Ajker Patrika

বেতন কম তবু শিক্ষকতা ছাড়েননি তাঁরা 

এস এম আক্কাছ উদ্দিন, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম)
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫: ২১
বেতন কম তবু শিক্ষকতা ছাড়েননি তাঁরা 

আমার বেতন সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। এ টাকায় সংসার চলে না। অথচ আমরা অনেক আগে এমপিওভুক্তির প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা অর্জন করেছি। উপজেলার মধ্যেও এ স্কুল জ্যেষ্ঠতায়  এগিয়ে, কিন্তু এ পর্যন্ত কয়েকবার আবেদন করেও লাভ হয়নি। আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ভুজপুর পাবলিক হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান। 

জানা গেছে, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ভুজপুর গ্রামের বাসিন্দাদের উদ্যোগে ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ভুজপুর পাবলিক হাইস্কুল। ২০০৪ সাল থেকে ৭৯ জন শিক্ষার্থী নিয়ে পথচলা শুরু করলেও এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০০। ৯ জন শিক্ষকের সবারই শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক, যাঁদের অনেকেরই আছে বিএড ডিগ্রি। ১ জানুয়ারি ২০১৭ সালে স্কুলটি পাঠদানের স্বীকৃতি এবং ২০২০ সালে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়। তবে এমপিওভুক্ত না হওয়ায় সামান্য বেতনে চাকরি করতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষকেরা।

কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হতে হলে পাঠদানে বোর্ডের স্বীকৃতি, একাডেমিক স্বীকৃতি, শিক্ষকদের ন্যূনতম যোগ্যতা স্নাতক ও বিএড, নিজস্ব অবকাঠামো, পর্যাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা, সঞ্চয় এসব থাকতে হবে। ভুজপুর পাবলিক হাইস্কুল এসব শর্ত পূরণ করে শিক্ষা বোর্ডের স্বীকৃতিও পেয়েছে। কিন্তু বারবার আবেদন করার পর এমপিওভুক্ত করা হয়নি স্কুলটিকে।

এলাকার আশপাশের ছয় কিলোমিটারের মধ্যে কোনো স্কুল নেই। দরিদ্র পরিবারের শিশুরাই এই স্কুলের শিক্ষার্থী। শিক্ষকদের অক্লান্ত চেষ্টায় ভালো ফলাফল করছে এখানকার শিক্ষার্থীরা। গত তিন বছর ধরে এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ছিল গড়ে ৯০ শতাংশ। অথচ এর পরও এমপিওভুক্ত হয়নি স্কুলটি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাসে সাড়ে পাঁচ হাজার ও সহকারীরা ৩ হাজার ৫০০ টাকা বেতন পান। এই টাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেলেও শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে স্কুল ছেড়ে যাননি তাঁরা। স্কুলটিকে সন্তানের মতো  আগলে রেখেছেন ভবিষ্যতের আশায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, দ্বিতল পাকা একটি ভবনে পাঠদান চালানো হয়। এখানে মানবিক, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগে পড়ছে ৪০০ শিক্ষার্থী। ৯ জন শিক্ষক ও একজন কর্মচারী রয়েছেন স্কুলে। ২০২০ সাল থেকে নবম-দশম শ্রেণির পাঠদানের অনুমতি লাভ করে শিক্ষা বোর্ডের স্বীকৃতি পায় স্কুলটি।

স্কুলের সহকারী শিক্ষক সাধন চন্দ্র নাথ ও রত্না রানী দেবী বলেন, ‘আমরা প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে এই স্কুলে শিক্ষকতা করছি। যে বেতন পাই তা দিয়ে পরিবার চলে না। আমরা কবে এমপিওভুক্ত হব তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কেবল শিক্ষার্থীদের মুখের দিকে তাকিয়ে স্কুলটি নিজের সন্তান মনে করে পাঠদান করছি।’

আমরা ইতিপূর্বে স্থানীয় সাংসদের সঙ্গে দেখা করেছি। তবে শুধু আশ্বাস পেয়েছি। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে চাকরিও ছেড়ে দিতে পারছি না। স্কুলটির আশপাশে ছয় কিলোমিটারের মধ্যে আর কোনো স্কুল নেই। মায়া ছাড়তে পারি না। এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একমাত্র ভরসা স্কুলটি।

স্কুল পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মাওলানা নিজাম উদ্দিন বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির যুগে একজন শিক্ষক কীভাবে সাড়ে তিন থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায় সংসার চালাবেন? এলাকার বিভিন্ন গ্রামের কয়েক শ পরিবারের সন্তান মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য স্কুলটির ওপর নির্ভর করে। এটি এমপিওভুক্ত হলে শিক্ষার মান আরও বাড়বে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ডক্টর মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘স্কুলটি বরাবরই ভালো ফলাফলের দিক দিয়ে এগিয়ে। কিন্তু এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষকদের মানবেতর জীবন মনে কষ্ট দেয়। সরকার এমপিওভুক্তি বন্ধ রেখেছেন। চালু হলে দ্রুত এমপিওর জন্য করণীয় সবকিছু করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত