Ajker Patrika

চলতি বছরে হত্যা, অপহরণসহ হয়রানির শিকার ৪১৩ সাংবাদিক

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
চলতি বছরে হত্যা, অপহরণসহ হয়রানির শিকার ৪১৩ সাংবাদিক

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের দায়মুক্তি অবসানের আন্তর্জাতিক দিবস-মেজ উপলক্ষে আর্টিকেল নাইনটিন সোমবার ‘সাগর-রুনি হত্যা মামলা: তদন্ত ও বিচার’ শীর্ষক একটি অনলাইন আলোচনা সভা আয়োজন করে। সাংবাদিক, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন। 

আর্টিকেল নাইনটিন বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সলের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান এবং একাত্তর টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নাদিয়া শারমীন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা পরিস্থিতির এবং সাংবাদিক নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরা হয়। 

আর্টিকেল নাইনটিন ২০২০ সালে বাংলাদেশে হামলা-মামলা, হয়রানিসহ মত প্রকাশজনিত অধিকার লঙ্ঘনের ৬৩১টি ঘটনা রেকর্ড করে। অধিকার লঙ্ঘনের ৭৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ বা ৪৫৪টি ঘটনাই আইনি হয়রানির। এ সময়ে মত প্রকাশজনিত কারণে শারীরিক হামলার ১০৩টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়। রাজধানী ঢাকার বাইরে মফস্বল ও গ্রাম এলাকায় মত প্রকাশজনিত অধিকার লঙ্ঘনের প্রবণতা বেশি, যা মোট ঘটনার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। জাতীয় পর্যায়ে এই হার ২২ দশমিক ২২ শতাংশ। 

এদিকে, ২০২১ সালের প্রথম নয় মাসে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর একজন সাংবাদিক হত্যার শিকার হন ও অপহৃত হন দুজন সাংবাদিক। এই সময়ে শারীরিক আঘাত ও লাঞ্ছনার ১৩৭টি ঘটনায় ভুক্তভোগী ২৪১ জন সাংবাদিক। ৫৫টি মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৫৩ সাংবাদিককে, যাদের মধ্যে ১৬ জনকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলাগুলোর মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫ মামলায় আসামি ৪৮ সাংবাদিক, সংবাদ প্রকাশের জের ধরে বিভিন্ন হয়রানিমূলক ২৪ মামলার আসামি আরও ৮৯ সাংবাদিক। এ ছাড়াও ১৬ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মানহানির ৬টি মামলা রেকর্ড করেছে আর্টিকেল নাইনটিন। 
 
অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, ‘সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রধানত রাষ্ট্রের। কথা বলার বা লেখার নিরাপত্তা থাকলে নিগৃহীত হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যায়। সংবিধানে সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার এই নিশ্চয়তাও দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি এই নিরাপত্তা পাননি। এখন তাদের হত্যাকাণ্ডের বিচারের ক্ষেত্রেও রাষ্ট্র ব্যর্থ হচ্ছে।’ 

 ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাছরাঙার বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার এবং তার স্ত্রী এটিএন বাংলা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনিকে ঢাকার রাজাবাজার এলাকায় তাঁদের অ্যাপার্টমেন্টে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ২৫ অক্টোবর ২০২১ পর্যন্ত কর্মকর্তারা এই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৮২ বার সময় নিয়েছেন। সবশেষ হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ র‍্যাবকে এই হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন চলতি বছরের ২৪ নভেম্বরের মধ্যে জমা দিতে বলেছে। 

 ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল রাজধানীতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সমাবেশে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে আক্রমণের শিকার হন সাংবাদিক নাদিয়া শারমীন। বর্তমানে একাত্তর টেলিভিশনের এই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমার ওপর হওয়া হামলার ঘটনারও কোন বিচার হয়নি। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। তবে ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বরের পর আমার সঙ্গে এ বিষয়ে কেউ কোন যোগাযোগ করেনি। সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনার বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেবল পেশাগত কারণে হত্যা, হামলা এবং মামলার শিকার হন সাংবাদিকরাই। তাই সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে অন্যান্য অপরাধের পার্থক্য রয়েছে।’ 

সভাপতির বক্তব্যে ফারুখ ফয়সল বলেন, ‘সাগর-রুনি যখন হত্যার শিকার হন, পাশের কক্ষে অবস্থান করার তাদের একমাত্র ছেলে মেঘের বয়স তখন ৫ বছর। মেঘের বয়স এখন ১৪। কিন্তু তদন্তকারীরা এখন পর্যন্ত মামলায় বলার মতো কোন অগ্রগতি দেখাতে পারেননি। খুন হওয়া সাংবাদিক দম্পতির পরিবার ও সহকর্মীদের মধ্যে এখন বিচার পাবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।’ তিনি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এই হত্যা মামলার তদন্ত ও বিচার নিশ্চিতের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত