Ajker Patrika

ছাত্র আন্দোলন: নিহত ছেলেকে খুঁজতে গিয়ে চলে গেছে বাবার চাকরিও

চাঁদপুর প্রতিনিধি
ছাত্র আন্দোলন: নিহত ছেলেকে খুঁজতে গিয়ে চলে গেছে বাবার চাকরিও

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় পুলিশের গুলিতে আহত হন মো. পারভেজ বেপারী (২৩)। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন তাঁর মৃত্যু হয়। কিন্তু পরিবারের খোঁজ না পেয়ে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়।

পারভেজ চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়নের বারহাতিয়া গ্রামের বেপারীবাড়ির মো. সবুজ বেপারীর ছেলে। রাজধানীর বাড্ডা-পূর্বাচল রোডে এ+এন ফার্নিচারের দোকানে কাজ করতেন পারভেজ।

স্বজনেরা জানান, পারভেজের বাবা সবুজ ঢাকা-চাঁদপুর রুটে চলাচলকারী এমভি সোনারতরী-১ লঞ্চের ক্যানটিনে কাজ করতেন। সংসারে অভাব-অনটনের কারণে পারভেজ তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে ঢাকায় চলে যান। সেখানে কাজ করতেন আসবাবের দোকানে। বাবা-ছেলের রোজগারে মোটামুটি চলে যেত তাঁদের দিন।

পারভেজের মা শামছুন্নাহার বলেন, ‘ছেলে ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হলেও আমরা জানতে পারি ২১ জুলাই। তার সঙ্গে যাঁরা কাজ করতেন, তাঁরাই আমাদের ফোন করে জানান। তাঁরা বলেন, ১৯ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দোকান থেকে উত্তর বাড্ডা ছাত্র-জনতার মিছিলে যায় পারভেজ। সেখানেই গুলিবিদ্ধ হয়। পরে লোকজন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে আমার স্বামী লোকজন নিয়ে তাকে খুঁজতে যায়। কিন্তু প্রথমে খুঁজে না পেলেও সবশেষ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে থাকা লাশের ছবি দেখে খোঁজ পায়।’

শামছুন্নাহার আরও বলেন, ‘ছেলের সঙ্গে যারা কাজ করত, তারা জানিয়েছে তার (পারভেজ) নাকে ও কপালে গুলি লেগেছিল। ছেলেকে একবার ছুঁয়ে দেখতেও পারিনি। জন্মস্থানের মাটিও জোটেনি আমার ছেলের। পরিবারের পরিচয় জানতে না পেরে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন হয়। এদিকে, ছেলেকে হারিয়ে আমাদের সংসারের আয়-রোজগার বন্ধ। কারণ, ছেলেকে খুঁজতে গিয়ে স্বামীর চাকরি চলে গেছে।’

পারভেজের বাবা সবুজ বেপারী বলেন, ‘খবর পেয়ে ঢাকায় চলে যাই এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সঙ্গে কথা হয় মর্গে থাকা লোকজন সম্পর্কে। সেখানে সে আমাকে দুজনের ছবি দেখায়। প্রথম ছবিই আমার ছেলের। পরে মর্গের লোকজন জানায়, আমার ছেলের লাশ আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে হস্তান্তর করা হয়েছে। একই সঙ্গে অজ্ঞাতনামা ৮ জনের মরদেহ ছিল। পরে কোথায় দাফন করা হয়েছে, তা জানার জন্য আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাকরাইল ও মুগদা অফিসে যাই। তারা সঠিকভাবে বলতে পারেনি কোথায় দাফন হয়েছে।’

সবুজ বেপারী আরও বলেন, ‘৮ আগস্ট ছেলের মরদেহ খুঁজে না পেয়ে মর্গে থাকা ছবি শনাক্ত করে বাড়িতে চলে আসি। এর পরদিন বিকেলে গায়েবানা জানাজা হয়। স্থানীয় রাজনৈতিক দলের লোকজন আমাদের বাড়িতে এসে খোঁজখবর নিয়েছেন। আর সরকারিভাবে ইউএনও লোকজন মারফত ১০ হাজার টাকা এবং কিছু ফল পাঠিয়েছেন।’ 

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত