Ajker Patrika

শহীদি মার্চ থেকে ৫ দফা ঘোষণা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের

ঢাবি প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২: ৩৭
শহীদি মার্চ থেকে ৫ দফা ঘোষণা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কর্মসূচি থেকে পাঁচ দফা ঘোষণা করা হয়েছে। রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ পাঁচ দফা ঘোষণা করেন অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার।

পাঁচ দফা হলো—এক. গণহত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা। দুই. শহীদ পরিবারদের আর্থিক ও আইনি সহযোগিতা দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রদান। তিন. প্রশাসনে দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টদের দোসরদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে বিচারের আওতায় আনা। চার. গণভবনকে জুলাই স্মৃতি জাদুঘর ঘোষণা করা এবং পাঁচ. রাষ্ট্র পুনর্গঠনের রোডম্যাপ দ্রুত ঘোষণা করা। 
 
শহীদি মার্চ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, আব্দুল কাদের ও দলনিরপেক্ষ ছাত্রসংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন। বক্তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিট নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।

সারজিস আলম বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে যে দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, সেই রক্ত এবং স্পিরিট বৃথা যেতে দেব না। এখনো অনেক ফ্যাসিস্টদের অস্তিত্ব রয়েছে, আমরা ফ্যাসিস্টদের এবং ফ্যাসিবাদী চিন্তা লালন করা মানুষদের বলতে চাই, এই স্বাধীন বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট আচরণ করার চেষ্টা করবেন না। কোনো চাঁদাবাজ ও সিন্ডিকেট এই বাংলাদেশে হবে না।’ 

সারজিস আলম আরও বলেন, ‘আমাদের যে ভাইয়েরা এই স্বাধীনতা আনতে রক্ত দিয়েছেন, আমরা তাঁদের রক্তের মূল্য দিতে যেকোনো সময় নিজেদের রক্ত দিতে প্রস্তুত আছি।’

শেখ হাসিনার পতনের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষণা করা শহীদি মার্চে যোগ দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যে দুপুর থেকে জড়ো হন শিক্ষক, ছাত্র, শ্রমিকসহ সর্বস্তরের মানুষ। ঢাবির বিভিন্ন হল, রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে আসেন। ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নূরজাহান বেগম উচ্চবিদ্যালয়, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইমপিরিয়াল কলেজ, অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়, খিলগাঁও মাকজালুল উলুম মাদ্রাসাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, যোগ দেন শিক্ষক, চিকিৎসক, রিকশাওয়ালা, শ্রমিকসহ সর্বস্তরের মানুষ। এ সময় নানা স্লোগান দেন তাঁরা। 

শহীদি মার্চ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ছবি: জাহিদুল ইসলামসরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে আন্দোলনস্থলে যোগ দেন। কেউ কেউ শহীদদের ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে আসেন। কেউ বাংলাদেশের পতাকার সঙ্গে ফিলিস্তিনের পতাকাও উড়িয়েছেন। শহীদি মার্চটি সাড়ে ৩টার সময়ে রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে নীলক্ষেত, কলাবাগান, ধানমন্ডি ২৭, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর ও শাহবাগ হয়ে সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়। 

কর্মসূচিতে ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে আসেন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ডা. সাদিক। আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না। এখন আমরা প্রাণখুলে কথা বলতে পারি। যাদের আত্মত্যাগে আজকে মতপ্রকাশ করতে পারছি, তাঁদের স্মরণ করতে এসেছি।’ 

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) শিক্ষার্থী ইমন এসেছেন বিচারের দাবিতে। যারা জুলাইয়ে গণহত্যা চালিয়েছে, তাদের বিচার চান তিনি। 

বারিধারার জামিয়া মাদানিয়া মাদ্রাসা থেকে মার্চে যোগ দেন হাফেজ শহীদুল। আলাপকালে তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে হবে। শহীদের সম্মান দিতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত