Ajker Patrika

‘বাবার সাতে গেলেই ভাইটা মোর বাঁচি গেল হয়’

প্রতিনিধি, দিনাজপুর
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২১, ২১: ৪৬
‘বাবার সাতে গেলেই ভাইটা মোর বাঁচি গেল হয়’

দিনাজপুরে বজ্রপাতের ঘটনায় একমাত্র পুত্রকে হারিয়ে শোকে নির্বাক হয়ে গেছেন নিহত হাসানের (১২) মা ওমিশা বেওয়া। স্বামীকে হারিয়ে একমাত্র ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে একটি পান দোকান দিয়ে কোনোমতো সংসার চালাচ্ছিলেন তিনি। হাসানের বাবা ইজিবাইক মেরামত করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অবুঝ তিন শিশুকে কষ্টে জীবন যাপন করছিলেন তিনি। কিন্তু বজ্রপাতে একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে গেছেন মাতা ওমিশা বেওয়া।

হাসানের নানা হবিবর রহমান বলেন, হাসানের বাবা মারা গেলে তাদের সংসার খুব কষ্টে দিন পার হতো। ছোট্ট হাসান বাবার রেখে যাওয়া সামান্য টাকা ও কিছু ঋণ করে বোনের বিয়ে দিয়েছে সে। এখন তার মাকে দেখার আর কেউ থাকল না। 

এ দিকে, আইনুল ইসলামের বিয়ের পর দীর্ঘদিন সন্তান হয়নি আইনুল দম্পতির। অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কোল জুড়ে আসে এক ফুটফুটে ছেলে। মা সাজেদা বেগমের নামের সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখেন সাজ্জাদ হোসেন (১৩)। স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত সে। লকডাউনে মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় বাড়িতেই ছিল। ভ্যানচালক বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলেকে বড় মাওলানা বানাবেন। আলেম হয়ে ইসলামের খেদমত করবে। কিন্তু বজ্রপাতের ঘটনায় ধূলিসাৎ হয়ে গেছে আইনুলের স্বপ্ন।  
বজ্রপাতের ঘটনায় নিহতদের মরদেহ ঘিরে স্বজনদের কান্নাপড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী আপন (১৬) পঞ্চম শ্রেণিতে এ প্লাস পায়। তফিউদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। আপনের দিনমজুর বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় হয়ে ভালো কিছু করে সংসারের হাল ধরবে। রোববার বাবা সাদেকুল ইসলাম ঢাকায় যাওয়ার সময় একবার বলেছিল স্কুলতো বন্ধ চল ঢাকায় যাই। এ সময়টা কাজ করে কিছু টাকা রোজগার করি। কিন্তু রাজি হয়নি আপন। আপনের বোন তুলি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বাবার সাতে গেলেই ভাইটা মোর বাঁচি গেল হয়।’ 

এ দিকে বজ্রপাতে নিহত হাসান, সাজ্জাদ ও মীমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায়। জানাজায় কান্নায় ভেঙে পড়ে নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী। চোখের জলে একসঙ্গে তিন শিশুকে বিদায় জানান তারা। জানাজা শেষে শেখ জাহাঙ্গীর গোরস্থানে পাশাপাশি দাফন করা হয় তিনজনকে। 

সকাল ১১টায় কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আপনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাকে সরকারপুকুর গোরস্থানে দাফন করা হয়। 

অপরদিকে দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে নিহত তিনজনের জানাজা ও দাফন রাতেই সম্পন্ন করা হয়। এদের মধ্যে আব্দুর রাজ্জাককে তার বাড়ির সামনে দাফন করা হয়।

উল্লেখ, সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় সদর উপজেলার উপশহর ৮ নম্বর ব্লকের রেলঘুণ্টি সংলগ্ন নিশ্চিন্তপুরে বজ্রপাতে ৪ জন শিশু ও চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বাসুদেবপুর গুড়িয়া পাড়া গ্রামে ৩ জন যুবক সহ মোট ৭ জন নিহত হয়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত