Ajker Patrika

ঝিনাইদহে ছাত্রলীগের ৩ কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় সম্পাদকসহ ২০ জনের নামে মামলা

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২২, ২১: ৪৫
ঝিনাইদহে ছাত্রলীগের ৩ কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় সম্পাদকসহ ২০ জনের নামে মামলা

গত ৭ অক্টোবর ঝিনাইদহে নেতৃত্ব নিয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে দুজনকে কুপিয়ে আহত করা হয়। সে সময় প্রতিপক্ষের ধাওয়ায় প্রাণে বাঁচতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় সরকারি ভেটেরিনারি কলেজের তিন শিক্ষার্থী। তাঁরা হলেন—কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি মুরাদ হোসেন, সাধারণ শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম ও সমরেশ বিশ্বাস।

এ ঘটনায় আজ বুধবার বিকেলে ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল ইমরানকে প্রধান আসামি করে ২০ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। কলেজ ছাত্রসংসদের ভিপি মুরাদ হোসেনের বাবা বদিউজ্জামান বিশ্বাস বাদী হয়ে ঝিনাইদহ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে এ মামলা করেন। ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফাহিম হাসান সনি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফ বিশ্বাসকেও আসামি করা হয়েছে। যাদেরকে এরই মধ্যে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়েছে, ঝিনাইদহ ভেটেরিনারি কলেজে শিক্ষার্থীরা ডিভিএম ডিগ্রির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিল। গত ৭ অক্টোবর রাত সাড়ে ১০টার দিকে আমার ছেলে ভেটেরিনারি কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি মুরাদসহ ৯ জন শহর থেকে কলেজ ক্যাম্পাসে ফিরছিল। পথিমধ্যে চুয়াডাঙ্গা সড়কের জোহান ড্রিম ভ্যালী পার্কের সামনে পৌঁছালে মো. ইকরামুল ইসলাম আমার ছেলে মুরাদসহ সঙ্গে থাকা ৯ জনকে চা খাওয়ার জন্য বলে। সেখান থেকে চা খাওয়ার পর কলেজ ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। কিছু দূর যাওয়ার পর আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন তাদের গতিরোধ করে।

সে সময় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল ইমরানের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা মুরাদকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২ নং আসামি ছাত্রলীগ নেতা ফাহিম হাসান সনি তার হাতে থাকা রামদা দিয়ে পেছন দিক থেকে কোপ মেরে জখম করে। আসামি মুস্তাকিম আহম্মেদ দা দিয়ে মুরাদের মাথায় আঘাত করে গুরুতর জখম করে। সে সময় আসামিদের কাছ থেকে জীবন রক্ষার্থে মোটরসাইকেল নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় আসামিরাও মোটরসাইকেল নিয়ে তাদের ধাওয়া করে। এ সময় আসামিরা মোটরসাইকেল চালক তৌহিদুল ইসলামের হাতে কোপ মারলে ঘটনাস্থলেই তার হাত ছিন্ন হয়ে যায়। তখন তাদের মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ওপর পড়ে যায়। এরপর আসামিরা তাদের কুপিয়ে জখম করে। ঘটনাস্থলেই মুরাদ, তৌহিদুল ইসলাম ও সমরেশ বিশ্বাস মারা যায়।

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল ইমরান বলেন, ‘প্রথমে থানায় যে মামলা দায়ের হয়েছে, সেখানে আমার নাম নেই। পরে আদালতে মামলা হয়েছে শুনেছি। যদি হয়ে থাকে তাহলে এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ষড়যন্ত্র।’

ঝিনাইদহ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতের পেশকার হাবিবুর রহমান জানান, আজ বুধবার দুপুরে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল ইমরানকে আসামি করে নিহত মুরাদ হোসেনের বাবা হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আদালত মামলাটি জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তভার দিয়েছে।

আহত ছাত্রলীগের কর্মী ও কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস সজীবুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন ও অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা সাগর ভাই কথা বলার জন্য শহরে যেতে বলেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে শহর থেকে ক্যাম্পাসে ফেরার সময় জোহান পার্ক এলাকায় পৌঁছালে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ফাহিম, মোস্তাকিম, ফরহাদ, আরিফ আমার পিঠে কোপ মারে। পরে গাড়ি দ্রুতগতিতে চালালে ১৫ থেকে ২০টি মোটরসাইকেল ধাওয়া করে। সে সময় আমি পার্শ্ববর্তী একটি পুকুরে ঝাঁপ দিলে তারাও পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং আমাকে কোপাতে থাকে। পরে কী হয়েছে আমি জানি না। তবে যারা আমাদের ওপর হামলা করেছে তারা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল ইমরান ভাইয়ের সঙ্গে থাকে।’

ধাওয়া খেয়ে বেঁচে যাওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই শিক্ষার্থী জানান, ‘আমাদের ক্যাম্পাসের ডিভিএম ডিগ্রির আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই এ ঘটনা ঘটেছে। আমাদের সঙ্গে থাকা তিনটি মোটরসাইকেলের মধ্যে একটি থেকে দুজনকে নামিয়ে নেয়। আমাদের ধাওয়া করে এবং ১৮ মাইল নামক স্থানে যারা মারা যায়, তারাও ধাওয়া খেয়েই দুর্ঘটনার শিকার হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত