Ajker Patrika

সময় বাড়ে, কাজ শেষ হয় না

মিনহাজ তুহিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২১, ১০: ২১
সময় বাড়ে, কাজ শেষ হয় না

২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে দেখা যায়, নির্ধারিত সময়ের কয়েক গুণ বেশি সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত একটি প্রকল্পের কাজও শতভাগ সম্পন্ন হয়নি। বারবার সময় নিয়েও কাজ শেষ না করায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে সময় বাড়িয়ে চলেছে। এসব প্রকল্পের কাজ কখন শেষ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও।

২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর ১৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণকাজ শুরু হয়। কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক-এর আর এম ইঞ্জিনিয়ার। সাড়ে ২৩ মাসে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু ৫৬ মাসেও সম্পন্ন হয়নি। ইতিমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ছয়বার সময় বাড়িয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

২০১৭ সালের ২০ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণকাজের টেন্ডার পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ঢালী কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। ২২ কোটি টাকার এ কাজ ২২ মাসে শেষ করতে বলা হয়, কিন্তু ৪৮ মাসে অগ্রগতি মাত্র ৬৫ শতাংশ। কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে তিনবার।

২০১৭ সালের ২৩ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট ও হাউস টিউটর কোয়ার্টারের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এ কাজ ১১ মাসে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু কয়েকবার মেয়াদ বাড়ানোর পর ৪৮ মাসেও তা শেষ হয়নি।

২০১৮ সালের ১৩ মে শুরু হয় অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হলের দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণকাজ। শেষ করার কথা সাড়ে ৬ মাসে, অথচ ৩৯ মাসেও শেষ হয়নি। সময় বাড়ানো হয়েছে পাঁচবার।

ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজের একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ ১৪ মাসে শেষ হওয়ার কথা কিন্তু তা ৩৯ মাসেও হয়নি। 

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ৬ মাসে। পার হয়েছে ৩৯ মাস। সময় বাড়ানো হয়েছে চারবার।

২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজের সামনে গার্ডার ব্রিজ নির্মাণকাজ শুরু হয়। ৯ মাসের এ কাজে পার হয়েছে ৩৩ মাস। 

একইভাবে প্রকৌশল দপ্তরের ভবন নির্মাণে ১০ মাসের জায়গায় পার হয়েছে ৩৫ মাস, জীববিজ্ঞান অনুষদের চতুর্থ পর্যায়ের নির্মাণকাজে ১৪ মাসের জায়গায় পার হয়েছে ৩৯ মাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারদিকে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণে ১ বছর লাগার কথা, পার হয়েছে ছয় বছর। দ্বিতীয় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের নির্মাণকাজ ২২ মাসের জায়গায় পার হয়েছে ৫৬ মাস।

হিসাব করে দেখা গেছে, ১১ প্রকল্পে ২০০ কোটি টাকার কাজ আটকে আছে।

জননেত্রী শেখ হাসিনা হল ও অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হলের নির্মাণকাজের ঠিকাদারি করছেন মেসার্স মঞ্জুরুল আলম চৌধুরীর স্বত্বাধিকারী মঞ্জুরুল আলম। তিনি বলেন, ‘লকডাউনে ঠিকভাবে কাজ করা যাচ্ছে না। আমাদের দুটি কাজই প্রায় শেষের দিকে।’

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ও প্রকৌশল দপ্তরের ভবন নির্মাণকাজের তদারকি করছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘জায়গা বুঝিয়ে দিতে দেরি হওয়ায় কাজ ঠিক সময়ে শেষ করা যায়নি। আমরা ৬ মাসের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ছৈয়দ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি যে প্রকল্পগুলো দেখাশোনা করি, সেগুলোর কত শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, তা এ মুহূর্তে বলতে পারব না। আনুমানিক সবগুলোরই ৬০ শতাংশের বেশি কাজ হয়েছে।’

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বারবার কেন সময় বৃদ্ধি করা হচ্ছে—জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বলেন, ‘আগে যা হওয়ার হয়ে গেছে। আপনি যে প্রশ্নটা করেছেন তা আমি নিজেকেও করছি। সামনে যেন প্রশ্নের উত্তর আর না দিতে হয়, সে ব্যবস্থা করছি। প্রকল্পের মেয়াদ যেন আর বাড়াতে না হয় সে ব্যবস্থা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত