রেটকে অবরুদ্ধ করলেও বিএনপি নেতার অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলমের অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন। ম্যাজিস্ট্রেটকে অবরুদ্ধসহ নানা কৌশল করেও অবৈধ ভাটা রক্ষা করতে পারলেন না জেলা বিএনপির প্রতাপশালী এই নেতা।

আজ বুধবার দুপুরে বুলডোজার নিয়ে উপজেলার দলগ্রাম ইউনিয়নের শ্রীখাতায় নির্মিত এমজেএ-২ ব্রিকসে অভিযান পরিচালনা করেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত আনোয়ার তুমপা।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপজেলার দলগ্রাম ইউনিয়নের শ্রীখাতা এলাকায় প্রায় ৩০ বছর ধরে এক নামে পাশাপাশি দুটি ইটভাটা পরিচালনা করছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের সঙ্গে গোপনে আঁতাত করে চালিয়েছেন অবৈধ ইটভাটা। আওয়ামী লীগের পতনের পর নিজের ক্ষমতার দাপটে চলছিল এক নামে তাঁর দুই ভাটা। একটির নাম এমজেএ ব্রিকস। অপরটি হচ্ছে এমজেএ-২ ব্রিকস। দুটি ভাটা পাশাপাশি অবস্থিত।

বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলম অবৈধ ভাটা রক্ষায় বিএনপির সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

গত ২৬ জানুয়ারি ও ৬ ফেব্রুয়ারি অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে দুই দফায় পত্র পাঠান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত আনোয়ার তুমপা। সেখানে বলা হয়, বৈধ কাগজপত্র না থাকায় এমজেএ-২ ব্রিকস কালো তালিকাভুক্ত হয়েছে, যা দ্রুত বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রশাসনের সে নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দেদার ইট তৈরি ও বিক্রি অব্যাহত রাখেন বিএনপির নেতা জাহাঙ্গীর আলম। বিষয়টি প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হলে গত ১১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দুজন নির্বাহী ম্যাজেস্ট্রেট নিয়ে ওই ভাটায় অভিযান চালান।

এ সময় ভাটার কাগজপত্র দেখতে চাইলে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জি এম তানভীর সাবুসহ তাঁর লোকজন অকথ্য গালাগালি করেন। একপর্যায়ে ইটভাটায় ট্রাক্টর ও ট্রাক দিয়ে পরিবেশ কর্মকর্তা ও দুই ম্যাজিস্ট্রেটকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তাঁরা। পরে খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

এ ঘটনার পর থেকে প্রশাসন এ ভাটা গুঁড়িয়ে দিতে নড়েচড়ে বসে। অপর দিকে ভাটা রক্ষায় ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ করেন বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলম। অবশেষে শেষ রক্ষা হলো না বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলমের অবৈধভাবে গড়ে তোলা এমজেএ-২ ব্রিকসের। বুধবার দুপুরে ইউএনও সিফাত আনোয়ার তুমপার নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী বুলডোজার নিয়ে অবৈধ এমজেএ-২ ব্রিকস গুঁড়িয়ে দেয়।

একই দিনে একই এলাকার বিবিএমসি ব্রিকস নামের আরও একটি অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেয় উপজেলা প্রশাসন। এ সময় লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) এ কে এম ফজলল হক, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বিজন চন্দ্র, পরিদর্শক গোলাম মোহাম্মদ আসিফ রহমান, কালীগঞ্জ উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ শরিফুল ইসলামসহ যৌথ বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে এ উপজেলার দুটি অবৈধ ইটভাটা ভেঙে দেওয়া হয়েছে।