Ajker Patrika

ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ: ঝিনাইদহে দুজনকে কুপিয়ে আহত, ধাওয়ায় প্রাণ গেল ৩ জনের

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২২, ১১: ১৬
ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ: ঝিনাইদহে দুজনকে কুপিয়ে আহত, ধাওয়ায় প্রাণ গেল ৩ জনের

ঝিনাইদহে নেতৃত্ব নিয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে দুই  জনকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। সে সময় প্রতিপক্ষের ধাওয়ায় প্রাণে বাঁচতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন সরকারি ভেটেরিনারি কলেজের তিন শিক্ষার্থী। জড়িতরা সবাই জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল ইমরানের অনুসারী বলে দাবি আহতদের। পুলিশ বলছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে এ ঘটনায় জড়িতদের ধরতে অভিযান চলছে। 

জানা যায়, ডিভিএম ডিগ্রির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমান জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফাহিম আহমেদের সঙ্গে বর্তমান কলেজছাত্র সংসদের জিএস ও ছাত্রলীগের কর্মী সজীবের বিরোধ চলে আসছে। এ বিষয় নিয়ে সাগর হোসেন সোহাগ নামের এক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে দেখা করে সজীবসহ আরও কয়েক জন শহর থেকে ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন। পথে জোহান পার্কের সামনে পৌঁছালে প্রতিপক্ষরা তাঁদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায়। এতে সজীবসহ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। পরে তাঁদের হামলা থেকে বাঁচাতে গিয়ে ভিপি মুরাদসহ তিনজন মোটরসাইকেলে পালানোর চেষ্টা করেন। সে সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ১৮ মাইল নামক স্থানে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তাঁদের মৃত্যু হয়, দুমড়ে-মুচড়ে যায় মোটরসাইকেল।

দাঁড়িয়ে থাকা বৈদ্যুতিক পিলারবাহী ট্রাকে ধাক্কা দিলে তিন আরোহীর ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়আহত ছাত্রলীগের কর্মী ও কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস সজীবুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন ও অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা সাগর ভাই কথা বলার জন্য শহরে যেতে বলেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে শহর থেকে ক্যাম্পাসে ফেরার সময় জোহান পার্ক এলাকায় পৌঁছালে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ফাহিম, মোস্তাকিম, ফরহাদ, আরিফ আমার পিঠে কোপ মারে। পরে গাড়ি দ্রুতগতিতে চালালে ১৫ থেকে ২০টি মোটরসাইকেল ধাওয়া করে। সে সময় আমি পার্শ্ববর্তী একটি পুকুরে ঝাঁপ দিলে তারাও পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং আমাকে কোপাতে থাকে। পরে কী হয়েছে আমি জানি না। তবে যারা আমাদের ওপর হামলা করেছে তারা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল ইমরান ভাইয়ের সঙ্গে থাকে।’

 ধাওয়া খেয়ে বেঁচে যাওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই শিক্ষার্থী জানান, ‘আমাদের ক্যাম্পাসের ডিভিএম ডিগ্রির আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই এ ঘটনা ঘটেছে। আমাদের সঙ্গে থাকা তিনটি মোটরসাইকেলের মধ্যে একটি থেকে দুজনকে নামিয়ে নেয়। আমাদের ধাওয়া করে এবং ১৮ মাইল নামক স্থানে যারা মারা যায়, তারাও ধাওয়া খেয়েই দুর্ঘটনার শিকার হয়।’ 
 
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল ইমরান বলেন, ‘এ ঘটনায় কারা জড়িত ছিল তা আহতরা স্পষ্ট করেনি। তবে আমাদের কয়েকটা টিম এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছে সত্য ঘটনা জানার জন্য। ছাত্রলীগের কেউ যদি জড়িত থাকে তাহলে অবশ্যই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার এক ব্যক্তি জানান, কিছু মোটরসাইকেল দ্রুতগতিতে চুয়াডাঙ্গার দিকে যাচ্ছিল। সে সময় একটি মোটরসাইকেল ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা খেলে বাকি গাড়িগুলো সেখান থেকে বিভিন্ন দিকে চলে যায়। 

ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. সোহেল রানা জানান, দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনার জেরে সজীবের ওপর হামলা হয়। সে সময় পালাতে গিয়ে নিহতরা দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজতে অভিযান চলছে। 

ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক শামীমুল ইসলাম বলেন, ‘পেছনের ঘটনা জানি না। তবে দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালানোর সময় নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণেই তারা দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িতে ধাক্কা দেয়। ফলে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।’ 

এ দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি মুরাদ হোসেন, সাধারণ শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম ও সমরেশ বিশ্বাস। নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আহতদের মধ্যে জিএস সজীবুল হাসান ও অপর একজনকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত