Ajker Patrika

খেলার মাঠে পাকিস্তানের পতাকা ইস্যুতে উত্তপ্ত সংসদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
খেলার মাঠে পাকিস্তানের পতাকা ইস্যুতে উত্তপ্ত সংসদ

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সময়ে পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে বাংলাদেশের আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে সংসদে ক্রিকেট বোর্ডের প্রতি প্রশ্ন তুলেছিলেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা। সরকার দলের সাংসদের এমন মন্তব্যের বিষয়ের সমালোচনা করেছেন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ। তাঁর দাবি, বিদ্বেষপূর্ণ এমন আচরণ ও মনোভাব দেশের জন্য সম্মান ও গৌরবের নয়। এদিকে হারুনুর রশিদের এমন প্রতিক্রিয়ার জবাবে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, তিনি যেভাবে পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে সংসদে কথা বললেন, এতে তাঁর প্রকৃত চরিত্র বেরিয়ে এসেছে। আজ শনিবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে পাল্টাপাল্টি এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এই দুই সংসদ সদস্য। 

পয়েন্ট অব অর্ডারে হারুন বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হচ্ছে। পাকিস্তান ক্রিকেট টিম বাংলাদেশের সঙ্গে খেলছে। বাংলাদেশ যাই খেলুক না কেন, পাকিস্তানের সমর্থকেরা তাদের পতাকা ওড়াচ্ছে। এটাকে কেন্দ্র করে একটা বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হয়েছে। মনে রাখতে হবে, তারা কিন্তু আমাদের দেশে মেহমান, অতিথি। আমাদের দেশের ক্রিকেট, আমাদের দেশের ফুটবল, আমাদের দেশের মেয়েরা সারা পৃথিবীতে খেলছে। সেখানে কী বাংলাদেশের পতাকা উড়েনা? 
 
হারুন বলেন, 'সেদিন একজন সদস্য দেখলাম বিভিন্নভাবে বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা বলেছেন।' এ সময় সরকারি দলের সদস্যরা হই চই করে হারুনের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। তিনি আরও বলেন, 'পাকিস্তান টিমতো আসার দরকার ছিল না। পাকিস্তানি টিমকে কেন খেলতে দিয়েছেন? খেলতে দিতেন না। দরকারই ছিল না। আপনিতো তাঁদের অনুমতি দিয়েছেন। তাঁরা এখানে এসেছে। এটি ঠিক নয়। একটি দেশের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ ঠিক নয়। এটি আমাদের জন্য সম্মানের নয়, গৌরবের নয়।' 

১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ভাষণ থেকে উদ্ধৃত করে হারুন বলেন, 'বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ভারত বার্মার মতো অতীত থেকে মুখ ফিরিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গেও নতুন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছি। অতীতের তিক্ততা দূর করতে কোনো প্রচেষ্টা থেকে নিবৃত্ত হইনি। ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে ক্ষমা প্রদর্শন করে উপমহাদেশে শান্তি সহযোগিতার নতুন ইতিহাস রচনা করেছি। আমরা আমাদের আন্তরিকতায় প্রমাণ দিয়েছি।' দেশে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে স্বাধীনতার পরপরই তিনি যে ঐতিহাসিক ভূমিকা নিয়েছিলেন, এটি তার ঐতিহাসিক দলিল। 

এ সময় সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা হট্টগোল করতে শুরু করেন। 

হারুনুর রশিদ স্পিকারের কাছে প্রোটেকশন চেয়ে বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিয়ে কথা বললাম, এখানেও যদি বাধা দেন তাহলে আর কী বলব মাননীয় স্পিকার। আমি এমন কিছু বলিনি, আমি ওনার ভাষণ পড়ে শুনিয়েছি।' 

তিনি যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিএনপির সাবেক সাংসদ আব্দুল মোমিন তালুকদারের প্রসঙ্গ টানেন। কোরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে হারুন বলেন, 'সাক্ষী আলামত ছাড়া কাউকে হত্যা করা একেবারে গুনার কাজ। অষ্টম ও একাদশ সংসদের সদস্য আব্দুল মোমিন তালুকদার, তার বয়স তখন (১৯৭১ সালে) ১৮ বছর ছিল। উনি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ২০১১ সালে জাতি সংঘের কনভেনশনে গিয়েছেন।' 

এ সময় স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী তাঁর বক্তব্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, 'মাননীয় সদস্য আপনি এখানে কোনো বিচারের বিষয়ে কথা বলতে পারেন না। বিচার হয়েছে. . আপনি বসুন।' এরপর তার মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। 

পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে হারুনের বক্তব্যের জবাব দেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ যেভাবে পাকিস্তানের পক্ষে অবলম্বন করে সংসদে কথা বললেন, এতে তাঁর প্রকৃত চরিত্র বেরিয়ে এসেছে। তাঁরা যে রাজাকার, আলবদর, আল শামসের পক্ষে কথা বলছে ও রাজনীতি করছে তাঁর প্রমাণ পাওয়া যায়। তাঁরা যে দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেন না, সেটা প্রমাণিত হয়েছে।' 

খালিদ মাহমুদ বলেন, 'জাতির পিতাকে হত্যার পরে জিয়াউর রহমান হত্যাকারীদের শুধু লালনপালনই করেনি, পাকিস্তানি ধারা বাংলাদেশে প্রবর্তন করার জন্য সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চরিত্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। একই ধারাই তাঁরা এখনো রাজনীতি করে যাচ্ছে। তার প্রমাণ আজকে হারুনুর রশিদ সংসদে উপস্থাপন করলেন।' 

নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ বলেন, 'পাকিস্তান অপরাধ করেছে। বঙ্গবন্ধু যেহেতু শান্তিকামী মানুষের নেতা ছিলেন। তাঁর সেই অহিংস ও শান্তিকে বিকৃত করে সংসদে উপস্থাপন করার চেষ্টা হচ্ছে।' 

খালিদ মাহমুদ বলেন, 'তাঁরা মনে করেছিল যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হবে না। এই বিচার হওয়া তাদের সেই মনঃকষ্ট ফুটে উঠছে। তাঁর বক্তব্যে বেরিয়ে এসেছে।' তিনি আরও বলেন, 'পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে। তাঁদের সঙ্গে অনেক অমীমাংসিত বিষয়ের সুরাহা হয়নি। তার মানে এই নয় যে, সেই জায়গা থেকে বাংলাদেশ সরে গেছে।' 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত