Ajker Patrika

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে দেশের সব মানুষই মানসিকভাবে যুক্ত : আনু মুহাম্মদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে দেশের সব মানুষই মানসিকভাবে যুক্ত : আনু মুহাম্মদ

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুধু তাদের একার আন্দোলন নয়, দেশের প্রতিটি মানুষ এর সঙ্গে মানসিকভাবে যুক্ত। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে যারা বাধা দেয়, যারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়, সাধারণ জনগণ তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়। কারণ, শিক্ষার্থীরা যেসব দাবিতে আন্দোলন করছে, তার প্রতিটিই যৌক্তিক এবং ন্যায্য দাবি। হাফ পাস এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, শ্রমিকদের সমাবেশে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। আজ শনিবার রাজধানীর রামপুরা ব্রিজে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, পরিবহন শ্রমিক এবং অভিভাবকেরা যোগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানান। 

সমাবেশে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সড়ক পরিবহনমন্ত্রী প্রতিদিন কথা বলেন, কিন্তু সড়ক ব্যবস্থাপনা নিয়ে কিছু বলেন না। সরকার হাজার, লক্ষ, কোটি টাকা দিয়ে দিচ্ছে একটা গোষ্ঠীকে। বাসমালিকেরা যা বলে সরকার তা-ই শোনে। বাসমালিকেরা কোনো দাবি করলে পূরণ করতে একমুহূর্তও সময় লাগে না। গার্মেন্টস মালিকেরা কোনো দাবি করলে তা পূরণে একমুহূর্তও সময় লাগে না। অথচ জনগণ যখন ন্যায্য দাবি করে, তখন মাস যায়, বছর যায়, সেই দাবি পূরণ হয় না।’ 

আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যেকোনো আন্দোলনেই একটা বিরতি আনতে হয় এবং সময় দিতে হয়। এ জন্য সরকারকে একটা নির্দিষ্ট সময় দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়া উচিত। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের দাবি পূরণ না হলে আবারও তাদের রাজপথে নামতে হবে। 

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেন ঢাকা জেলা ট্যাক্সি, ট্যাক্সি কার, অটো টেম্পু, অটোরিকশাচালক, শ্রমিক ইউনিয়নের সহসাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক। তিনি বলেন, ‘অনেক জায়গাতেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন হয়, সেখানে চালক-শ্রমিকদের দোষারোপ করা হয়। কিন্তু রামপুরা-বাড্ডার শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছে সেখানে তারা চালক-শ্রমিকদের অধিকারের কথাও বলছে। এ জন্য আমরা শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি।’ 

রফিকুল ইসলাম বলেন, বিআরটিএতে লাইসেন্স করতে গেলে ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না। রামপুরা-বাড্ডায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এই সমস্যাগুলোর কথাও তুলে ধরছে। এ জন্য শ্রমজীবী, পেশাজীবী সবার শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া উচিত। 

এ সময় রফিকুল ইসলাম পরিবহন শ্রমিকদের ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে চালক-শ্রমিকদের লাইসেন্সের ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ করা, চালক শ্রমিকদের নিয়োগপত্র পরিচয়পত্র দেওয়া, কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করে দেওয়া, পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার মতো বেতন মজুরির ব্যবস্থা করা, চালকদের জীবনবিমা ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা, সন্তানদের অর্ধেক বেতনে স্কুলে পড়ার সুযোগ দেওয়া। 

সমাবেশে যোগ দেওয়া শ্রমিকেরা বলেন, ‘সড়কে এত মৃত্যুর জন্য দায়ী আমাদের সিস্টেম। রক্ত-মাংসের পরিবহন শ্রমিক চালকদের কোনো ইনস্যুরেন্স দেওয়া হয় না। অথচ গাড়ির ইনস্যুরেন্স হয়। দিন-রাত কাজ করে শ্রমিক-চালকেরা যে মজুরি পান, তা দিয়ে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকা যায় না।’ 

যাত্রীকল্যাণ সমিতির নেতা মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে নিরাপদ সড়কের অঙ্গীকার করেছিল। একে একে প্রায় সব অঙ্গীকার পূরণ করলেও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত হয়নি। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম স্বাধীনতার আগে, পরেও আমরা হাফ ভাড়ায় চলেছি। কিন্তু এখন চলতে পারি না।’ 

এ সমাবেশে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে নাজনীন আক্তার শারমিন, অভিভাবক শাকিল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশে নেতৃত্ব দেন খিলগাঁও মডেল কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া। সে বলে, প্রতিদিন দেশে ২১০ কোটি টাকা মাদকের পেছনে খরচ হয়। অথচ সড়কে নিরাপত্তা আনতে কোনো বিনিয়োগ নেই। সড়ক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের নানাভাবে ভয়ভীতি এবং প্রলোভন দেখানো হচ্ছে বলেও জানায় সে। 

সমাবেশ শেষে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বলা হয়, সরকারকে আপাতত ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হবে। এর মধ্যে সমস্ত দাবি না মানলে রাজপথে নতুন করে আন্দোলন শুরু হবে। এতে শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেবে বলেও জানানো হয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত