Ajker Patrika

সাংবাদিকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার: প্রেমিকা ফোন দিয়ে মাকে মৃত্যুর কথা জানান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৯ মে ২০২৩, ২০: ৪৭
সাংবাদিকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার: প্রেমিকা ফোন দিয়ে মাকে মৃত্যুর কথা জানান

রাজধানীর কলাবাগানের লেক সার্কাস রোডের একটি বাসা থেকে বেসরকারি টেলিভিশন যমুনার মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার কুদরত-ই খোদা হৃদয়ের (২৪) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। হৃদয়ের প্রেমিকার ফোনে ছেলের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন মা। 

নিহতের পরিবার ও পুলিশ বলছে, প্রেমিকা মেহজাবিন প্রত্যাশার সঙ্গে থাকা প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে হতাশায় ভুগছিলেন হৃদয়। সোমবার এই হতাশার কথা বন্ধুদের একটি গ্রুপে পোস্ট করেছিলেন। পরে সকালে তাঁর মৃত্যুর খবর পান স্বজন ও নিহত হৃদয়ের বন্ধুরা। এমনকি প্রেমের সম্পর্কের হতাশার বিষয়টি জানতেন হৃদয়ের মা। 

আজ মঙ্গলবার দুপুরে নিহত হৃদয়ের প্রেমিকা প্রত্যাশার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

জানা গেছে, নিহত হৃদয় সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার উত্তর হোসেনপুর এলাকার আরিফ আহমেদ মিঠুর ছেলে। কলাবাগানের লেক সার্কাস রোডের ৯৫ নম্বর বাড়ির ছাদের (চিলেকোঠা) একটি রুমে একাই থাকতেন। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় অনার্স শেষ করে যমুনা টিভিতে কাজ শুরু করেন তিনি।

মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে কলাবাগান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মঞ্জুরুল ইসলাম সজীব উল্লেখ করেন, ছাদের রুমটিতে শায়িত অবস্থা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। হৃদয়ের গলার বাম পাশে অর্ধচন্দ্রাকৃতির কালো দাগ আছে। তিনি ফ্যানের সঙ্গে কাপড় পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।

হৃদয়ের মামা ফেরদৌস হাসান বলেন, ‘প্রত্যাশা নামে এক মেয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল জানতাম। গতকাল সোমবার রাতে হৃদয় তাঁর মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। সে সময় প্রত্যাশাকে নিয়ে অনেক হতাশার কথা মায়ের কাছে বলে। মা তাকে বিভিন্নভাবে সান্ত্বনা দেন।’

ফেরদৌস হাসান আরও জানান, সকালে প্রত্যাশা নিজেই হৃদয়ের ফোন থেকে হৃদয়ের মাকে ফোন দিয়ে জানান, হৃদয় আর নেই। তবে বিষয়টি প্রথমে বিশ্বাস করেননি তাঁরা। পরবর্তীতে বিভিন্ন মাধ্যমে নিশ্চিত হন হৃদয় মারা গেছেন। 

মঙ্গলবার ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত প্রত্যাশা বেশ কয়েকবার হৃদয়ের বাসায় যান এবং আবার বেরিয়ে আসেন। তখন তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। সবশেষ সকাল ৯টার দিকে প্রত্যাশা হৃদয়ের মৃত্যু খবর দেন তাঁদের।

হৃদয়ের সহপাঠী নিলয় বিশ্বাস জানান, ২০১৮ সালে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে জার্নালিজম বিভাগে ভর্তি হন হৃদয়। ২০২১ সালে অনার্স শেষ করার পর মাস্টার্সে ভর্তি হন। এরপরই যমুনা টিভির মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন। মেহজাবিন প্রত্যাশা নামে এক মেয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি হৃদয়ের পরিবারও জানত। হৃদয়ের বাসায় যাতায়াত ছিল প্রত্যাশার।

নিলয় বিশ্বাস জানান, সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে হৃদয় একটি ফেসবুক গ্রুপে হতাশামূলক কিছু কথা লেখেন। তবে রাতে সেটি কেউ খেয়াল করেনি। সকালে তাঁর মৃত্যুর খবর শুনতে পান। মানসিক কোনো চাপ থেকেই হৃদয় আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা তাঁদের।

কলাবাগান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম জানান, মৃতদেহ উদ্ধারের সময় হৃদয়ের এক মেয়ে বন্ধু সেখানে ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, হৃদয় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মেয়েটিকে থানায় নেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত