Ajker Patrika

ঢাবিতে শিক্ষার্থীকে মেরে রুম থেকে বের করে দিল ছাত্রলীগকর্মীরা

ঢাবি প্রতিনিধি
আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২২, ০০: ২৮
ঢাবিতে শিক্ষার্থীকে মেরে রুম থেকে বের করে দিল ছাত্রলীগকর্মীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীকে মেরে হল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে। ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে থাকা বেশ কয়েকজন সহপাঠীকেও গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া  হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। মুহসীন হলের ৫৬২ নং কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। গলা ধাক্কা ও হেনস্তা করে রুম থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মাসুদুর রহমান বরাবর একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন সাইফুল।

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা মতে, অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা হলেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের তাওহীদুল ইসলাম, মনোবিজ্ঞানের মোহাম্মদ সামিন চৌধুরী, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০১৮-১৯ সেশনের শাখাওয়াত অভি, টুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটির শেখ ইমরান ইসলাম ইমন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের মুনতাসীর হোসেন ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শরিফুল ইসলাম। এছাড়া ঘটনাস্থলে আরও প্রায় ১০-১৫ জন ছাত্রলীগ কর্মী উপস্থিত ছিলেন বলে জানান একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী।

অভিযুক্তরা ও ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা ছাত্রলীগকর্মীরা হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেনের অনুসারী। হোসেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।

সাইফুল ইসলাম তাঁর লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, ‘আজ দুপুরে আমায় হল থেকে এই রুমে সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়। তাই আমি বিকেলের দিকে রুমে আসি এবং বিছানাপত্র নিয়ে সিটে উঠি। এ সময় সঙ্গে আমার কয়েকজন বন্ধুও ছিল। সন্ধ্যার দিকে অভিযুক্তরা আমার রুমে আসে এবং আমার পরিচয় জিজ্ঞেস করে। কিছু সময় পর হলের ছাত্রলীগের তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের কিছু কর্মী এসে আমায় বলে, “হলের সিট কি প্রশাসন দেয়? হলে কীভাবে উঠতে হয় তা জানস না?” এসব বলে এবং আমিসহ আমার বন্ধুদের মারধর করে রুম থেকে বের করে দেয় এবং রুমটিতে তারা অবস্থান নেয়।’

অভিযোগে আরও বলা হয়, সাইফুলকে মেরে বের করে দেওয়ার পর সন্ধ্যায় হলের আবাসিক শিক্ষক আইনুল ইসলাম ও মোহাম্মদ ইমাউল হক সরকার (টিটু) ৫৬২ নম্বর রুমে গিয়ে দরজা খুলতে বললেও ছাত্রলীগ কর্মীরা দরজা খোলেননি। শিক্ষক পরিচয় দেওয়ার আধা ঘণ্টা পরেও দরজা না খোলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে শাখা ছাত্রলীগের এক সিনিয়র কর্মী এসে দরজায় নক করতেই দরজা খুলে দেন তাঁরা।

এ বিষয়ে হলের কক্ষ বরাদ্দ কমিটির আহ্বায়ক আইনুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষকদের দরজার বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা একটি গুরুতর অপরাধ। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিকে জানানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ওই সময় কক্ষের ভেতরে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগের ছয় কর্মী হলেন— ইংলিশ ফর স্পিকার অব আদার ল্যাংগুয়েজের আরাফাত হোসেন মাহিন, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এনামুল হক পলাশ, টুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের মারুফ, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শরীফুল ইসলাম, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিবলী সাদিক, ইসলামিক স্টাডিজের মুনতাসীর হোসেন। তাঁরা সবাই ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী।

এদিকে ঘটনার বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে ঘটনাস্থলে যাওয়া একটি জাতীয় দৈনিকের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আবু সাঈদ ইসিয়ামকেও হেনস্তা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে ইসিয়াম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের কর্মীরা এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হল থেকে বের করে দিচ্ছে শুনে তৎক্ষণাৎ আমি আমার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে ঘটনাস্থলে যাই। পরে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেনের কয়েকজন অনুসারী আমার সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ানোর চেষ্টা করে। পরে সেখান থেকে আমাকে বের হয়ে যেতে বলে, হুমকি দেয় এবং হাত ধরে টানাটানি করে। পরে তাদের বাধায় বাধ্য হয়ে সেখান থেকে আমি চলে এসেছি। এমন ঘটনায় আমি বিব্রত।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কিছু জুনিয়র আগে থেকে সেখানে থাকত, সে জায়গায় নতুনভাবে বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষার্থী দেওয়ার বিষয়টি কাম্য নয়। আমি ঘটনাটি শুনেছি। আমাদের কোনো কর্মী কারও গায়ে হাত তোলেনি। হয়তোবা কোনো ভুল বোঝাবুঝি থাকতে পারে। হল প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করে যৌক্তিক সমাধান করা হবে।’

এ বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘একটি অভিযোগ পেয়েছি। রুমটি বর্তমান হল প্রশাসন তালা মেরে দিয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৈধ শিক্ষার্থীকে তাঁর রুম ফিরিয়ে দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত