শিমুলিয়া ঘাটে কনটেইনার পোর্ট করতে পাঁচ উপদেষ্টা মুন্সিগঞ্জে

মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাট পুনরুজ্জীবিত ও ভবিষ্যৎ ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ, স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করলেন অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ উপদেষ্টা। আজ রোববার বিকেলে সাড়ে ৪টার দিকে শিমুলিয়া ঘাটে বিআইডব্লিউটিএর কার্যালয়ের ড্রেজার বেইজ সম্মেলনকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় শিমুলিয়া ফেরিঘাট এলাকায় বিআইডব্লিউটিএর মালিকানাধীন ২৯ দশমিক ৩১ একর জমিতে ৭৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ইকো কনটেইনার পোর্ট নির্মাণের পরিকল্পনার কথা বলা হয়।

সভায় স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প ও গৃহায়ণ এবং গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন উপদেষ্টা মো.শেখ বশিরউদ্দীন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, নৌপরিবহন ও শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম শাখাওয়াত হোসেন।

সভা শেষে নৌপরিবহন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের বিআইডব্লিউটিএর যতটুকু জায়গা আছে, সেখানে আন্তর্জাতিক মানের ইকো কনটেইনার পোর্ট হবে। আমরা এখন পরিকল্পনা করছি। কিন্তু কবে হবে, সেটি বলা মুশকিল। তবে পোর্টের জায়গায় শুধু পোর্টই হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী শিমুলিয়া ঘাটে হবে নদী থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন জীব-বস্তু নিয়ে রিভার মিউজিয়াম, নদীর পাড়ে রাত যাপনের জন্য ইকো রিসোর্ট, অবকাশ যাপনের জন্য সুইমিংপুল, শিশুদের উপভোগ্য কিডস জোন, শিমুলিয়া ঘাটের পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে নদীতীরে একটি ফেরিঘাট পুনঃস্থাপন ইত্যাদি।’

এই উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমাকে মুন্সিগঞ্জের উন্নয়নের জন্য এখানে আনা হয়েছে। যখন এখানে একটি পোর্ট হবে, তখন মুন্সিগঞ্জের জন্য, মুন্সিগঞ্জের আশপাশের মানুষের জন্য একটি কর্মযজ্ঞ হবে। একই সঙ্গে বাইরে থেকে যেন মানুষজন আসতে পারে। আমাদের কিছু জায়গা আছে, সেগুলো আরও সুন্দর করা; যেন নদীর পাড়ে লোকজন আসতে পারে। যেন তাদের জন্য সুন্দর একটি দেখার ব্যবস্থা হয়। আমি এইটুকু বিষয়ে সম্মত হয়েছি।’

শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এ জন্য বিআইডব্লিউটিএ এবং জেলা প্রশাসক বসবেন। আর কিছু জায়গার ব্যবস্থা করা যায় কি না, তাঁরা দেখবেন। যতটুকু যা করা দরকার, পূর্ণ সহযোগিতা করা হবে।’

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা আজকে এসেছিলাম। এখানে কিছু জায়গা (শিমুলিয়া ঘাট) আছে। এখানে-সেখানে পড়া। যেন সেগুলো বেদখল হয়ে না যায়। কোনোভাবে সে জায়গাগুলোর সৌন্দর্য বাড়িয়ে মানুষকে পদ্মার কাছে যেন নিয়ে আসা যায়। বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এসে পদ্মা দেখবে। মানুষ বলে না, আপনি যখন দেখবেন, তখন ওইটার জন্য অন্য রকম মায়া হবে। সেটার কোনো সুযোগ আছে কি না, সেটাই আমরা আজকে বুঝতে এসেছিলাম।’

প্রসঙ্গত, একসময় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোটি মানুষের পদ্মা পাড়ি দেওয়ার অন্যতম প্রধান ভরসা ছিল মাওয়া-শিমুলিয়া ফেরিঘাট। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে ঘাটটি কার্যত অচলাবস্থায় রয়েছে। বর্তমানে এটি কেবল পার্কিং জোন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অপরিকল্পিত দোকানপাট, নাজুক অবকাঠামো ও পরিবেশদূষণের কারণে দর্শনার্থীরাও বিমুখ হচ্ছে।

এসব বিষয় নিয়ে ১৯ জুন শিমুলিয়া ঘাট এলাকা পরিদর্শন করেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা। তিনি বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিমুলিয়া ঘাট উন্নয়নে ঘাটকেন্দ্রিক একটি আইসিটি কনটেইনার ডিপো ও ইকোপার্ক করার বিষয়ে প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন। তবে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবেশ, পানি উন্নয়ন, পর্যটনসহ একাধিক খাতের সমন্বয় জরুরি। সেই প্রেক্ষাপটেই রোববার সেসব মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা সভা করেন।

সভায় পদ্মা সেতুতে যেকোনো কারিগরি ত্রুটি বা জরুরি অবস্থার সময় বিকল্প হিসেবে শিমুলিয়া ঘাটকে প্রস্তুত রাখতে ফেরিঘাটের একটি অংশ সচল রাখার কথা জানানো হয়। সভায় আরও বলা হয়, উন্নত দেশগুলোতে প্রধান যোগাযোগব্যবস্থা ছাড়াও সব সময় বিকল্প ব্যবস্থা সচল থাকে। শিমুলিয়া ঘাটকেও সেই দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক, মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত, পুলিশ সুপার মুহম্মদ শামসুল আলম সরকারসহ পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা।