Ajker Patrika

৭০ বছর আগে জনশূন্য হয়ে পড়া গ্রামটিতে ফিরছে কোলাহল

প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২১, ১৩: ০৬
৭০ বছর আগে জনশূন্য হয়ে পড়া গ্রামটিতে ফিরছে কোলাহল

ঝিনাইদহ: প্রায় সত্তুর বছর আগের কথা। গ্রামটিতে ছিল ফসলি জমি, পুকুর ও গাছগাছালি। শুধু ছিল না মানুষের বসবাস। এমনকি সরকারি নথিতে এই গ্রামের নাম “মঙ্গলপুর”। এ গ্রামের মানুষের মধ্যে হঠাৎ “অমঙ্গল”–এর আতঙ্ক ভর করলো। সবাই গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। তখন থেকেই গ্রামটি জনমানবশূন্য। গ্রামটির অবস্থান ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে, এলাঙ্গী ইউনিয়নে।

ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলপুর গ্রামটি ৬৬ নম্বর মঙ্গলপুর মৌজায় অবস্থিত। এই মৌজায় একটিই গ্রাম। গ্রামে ২০৬টি খতিয়ানভুক্ত জমি আছে। কিন্তু সেখানে কোনো মানুষের বসবাস নেই।

তবে সেই মঙ্গলপুর গ্রামে সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে আবার ফিরে আসছে মানুষের কোলাহল। নতুন করে মানুষের বসতি নির্মাণ শুরু হতে যাচ্ছে। মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে গ্রামটিতে নির্মাণ করা হচ্ছে সাতটি ভূমিহীন পরিবারের জন্য ঘর। কর্মকর্তারা বলছেন, এরই মধ্যে ওই গ্রামে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়েছে। মাসখানেকের মধ্যে ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের কাজ শেষ হবে। পাশের বাগডাঙ্গা, পাশপাতিলা ও বলাবাড়িয়া গ্রামের সাতটি ভূমিহীন পরিবারকে এই ঘর দেওয়া হবে। তারা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করবেন।

কলেরা মহামারির আতঙ্কে গ্রামছাড়া হয়েছিলেন মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকাউপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেরুন নেছা জানান, মঙ্গলপুর গ্রামে সাতটি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। কাজ প্রায় শেষপর্যায়ে। এটা মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার। দীর্ঘদিন পর মঙ্গলপুর গ্রামে আবার মানুষের বসতি গড়ে উঠতে যাচ্ছে।

কোটচাঁদপুর এলাকার প্রবীণ মোশারফ হোসেন জানান, ৬৫ থেকে ৭০ বছর আগে মঙ্গলপুর গ্রামে মহামারি আকারে কলেরা ছড়িয়ে পড়ে। এতে অনেক মানুষ মারা যায়। এ আতঙ্কে গ্রামের মানুষ আশপাশের গ্রামে আশ্রয় নেয়। তবে তারা আর ফিরে আসেননি। আর কিছু পরিবার ভয়ে গ্রাম ছেড়ে ভারতে চলে যান তখনই।

নতুন কর বসতি নির্মাণের সূচনা হিসেবে প্রথমে নির্মাণ করা হয় কমিউনিটি ক্লিনিক।পার্শ্ববর্তী বলাবাড়িয়া গ্রামের আমিরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলপুর গ্রামের অধিকাংশ মানুষ হিন্দু সম্প্রদায়ের। গ্রামে যখন কলেরা মহামারি আকার ধারণ করে তখন অনেক মানুষ মারা যান। ওই সময় গ্রামে একটা কথা ছড়িয়ে পড়ে যে, খাল-বিল, পুকুর-কুয়ার পানি নষ্ট হয়ে গেছে। এখানে থাকলে সবাইকে মরতে হবে। এই প্রচারের পর গ্রামের মানুষ দলবেঁধে ভারতে চলে যায়। কিছু মানুষ পাশের গ্রামগুলোতে চলে গিয়েছিলেন, তারাও পরে অন্যত্র চলে গেছেন। তিনি আরো জানান, সর্বশেষ নেটে ঠাকুর নামের একজন মঙ্গলপুরে থাকতেন, তিনি পরে খুন হলে গ্রামটি সম্পূর্ণ মানুষশূন্য হয়ে পড়ে।

এলাঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও যশোরের চৌগাছা উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম মঙ্গলপুর। কিন্তু এই গ্রামে মানুষ বসবাস করে না। তিনি লোকমুখে শুনেছেন, বহুবছর আগে অজানা আতঙ্কে মানুষ গ্রাম ছেড়ে চলে যান। গ্রামটির কথা বর্তমান প্রজন্ম জানে না। চেয়ারম্যান আরও বলেন, সাতটি পরিবার ওই গ্রামে বসবাস শুরু করবে। আস্তে আস্তে গ্রামে আরও বসতি গড়ে উঠবে, এই প্রত্যাশা আমাদের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত