Ajker Patrika

নদী দখল করে অবৈধ জেটি বিদ্যুৎকেন্দ্র হুমকির মুখে

  • আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিট বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা।
  • কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসক, বিআইডব্লিউটিএ ও আশুগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিয়েছে।
  • ১৫ দিনেও জেটি অপসারণে ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
মেঘনা নদীর তীর ভরাট করে বাণিজ্যিকভাবে জেটি নির্মাণ করেছেন ইজারাদার উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান সিরাজ। এই জেটি থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক ভারী পণ্য নিয়ে যাতায়াত করছে। এতে পাশের আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট বন্ধ হওয়ার আশঙ্কাসহ নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে।	ছবি: আজকের পত্রিকা
মেঘনা নদীর তীর ভরাট করে বাণিজ্যিকভাবে জেটি নির্মাণ করেছেন ইজারাদার উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান সিরাজ। এই জেটি থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক ভারী পণ্য নিয়ে যাতায়াত করছে। এতে পাশের আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট বন্ধ হওয়ার আশঙ্কাসহ নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে শর্ত অমান্য করে মেঘনা নদীর তীর ভরাট করে বাণিজ্যিকভাবে জেটি নির্মাণ করেছেন ইজারাদার উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান সিরাজ। এই জেটি থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক ভারী পণ্য নিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিটের পাশ দিয়ে যাতায়াত করছে। এতে আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের (এপিএসসিএল) ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিট বন্ধ হওয়ার আশঙ্কাসহ নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।

আর বালু দিয়ে নদী ভরাট করায় পানিপ্রবাহে গতি পরিবর্তন হয়ে দুই পাড়েই ভাঙন দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসক, বিআইডব্লিউটিএর স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও আশুগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। কিন্তু গত ১৫ দিনেও এই জেটি অপসারণে স্থানীয় প্রশাসনের তেমন তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি।

সম্প্রতি সরেজমিনে ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী শাহজাহান সিরাজের নেতৃত্বে ৩০-৪০ জনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানির পাশে মেঘনা নদীর তীর বালু দিয়ে ভরাট করে জেটি নির্মাণ করেছে। এই জেটি দিয়ে এক মাস ধরে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন জাহাজ ও নৌকা থেকে মালপত্র পরিবহন করা হচ্ছে। বিষয়টি বিআইডব্লিউটিএর স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নজরে এলেও রহস্যজনক কারণে তাঁরা নীরব রয়েছেন।

গত ১৮ নভেম্বর জেলা মাসিক উন্নয়ন ও সমন্বয় সভায় নদী দখল করে জেটি নির্মাণের বিষয়টি আলোচনায় উঠে এলে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বিআইডব্লিউটিএসহ স্থানীয় প্রশাসন তৎপর হয়। ১ ডিসেম্বর আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানান। ওই চিঠিতে বলা হয়, স্থানীয় কিছুসংখ্যক প্রভাবশালী লোক মেঘনা নদীর বেশ কিছু অংশ ভরাট করে জেটি নির্মাণ করেছেন।

জেটি থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশে বালু দিয়ে নির্মিত সড়কের নিচে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টের কুলিং ওয়াটার পাইপ, ফায়ার সার্ভিস ওয়াটার পাইপ, ড্রিঙ্কিং ওয়াটার পাইপ এবং ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টের (সিসিপিপি) ওয়াটার আউটফল পাইপলাইন রয়েছে।

বালুর রাস্তার ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করায় রাস্তার নিচে থাকা সব পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাইপলাইনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে এ দুটি ইউনিট দীর্ঘ মেয়াদে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে প্রায় ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হৃাস পেয়ে সারা দেশে ব্যাপক লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের এই চিঠির আলোকে বিআইডব্লিউটিএর আশুগঞ্জ-ভৈরব নদ বন্দর দপ্তরের উপপরিচালক মো. মহিউদ্দীন খান ৩ ডিসেম্বর জেটি দিয়ে পণ্য ওঠানামা বন্ধ, ক্রেন অপসারণসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আশুগঞ্জ থানায় অভিযোগ দেন। সেই সঙ্গে তিন দিনের মধ্যে ওই জেটিতে নৌযান ভেড়ানোসহ মালপত্র ওঠানামা বন্ধ করতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী মো. শাহজাহানকে চিঠি দেন তিনি।

আশুগঞ্জ থানায় বিআইডব্লিউটিএর করা অভিযোগে বলা হয়, আশুগঞ্জ-ভৈরব নদ বন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন চ্যানেল-১ সোনারামপুর এলাকায় শুল্ক আদায়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ইজারা পান উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী মো. শাহজাহান সিরাজ। গত ৩০ জুন বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তি অনুযায়ী, সব আদেশ, নির্দেশ ও শর্তাদি মেনে চলাসহ ইজারা প্রদত্ত ঘাটের সীমানায় তীরভূমির কোনোরূপ পরিবর্তন কিংবা নতুন কোনো পয়েন্ট তৈরি এবং ঘাটসীমানার মধ্যে স্থায়ী বা অস্থায়ী কোনো অবকাঠামো তৈরির কোনো সুযোগ নেই।

এ ব্যাপারে ইজারাদার বিএনপির নেতা মো. শাহজাহান সিরাজ বলেন, ‘বন্দর কর্তৃপক্ষ ঘাটটি আমার নামে ইজারা দিয়েছে। জনগণের স্বার্থে জায়গাটি আমরা সংস্কার করেছি। নীতিমালাবহির্ভূত কিছু করিনি।’

বিআইডব্লিউটিএর আশুগঞ্জ-ভৈরব বাজার নদ বন্দরের উপপরিচালক মো. মহিউদ্দিন খান বলেন, জায়গাটি ইজারা দেওয়া হয়নি। কেপিআই প্রতিষ্ঠানের পাশে এ ধরনের স্থাপনা হতে পারে না। ঘাট ও জেটি অপসারণের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। এটি ইজারা চুক্তির শর্তাদির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। জায়গাটি মালপত্র ওঠানামা করার জন্য বিআইডব্লিউটিএর অনুমোদিত স্থান নয়।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, বিআইডব্লিউটিএর আশুগঞ্জ-ভৈরব বাজার নদ বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হয়েছে। তারা বলেছে জায়গাটি ইজারা দেওয়া হয়নি। জেটিটি দ্রুত অপসারণের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত