জবির হলে ছাত্রীকে ৩ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হলে এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে তিন ঘণ্টা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনে শিকার ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের হাফসা বিনতে নূর।

আজ বৃহস্পতিবার এই ঘটনায় অভিযুক্তদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপিকা রাণী সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হাফসা বিনতে নুর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার প্রোভোস্ট ম্যামের সঙ্গে কথা হয়েছে। উনি সবাইকে শোকজ নোটিশ পাঠানোর কথা জানিয়েছেন আমাকে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পদক্ষেপের ব্যাপারে তাঁর মন্তব্য জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি এখান থেকে সম্মানের সাথে যেতে চাই। আমি চাই আমার সঙ্গে যে ঘটনা ঘটল তা যাতে আর কারো সঙ্গে না ঘটে। এজন্যই অভিযোগ করেছি। তাৎক্ষণিক শোকজ দেওয়াতে আমি খুশি।’

গতকাল বুধবার হল প্রভোস্টের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাফসা বিনতে নূরের সঙ্গে জুনিয়র রুমমেট রেবেকা খাতুনের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে রেবেকা খাতুন হলের অন্য কক্ষের মেয়েদের ডেকে নিয়ে এসে হাফসাকে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা হেনস্তার পর হাফসা বিনতে নূর অজ্ঞান হয়ে পড়েন। 

অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন— তন্বী, ইশিতা, ফাল্গুনী আক্তার, নিনজা শিকদার, ইরা ও নাজমুন নাহার স্বর্ণা। জানা যায়, তাঁরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার রুম পাশে হওয়ায় আমি এসে হাফসাকে রুম থেকে বের করে নিয়ে যেতে চেয়েছি। কিন্তু রেবেকা, নিনজা, ফাল্গুনীরা তাকে ঘেরাও দিয়ে ধরে। একপর্যায়ে সে মোবাইল নিতে গেলেও তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে মোবাইল আনতে দেয়নি। শুধু তাই নয়, এরা রাজনৈতিক ক্ষমতার কারণে ইদানীং হলে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীকে ভয়ভীতি দেখায়, হেনস্তা করে। সিনিয়রদের সাথে প্রায়ই বেয়াদবি করে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এদের কাছে জিম্মি।’

বিষয়টি নিয়ে হলের ছাত্রলীগ নেত্রী নাজমুন নাহার স্বর্ণার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জানার পর আমি ম্যামকে (আবাসিক শিক্ষক) সঙ্গে নিয়ে ওদের রুমে যাই। আমি গিয়ে ওদের শান্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু হাফসা আপুকে মারধরের বিষয় আমি কিছু জানি না। একপর্যায়ে আমি ওদের রুমে ম্যামকে রেখে নিচে চলে আসি। তারপর নাকি হাফসা আপু আমাদের ছাত্রলীগের মেয়েদের গায়ে হাত দেয়।’

ঘটনার সময় উপস্থিত হলের আবাসিক শিক্ষক মানসুরা বেগম বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনার জেরে আবেগের বশবর্তী হয়ে এ কলহের সূত্রপাত। অবস্থা বেগতিক জেনে আমি সেখানে উপস্থিত হই। আমি যাওয়ার পরও তারা আক্রমণাত্মক ছিল। হাফসাকে তারা রুমের বাইরে যেতে এমনকি ফোনটাও ধরতে দিতেছিল না। মূলত অন্য রুমের মেয়েদের নিয়ে আসার কারণেই এ ঘটনা এতদূর পর্যন্ত গড়ায়। আমি সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করার পরও তারা আমার সামনে বসেই আরও উত্তেজিত হয়ে যায়।’

অভিযোগের বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপিকা রাণী সরকার বলেন, ‘হলে বেশ কিছুদিন ধরে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই আছে। আমি এ ধরনের নানা ঘটনায় শঙ্কিত। আজ অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা আলোচনায় বসেছি। আমি ওদের যে দুইজনের সমস্যা তাদের মুখোমুখি ডেকে বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছি। বাইরে থেকে যারা রুমে এসে ঝামেলা করেছে তাদের শোকজ নোটিশ পাঠিয়েছি। আগামী চার কার্যদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলেছি। এরপর থেকে যদি কেউ এরকম কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লে সিট বাতিল করা হবে।’