Ajker Patrika

নৈতিক স্কুলের হাল কী হবে?

প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
নৈতিক স্কুলের হাল কী হবে?

কিশোরী কোহিনুর। ঝাউতলা রেল লাইনের পাশের বস্তিতে থাকে। ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনোমতে সংসার চালান। তিন বেলা খাবার জুটত না কোহিনুরের। সারা দিন কাটত বস্তির অন্য ছেলে–মেয়েদের সঙ্গে ঝগড়া করে। কিন্তু নৈতিক স্কুল নামের এক ভিন্নধর্মী স্কুলের সংস্পর্শে এসে তার জীবনের মোড় ঘুরে যায়। এখানে সে চার বছর ধরে পড়াশোনা করে বাজাতে পারে গিটার, সুর তুলতে পারে বাঁশিতে।  

কোহিনূর আজকের পত্রিকাকে বলে, ‘নৈতিক স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর আমি পড়াশোনার পাশাপাশি গান, নাচ, বাঁশি, গিটার, ছবি আঁকাসহ অনেক কিছুই শিখেছি। দাদা ভাই (গাজী সালেহ উদ্দিন) টাকা দিত, আর ভাইয়ারা আমাদের শিখাইছে। কীভাবে বড়দের সম্মান করব, ছোটদের আদর করব, এগুলোও এখানে শিখেছি।’

শুধু কোহিনূরই নয়, ব্যতিক্রমধর্মী এই নৈতিক স্কুলে এসে শত শত সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোর আলোর দিশা পেয়েছে। যারা সবাই বস্তির বাসিন্দা। তাদের কারও মা নেই, কারও বাবা নেই। কারও মা-বাবা কেউই নেই। এদের অনেকে মারপিট, গালাগাল, চুরি, নেশাসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজ জড়িয়ে পড়েছিল। এই স্কুলে এসে তারা শিখছে নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধও।

মূলধারার বাইরে থাকা এসব শিশু-কিশোরদের জন্য ২০১৬ সালে নগরীর খুলশী থানার ঝাউতলা রেল লাইনের পাশে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন সদ্যপ্রয়াত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. গাজী সালেহ উদ্দিন। তাঁর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা দিয়েই এত দিন চলে আসছে এই স্কুলের সব কার্যক্রম। শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়ে তিনি দিনের একটা সময় এই শিশু-কিশোরদের সঙ্গে কাটাতেন।

নৈতিক স্কুলের বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৮০ জন। এখানে শিক্ষক রয়েছেন ১০ জন। তাঁরা সপ্তাহে ছয় দিন বিকেল তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত কোনো বেতন ছাড়াই স্কুলে পাঠদান করেন। নৈতিক স্কুলের পড়া শেষ করে অনেকেই পাশের ইউসেপ স্কুলে পড়ছে। তাদের অধিকাংশেরই পড়ালেখার খরচ বহন করতেন গাজী সালেহ উদ্দিন।

গাজী সালেহ উদ্দিনের ছেলে তানভীর সালেহীন গাজী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই স্কুল আমার বাবার স্বপ্ন। আমাদের আবেগ, অনুভূতির জায়গা। এটাকে এগিয়ে নিতে যা যা করার আমরা সবই করব।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত