কুষ্টিয়া পাউবোয় কোটি টাকার তেল আত্মসাতের প্রমাণ পেল দুদক

কুষ্টিয়ায় গড়াই নদ খনন প্রকল্পে ড্রেজারের কোটি টাকার তেল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। আজ রোববার (১৩ জুলাই) কুষ্টিয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ড্রেজার বিভাগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তদন্তে সত্যতা পেয়েছে তারা। দুদক বলছে, প্রকল্প চলমান সময়ে বন্ধ ড্রেজার চালু দেখিয়ে তেল বহনকারী প্রতিষ্ঠান মণ্ডল ফিলিং স্টেশনের যোগসাজশে এই তেল আত্মসাৎ করা হয়েছে। কুষ্টিয়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নীল কমল পালের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের টিম আজ দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত অভিযান চালায়।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়াই নদ পুনরুদ্ধার প্রকল্পের (চতুর্থ পর্যায়) খননকাজ নিজেরাই সম্পন্ন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। গড়াই নদের উৎসমুখ থেকে হরিপুর সংযোগ সেতু পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার, কুমারখালী উপজেলা থেকে বোরালিয়া ঘাট পর্যন্ত ৯ কিলোমিটারসহ মোট ১৪ কিলোমিটার নদীপথ খননের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। চলতি বছরের মে মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। আর এই প্রকল্পের তেল বহনকারী প্রতিষ্ঠান ছিল মণ্ডল ফিলিং স্টেশন।

জানা যায়, ১৯৯৭ সালে প্রথম তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গড়াই নদের মুখে মাটি কেটে পরীক্ষামূলক নদ খননের কাজ উদ্বোধন করেছিলেন। কিছু দিনের মধ্যে বৃষ্টির পানিতে মাটি ও বালুতে নদ ভরাট হয়ে যাওয়ায় ওই কাজে আর কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। ওই সময় বিপুল অর্থের অপচয় হয়। পরের বছর ১৯৯৮ সালে এ নদ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়। সেই কাজ জিআরসি শেষ করার পরের বছর থেকে আবারও মরুকরণের প্রভাব বাড়তে থাকে। শুষ্ক মৌসুমে পদ্মার পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গড়াই নদের মুখে বিশাল বালুরাশি জমে যাওয়ায় নদটি একেবারে মরাখালে পরিণত হতে থাকে। এর বড় প্রভাব পড়তে শুরু করে দক্ষিণাঞ্চলের নদী ও সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের ওপর। কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, ফরিদপুর, যশোর ও খুলনা এলাকাকে মরুকরণের হাত থেকে রক্ষাসহ আরও বেশ কয়েকটি লক্ষ্য নিয়ে ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে চার বছর মেয়াদি বৃহৎভাবে ড্রেজিং করতে ‘গড়াই নদ পুনরুদ্ধার প্রকল্প-২’ নেওয়া হয়। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯৪২ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় কুষ্টিয়ার গড়াই নদের মুখ থেকে শুরু হয়ে কুমারখালী উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়ন অফিস পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত খনন করা হয়। এ প্রকল্পে পাউবো দুটি ড্রেজার মেশিন কেনে। পাউবোর কাছে জমা দেওয়ার আগেই এই দুটি ড্রেজার মেশিন নিয়ে কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। ফলে তৎকালীন পিডি ও নির্বাহী প্রকৌশলীকে এ প্রকল্প থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে গড়াই নদ ড্রেজিং ও তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে তৃতীয় ধাপে গড়াই অপটেক (জিরো) থেকে ১৬ কিলোমিটার প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে খননকাজ করা হয়।

দুদকের কুষ্টিয়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নীল কমল পাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ড্রেজার বন্ধ থাকলেও সেটি চালু দেখিয়ে তেলের কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে বিল ভাউচার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মণ্ডল ফিলিং স্টেশনের যোগসাজশে তারা তেলের টাকা আত্মসাৎ করেছে। তিনি আরও বলেন, সব বিষয়ের আলামত সংগ্রহ করে এবং তা আরও খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে তেল বহনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক আক্তার মণ্ডল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাকে যেখানে তেল পৌঁছে দিতে বলা হয়, আমি শুধু সেখানে নামিয়ে দেই। এটাই আমার কাজ। এর বাইরে কী হয়েছে, সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’

এ বিষয়ে পিডি ও নির্বাহী প্রকৌশলী সৈকত বিশ্বাস দুদকের অভিযান ও অভিযোগের বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০টি জেলার কৃষি, জীববৈচিত্র্যসহ লবণাক্তের আগ্রাসন থেকে গ্রেট ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনকে রক্ষায় জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় গড়াই খনন প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রায় তিন দশক আগে কয়েক হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয়ে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নসহ গড়াই নদের নাব্যতা পুনরুদ্ধারে প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। তবে কোনোভাবেই শুষ্ক মৌসুমে টেকসই নাব্যতা প্রবাহে প্রাণ পাচ্ছে না নদটি।