মে মাসে ৪৫ জন সাংবাদিক আক্রমণের শিকার, হয়রানি ও  হত্যার হুমকি পেয়েছেন: এমএসএফ

মে মাসে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র ছিল অত্যন্ত উদ্বেগজনক। স্বাধীন সাংবাদিকতা ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় অন্তত ৪৫ জন সাংবাদিক নানাভাবে হুমকি, নিপীড়ন, হয়রানি, নির্যাতন শিকার হয়েছেন—যা মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব করার শামিল।। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা পর্যালোচনা করে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) তাদের মাসিক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

আজ বুধবার গণমাধ্যমে সংস্থাটির সভাপতি সুলতানা কামালের পক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মে মাসে ২ জন সাংবাদিকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ৩৪ জন সাংবাদিক হয়রানি, ৩ জনকে হত্যার হুমকি ও ৮ জন সাংবাদিক স্বার্থান্বেষী মহলের দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়েছেন। হয়রানির শিকার ৩৪ জনের মধ্যে ৩০ জন সাংবাদিককে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের সঙ্গে সদর উপজেলার জনপ্রতিনিধিদের মতবিনিময় সভায় তাদের অবরুদ্ধ করা হয়।

এমএসএফ মনে করে, যেভাবে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করছে তা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিত নয় বরং এভাবে বাঁধার সৃষ্টি করে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার ও বাক্‌স্বাধীনতাকে সংকুচিত করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মে মাসে বন্দুকযুদ্ধের একটি ঘটনা ঘটেছে। কথিত গোলাগুলির ঘটনায় একজন নিহত ও অপর দুজনকে আটক করা হয়েছে।

এমএসএফ মনে করে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই আইনসিদ্ধ নয় যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপতৎপরতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। 
মে মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার ৩টি ঘটনায় ৫ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন।

মানবাধিকার সংগঠনটি বলছে, মে মাসে কারা হেফাজতে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। কারা হেফাজতে মৃতদের মধ্যে চারজন কয়েদি ও চারজন হাজতি। যাদের মধ্যে ২ জন নারী রয়েছেন। 
মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এসব ঘটনা রোধে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তারা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন, নির্বাচনী সহিংসতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক বল প্রয়োগ, শান্তিপূর্ণ সভা, মিছিলে বাধাদান অব্যাহত ছিল। সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী এ মাসে রাজনৈতিক, নির্বাচনী সহিংসতা ও সভা সমাবেশে বাঁধার ৩৫টি ঘটনায় সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। যার মধ্যে নির্বাচনী, রাজনৈতিক সহিংসতা ও সভা সমাবেশে বাধার ঘটনায় মোট ৫৪৪ জন আহত ও ৫ জন নিহত হয়েছেন।

মে মাসে মাসে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে হত্যার শিকার হয়েছেন দুজন, একজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার, একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। বিএসএফ বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে এক কিশোরকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতনে করে ফেরত দিয়ে দুঃখ প্রকাশ ও পিটিয়ে হত্যার নয় মাস পর মরদেহ ফেরত দেওয়া যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে একটি নির্যাতন ও একটি অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া হেফাজতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এমএসএফ মনে করে প্রতিটি হেফাজতে মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া আবশ্যক।

দেশে ধর্ষণ, হত্যা ও পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা বিগত মাসগুলোর তুলনায় বেড়েছে জানিয়ে এটিকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলছে এমএসএফ। গত মাসে ৪৫৭টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ৯৩টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৪টি, ধর্ষণ ও হত্যা ৪টি। এর মধ্যে ১৪ জন প্রতিবন্ধী নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ মাসে বিভিন্ন পর্যায়ে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ৭টি ঘটনা ঘটেছে। 

উদ্বেগজনকভাবে গণপিটুনিতে হতাহতের ঘটনা ঘটে চলেছে। এমএসএফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ মাসে অন্তত ১৩টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, যেখানে একজন কিশোরসহ ৬ জন নিহত ও একজন শিশুসহ ৮ জন গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। 

মে মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮টি মামলায় ২৮ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে একজন শিশু, ৭ জন নারী ও ১৮ জন পুরুষসহ মোট ২৬ জনের অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ ছাড়া ৬ জন মৃত ও ৪ জন জীবিতসহ মোট ১০ জন নবজাতক শিশুকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে যা অমানবিক ও নিন্দনীয়।